লগইন করুন
৪. ৩. নতুন নিয়মের অন্যান্য কিছু ভুলভ্রান্তি
এতক্ষণ আমরা নতুন নিয়মের চার ইঞ্জিলের ভুলভ্রান্তি আলোচনা করেছি। তথ্য বিচারের জন্য আমরা মাঝে মাঝে অন্যান্য পুস্তকের উদ্ধৃতি প্রদান করেছি। এখন আমরা নতুন নিয়মের অন্যান্য পুস্তকের কিছু ভুলভ্রান্তির নমুনা উল্লেখ করব।
৪. ৩. ১. নিজেদের জীবদ্দশায় যীশুর পুনরাগমন
নতুন নিয়মের কয়েকটা পুস্তক থেকে আমরা দেখি যে, যীশুর প্রেরিতরা বা সাহাবীরা নিজেদের জীবদ্দশাতেই যীশুর পুনরাগমনের কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন এবং প্রচার করতেন। নিম্নের কয়েকটা উদ্ধৃতি দেখুন:
(ক) ১ থিষলনীকীয় ৪/১৫-১৭ শ্লোকে পল লেখেছেন যে, তাঁদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত হবে: ‘‘কেননা আমরা প্রভুর কালাম দ্বারা তোমাদেরকে এই কথা ঘোষণা করছি যে, আমরা যারা জীবিত আছি, যারা প্রভুর আগমন পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকব, আমরা কোনক্রমে সেই মৃত লোকদের আগে যাব না। কারণ প্রভু স্বয়ং আনন্দধ্বনি সহ, প্রধান ফেরেশতার স্বর সহ এবং আল্লাহ্র তূরীবাদ্য সহ বেহেশত থেকে নেমে আসবেন, আর যারা মসীহে মৃত্যুবরণ করেছে, তারা প্রথমে জীবিত হয়ে উঠবে। পরে আমরা যারা জীবিত আছি, যারা অবশিষ্ট থাকব, আসমানে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তাদের সঙ্গে একত্রে আমাদেরও মেঘযোগে তুলে নেওয়া হবে। আর আমরা এভাবে সব সময় প্রভুর সঙ্গে থাকব।’’ (১ থিষলনীকীয় ৪/১৫-১৭)
(খ) ১ করিন্থীয় ১৫/৫১ শ্লোকেও সাধু পল নিশ্চিত করেছেন যে তাঁদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত হবে। তাঁদের মৃত্যু হবে না, শুধু রূপান্তরিত হয়ে জান্নাতে চলে যাবেন। তিনি বলেন: ‘‘দেখ, আমি তোমাদের এক নিগূঢ়তত্ত্ব বলি; আমরা সকলে যে মারা যাব তা নয়, কিন্তু সকলে রূপান্তরিকৃত হব; এক মুহূর্তের মধ্যে, চোখের পলকে, শেষ তূরীধ্বনির সংগে সংগে রূপান্তরিকৃত হব; কেননা সেই তূরী যখন বাজবে, তখন মৃতেরা ধ্বংসহীন জীবন নিয়ে পুরুত্থিত হবে এবং আমরা রূপান্তরিত হব।’’ (১ করিন্থীয় ১৫/৫১-৫২, মো.-১৩)
(গ) যাকোবও তাঁদের জীবদ্দশায় কিয়ামত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তাঁর বিশ্বাসে একটু ধৈর্য ধারণ করলেই যীশুর আগমন পাওয়া যাবে। দায়িত্ব শুধু তাঁর আগমন পর্যন্ত একটু ধৈর্য ধারণ করা। তিনি লেখেছেন: ‘‘অতএব, হে ভাইয়েরা, তোমরা প্রভুর আগমন পর্যন্ত ধৈর্য ধর... নিজ নিজ হৃদয় সুস্থির কর, কেননা প্রভুর আগমন সন্নিকট।’’ (যাকোব/ ইয়াকুব ৫/৭-৯, মো.-১৩)
অতি শিঘ্রই কিয়ামত হওয়া এবং যীশুর ফিরে আসার বিষয়ে আরো বক্তব্য দেখুন: প্রকাশিত বাক্য ৩/১১; ২২/৭, ১০, ২০; যাকোব ৫/৮; ১ পিতর ৪/৭; ১ যোহন ২/১৮; ফিলিপীয় ৪/৫; করিন্থীয় ১০/১১।
পিতরের দ্বিতীয় পত্র থেকে আমরা দেখি যে, সেই প্রজন্মের খ্রিষ্টানরা প্রভুর পুনরাগমনের অপেক্ষায় অস্থির ও অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন। খ্রিষ্টধর্ম বিরোধীরা খ্রিষ্টানদের এ বিশ্বাস নিয়ে উপহাস শুরু করেন। তখন প্রচারকরা খ্রিষ্টানদেরকে বিভিন্নভাবে প্রবোধ দিতে থাকেন। পিতর বলেন: ‘‘শেষকালে উপহাসকারীরা উপহাস করার জন্য উপস্থিত হবে; তারা নিজ নিজ অভিলাষ অনুসারে চলবে, এবং বলবে, তাঁর আগমনের ওয়াদা কোথায়? .... কিন্তু প্রিয়তমেরা, তোমরা এই একটা বিষয় ভুলে যেও না, প্রভুর কাছে এক দিন হাজার বছরের সমান এবং হাজার বছর এক দিনের সমান। প্রভু নিজের ওয়াদা পালনে বিলম্ব করেন না, ... কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিঞ্চু ...।’’ (২ পিতর ৩/৩-৯, মো.-০৬)
ইঞ্জিলগুলোতে উদ্ধৃত যীশুর বক্তব্যের ক্ষেত্রে পিতরের এ ব্যাখ্যা প্রযোজ্য নয়। কারণ যীশু বলেননি যে, আমি দু-এক দিনের মধ্যে আসব। বরং তিনি বলেছেন যে, তাঁদের জীবদ্দশাতেই তিনি আসবেন। এরপরও পিতর বুঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, প্রভু অচীরেই আসবেন তবে সামান্য বিলম্ব ঈশ্বরীয় পঞ্জিকায় বিলম্ব নয়।
আমরা জানি যে, এ সকল বক্তব্য সবই ভুল বলে প্রমাণিত। তবে প্রথম কয়েক প্রজন্মের খ্রিষ্টানরা প্রায় শতবর্ষ যাবৎ পরিপূর্ণ আস্থার সাথে বিশ্বাস করতেন যে, তাদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত হবে। প্রথম তিন ইঞ্জিল এ প্রত্যাশার মধ্যেই রচিত। পক্ষান্তরে চতুর্থ ইঞ্জিল প্রথম শতাব্দীর পরে নতুন আকীদার ভিত্তিতে রচিত।
খ্রিষ্টান প্রচারকরা বলেন, সাহাবীরা ও প্রথম প্রজন্মের খ্রিষ্টানরা যীশুর কথা সঠিকভাবে বুঝতে পারেননি। কিন্তু প্রশ্ন হল, যারা যীশুর এ সকল কথার অর্থ বুঝনেনি, তাঁরা অন্যান্য কথা সঠিকভাবে বুঝতেন বলে কিভাবে দাবি করা যায়?
এখানে আরেকটা প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাসে যীশুর সাহাবীরা ও ইঞ্জিল লেখকরা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ ছিলেন। পবিত্র আত্মার সহায়তা প্রাপ্ত মানুষেরা যদি ঈশ্বরের, যীশুর বা পবিত্র আত্মার নিজের কথার অর্থ ঠিকভাবে বুঝতে না পারেন তবে আমরা কীভাবে মনে করতে পারি যে, তাঁরা যীশুর ধর্ম সঠিকভাবে বুঝেছিলেন, প্রচার করেছিলেন বা লেখেছিলেন? যীশুর এ সকল বক্তব্যের অর্থ বুঝতে সাহাবীরা ভুল করেছিলেন বলে যদি স্বীকার করে নেওয়া হয় তবে স্বীকার করতে হবে যে, তাঁরা পবিত্র আত্মার সহয়তা পাননি এবং তাঁরা ভুলের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। তাঁদের মত ও বিশ্বাস যদি এভাবে ভুল হয় তবে তাঁদের কথা, বিবরণ বা সাক্ষ্য তো অবশ্যই ভুল হবে। কারণ মত ও বুঝের উপরেই বক্তব্য, বর্ণনা ও সাক্ষ্যের ভিত্তি।