লগইন করুন
উপরের ভবিষ্যদ্বাণীর অনুরূপ আরেকটা ভবিষ্যদ্বাণী শিষ্যদের জীবদ্দশায় কিয়ামত সংঘটনের ভবিষ্যদ্বাণী। উপরে যীশু ধর্মধাম ধ্বংস, কিয়ামত ও তাঁর পুনরাগমন তিনটা বিষয়-ই ‘তাঁর প্রজন্ম’ প্রত্যক্ষ করবে বলে জানিয়েছেন। অন্যান্য স্থানে তাঁর প্রজন্মে বা তাঁর কতিপয় শিষ্যের জীবদ্দশাতেই কিয়ামতের কথা বলেছেন।
বৈপরীত্য আলোচনায় আমরা দেখেছি, ইহুদিরা যখন তাঁকে বিচার করেন তখন তিনি বলেন, মহাপুরোহিত ও তাঁর সাথীরাই তাঁকে মেঘরথে আগমন করতে দেখবেন। ‘‘মহাপুরোহিত আবার তাঁকে বললেন, ‘তুমি জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য দিয়ে আমাদের বল যে, তুমি সেই মশীহ, অর্থাৎ ঈশ্বরের পুত্র কি না’। তখন যীশু তাঁকে বললেন, হ্যা, আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। তবে আমি আপনাদের এটাও বলছি, এর পরে আপনারা মনুষ্যপুত্রকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান পাশে বসে থাকতে এবং মেঘে করে আসতে দেখবেন।’’ (বাইবেল-২০০০) কেরি: ‘‘এখন অবধি মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়া থাকিতে এবং আকাশের মেঘরথে আসিতে দেখিবে।’’ (মথি ২৬/৬৩-৬৫; মার্ক ১৪/৬১-৬৪)
কিয়ামত প্রসঙ্গে যীশু বলেন: ‘‘মনুষ্যপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের সংগে নিয়ে তাঁর পিতার মহিমায় আসছেন, তখন তিনি প্রত্যেক লোককে তার কাজ অনুসারে ফল দেবেন। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে, যাদের কাছে মনুষ্যপুত্র রাজা হিসাবে দেখা না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোন মতেই মারা যাবে না।’’ (মথি ১৬/২৭-২৮: বাইবেল-২০০০। মোকাদ্দস-২০০৬-এর অনুবাদও একই, শুধু ‘মনুষ্যপুত্র’ স্থলে ‘ইবনে আদম’ ও ‘স্বর্গদূত’ স্থলে ‘ফেরেশতা’ লেখা হয়েছে।)
কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘কেননা ইবনুল ইনসান (মানব-সন্তান) তাঁর ফেরেশতাদের সঙ্গে তাঁর পিতার প্রতাপে আসবেন, আর তখন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কাজ অনুসারে প্রতিফল দেবেন। আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, যারা এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যারা কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাবে না, যে পর্যন্ত ইবনুল ইনসানকে তাঁর রাজ্যে আসতে না দেখবে।’’
যীশু শিষ্যদেরকে ফিলিস্তিনের মধ্যে ধর্ম প্রচারের জন্য প্রেরণ করে বলেন যে, ফিলিস্তিনের গ্রামগুলো সফর সমাপ্ত করার আগেই তিনি ফিরে আসবেন। ‘‘কোন গ্রামের লোকেরা যখন তোমাদের উপর জুলুম করবে, তখন অন্য গ্রামে পালিয়ে যেও। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, ইসরাইল দেশের সমস্ত শহর ও গ্রামে তোমাদের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ইবনে আদম আসবেন।’’ (মথি ১০/২৩: মো.-২০০৬)
আমরা নিশ্চিত জানি যে, এ সকল কথা ভুল। যীশুর জেরাকারী পুরোহিতরা, যীশুর নিকট দণ্ডায়মান শিষ্যরা সকলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর প্রেরিতরা ইসরায়েল রাজ্যের সকল গ্রাম পরিভ্রমণ শেষ করেছেন। এরপর অ-ইহুদি রোমান রাজ্যেও পরিভ্রমণ করেছেন। এরপর তারা মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু কেউই মনুষ্যপুত্রকে আসতে দেখেননি। যীশুর প্রতি শ্রদ্ধাশীলরা মনে করেন যে, যীশু এরূপ অবান্তর ও অবাস্তব কথা বলেননি। যীশুর কথা ভুল বুঝে বা ‘কিয়ামত নিকটেই’ বলে মানুষদের দ্রুত প্রভাবিত ও ধর্মান্তরিত করার সুবিধার্থে শিষ্যরা বা পরবর্তী যুগের প্রচারকরা এগুলো বানিয়েছেন। ইঞ্জিল লেখকরা তা তাঁর নামে সংকলন করেছেন। ডোনাল্ড মরগান ‘বাইবেলের মারাত্মাক খুঁত?’ (Fatal Bible Flaws?) প্রবন্ধে বলেন:
“MT 16:28, MK 9:1, LK 9:27 Jesus says that some of his listeners will not taste death before he comes again in his kingdom. This was said almost 2000 years ago. ...This passage and many others indicate that Jesus was to come again in a relatively short period of time and not just "quickly" as present day Biblicists assert. All of his listeners are now dead, yet Jesus has not come again in his kingdom. All of the alleged words of Jesus put forth in the Bible are therefore suspect.”
‘‘মথি ১৬: ২৮; মার্ক ১৯: ১; লূক ৯: ২৭ যীশু বলছেন যে, তাঁর কিছু শ্রোতার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণের পূর্বেই তিনি পুনরায় তাঁর রাজত্বে আগমন করবেন। প্রায় দু হাজার বছর পূর্বে এ কথা বলা হয়েছে। ... বর্তমানে বাইবেল প্রচারকরা বলেন তিনি শীঘ্রই আসবেন। কিন্তু এ বক্তব্য এবং আরো অনেক বক্তব্য প্রমাণ করে যে, শুধু শীঘ্রই নয়, বরং অতি অল্প সময়ের মধ্যেই যীশুর পুনরাগমনের কথা ছিল। তাঁর শ্রোতাদের সকলেই এখন মৃত, কিন্তু এখনো যীশু তাঁর রাজত্বে পুনরায় আসেননি। এ কারণে বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান তথাকথিত যীশুর বক্তব্য সবই সন্দেহজনক হয়ে পড়ল।’’[1]