লগইন করুন
হেরোদের গণহত্যা বিষয়ক মথির বর্ণনা আমরা দেখেছি। এ গণহত্যাকে পুরাতন নিয়মের খ্রিষ্ট বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে প্রমাণ করতে মথি বলেন: ‘‘তখন ইয়ারমিয়া (যিরমিয়) নবীর মধ্য দিয়ে নাজেল হওয়া প্রভুর এই কালাম পূর্ণ হল, ‘রামায় আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, হাহাকার ও ভীষণ কান্নাকাটি; রাহেলা তার সন্তানদের জন্য কাঁদছেন, সান্তবনা পেত চান না, কেননা তারা আর নেই।’’ (মথি ২/১৭-১৮, মো.-১৩)
ইঞ্জিল লেখক এখানেও পুরাতন নিয়মের বক্তব্যকে ভুল বা বিকৃত অর্থে ব্যবহার করেছেন। যিরমিয় মূলত ইহুদিদের ব্যাবিলনীয় নির্বাসনের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। যে কোনো পাঠক যদি যিরমিয়ের পূর্বের ও পরের কথাগুলো একত্রে পাঠ করেন তবে জানতে পারবেন যে, এ কথাটা হেরোদের ঘটনার বিষয়ে বলা হয়নি, বরং যিরমিয় নবীর সময়ে সংঘটিত নেবুকাদনেজারের ঘটনার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় হাজার হাজার ইহুদি নিহত হন এবং হাজার হাজার ইহুদিকে বন্দি করে ব্যাবিলনে নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হয়। যেহেতু এদের মধ্যে যাকোবের স্ত্রী রাহেলের বংশের অনেক মানুষ ছিলেন; সেহেতু পরলোকেও তার আত্মা কেঁদেছিল। ইহুদি বন্দিদেরকে প্রথমে ‘রামাহ’ প্রদেশে জমায়েত করা হয় এবং সেখান থেকে ব্যাবিলনে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দিদের মধ্যে শৃঙ্খলিত যিরমিয়ও ছিলেন। রামাহ থেকে নেবুকাদনেজার তাকে মুক্তি দেন (যিরমিয় ৪০/১)
মথি উদ্ধৃত যিরমিয়ের বক্তব্য নিম্নরূপ: ‘‘মাবুদ এই কথা বলেন, রামায় আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, হাহাকার ও ভীষণ কান্নাকাটি হচ্ছে! রাহেলা তার সন্তানদের জন্য কাঁদছে, সে তার সন্তানদের বিষয়ে প্রবোধ কথা মানে না, কেননা তারা নেই। মাবুদ এই কথা বলেন, তোমরা কান্নার আওয়াজ ও চোখের পানি মুছে ফেল; কেননা তোমার কাজের পুরস্কার দেওয়া হবে, মাবুদ এই কথা বলেন, আর তারা দুশমনের দেশ থেকে ফিরে আসবে।’’ (যিরমিয় ৩১/১৫-১৬)
মথির লেখক ইয়ারমিয়া বা যিরমিয়ের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে হেরোদের গণহত্যার বিষয়ে প্রয়োগ করেছেন। নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন:
(ক) ঐতিহাসিক ও বাইবেলীয় বিচারে যিরমিয়ের এ বক্তব্যটা কোনোভাবেই খ্রিষ্ট বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী নয়। মথি এ বক্তব্যটাকে স্পষ্ট অর্থ থেকে বের করে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে একে খ্রিষ্ট বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
(খ) যিরমিয়ের বক্তব্যের শুরুতে বেদনার কথা থাকলেও তাঁর বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য আনন্দ ও বিজয়ের প্রত্যাশা। পক্ষান্তরে মথির লেখক একে সম্পূর্ণ উল্টোভাবে বেদনা ও হাহাকারের আবহে ব্যবহার করেছেন।
(গ) যিরমিয়ের বক্তব্যের যে অংশে ভবিষ্যদ্বাণী বিদ্যমান সে অংশটুকু মথি উল্লেখ করেননি। বরং যে অংশে ভবিষ্যদ্বাণীর প্রেক্ষাপট বলা হয়েছে সেটাকে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে পেশ করেছেন। যিরমিয়ের বক্তব্য: বেদনা বিদ্যমান, কিন্তু ঈশ্বর বেদনার অবসান ও মুক্তির আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করলেন। আর মথির বক্তব্য: ঈশ্বর খ্রিষ্টের আগমনের সময়ের বেদনা ও হাহাকারের ভবিষ্যদ্বাণী করলেন।
(ঘ) মথির লেখক যিরমিয়ের মূল বক্তব্যের অর্থ ভালভাবে জানতেন বলেই প্রতীয়মান। বাহ্যত তিনি ইচ্ছাপূর্বক বক্তব্যটার অর্থ পরিবর্তন করে অতীতের সংবাদকে ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে পেশ করেছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যীশুর জীবন ও কর্ম বর্ণনার ক্ষেত্রেও তিনি বাস্তব ঐতিহাসিক বর্ণনা লেখেননি। বরং যীশুর জীবন ও কর্মকে নিজের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার জন্য ইচ্ছেমত কাটছাট করে ব্যবহার করেছেন।