লগইন করুন
বাইবেল বলছে, ঈশ্বরের প্রত্যেক বাক্য অভ্রান্ত ও সত্য। যেমন: ‘‘ঈশ্বরের প্রত্যেক বাক্য পরীক্ষাসিদ্ধ ... তাঁহার বাক্যকলাপে কিছু যোগ করিও না...।’’ কি. মো.-১৩: ‘‘আল্লাহর প্রত্যেক কালাম পরীক্ষাসিদ্ধ ... তাঁর কালামের সঙ্গে কিছু যোগ করো না...।’’ (হিতোপদেশ মেসাল ৩০/৫-৬)।
অন্যত্র বলা হয়েছে: ‘‘পাক-কিতাবের কোন ভবিষ্যদ্বাণী বক্তার নিজের ব্যাখ্যার বিষয় নয়; কারণ ভবিষ্যদ্বাণী কখনো মানুষের ইচ্ছাক্রমে উপনীত হয়নি, কিন্তু মানুষেরা পাক-রূহ দ্বার চালিত হয়ে আল্লাহ থেকে যা পেয়েছেন, তাই বলেছেন।’’ (২ পিতর ১/২০)।
কিন্তু এর বিপরীতে আমরা বাইবেলেই দেখেছি যে, ঈশ্বরের বা পাক কিতাবের অনেক কথাই সত্য নয়; বরং ভ্রান্তিময় বা ভ্রান্তিজড়িত। ঈশ্বর নিজেই নবীদের বা ভাববাদীদেরকে বা নিজ প্রজাকে প্রতারণা ও বিভ্রান্ত করেন। ভাববাদীরাও ঈশ্বরের নামে মিথ্যা বলেন ও প্রতারণা করেন। নবী ও লিপিকাররা ঈশ্বরের নামে মিথ্যা কথা লেখেন বা বলেন।
বাইবেলে ঈশ্বর কর্তৃক নিজ নবী বা নিজ প্রজাকে প্রতারণা করা, বিভ্রান্ত করা ও মিথ্যা বলার অনেক ঘটনা বিদ্যমান। আমরা ইতোপূর্বে বাইবেলীয় অভ্রান্ততা প্রসঙ্গে কয়েকটা নমুনা দেখেছি। যেমন রাজা আহাবের ৪০০ জন নবীকে ঈশ্বর মিথ্যাবাদী ফেরেশতা পাঠিয়ে মিথ্যা কালাম প্রদান করেন: ‘‘আমি গিয়ে তার সমস্ত নবীর মুখে মিথ্যাবাদী রূহ হবো... মাবুদ আপনার এ সব নবীর মুখে মিথ্যাবাদী রূহ দিয়েছেন ..।’’ (১ রাজাবলি/বাদশাহনামা ২২/১৫-২৩; বিশেষত: ২২/২২-২৩। পুনশ্চ ২ বংশাবলি/ খান্দাননামা ১৮/৪-৫ ও ২১-২২)
যিরমিয় ৪/৫-১০ বলছে যে, ঈশ্বর স্বয়ং তাঁর মানুষদেরকে প্রতারণা করেন। ‘‘হায় হায়! হে সার্বভৌম মাবুদ,তুমি এই লোকদের ও জেরুশালেমকে নিতান্ত ভ্রান্ত (ভয়ানকভাবে প্রতারণা: greatly deceived) করেছ।’’ (ইয়ারমিয়া/ যিরমিয় ৪/১০)
অন্যত্র ঈশ্বর বলেছেন: ‘‘কোন নবী যদি প্ররোচিত (deceived: প্রতারিত) হয়ে কথা বলে, তবে জেনো, আমিই মাবুদ সেই নবীকে প্ররোচনা (deceived: প্রতারণা) করেছি; আমি তার বিরুদ্ধে আমার হাত বাড়িয়ে আমার লোক (প্রজা) ইসরাইলের মধ্য থেকে তাকে মুছে ফেলব।’’ (ইহিস্কেল/ যিহিষ্কেল ১৪/৯)
ঈশ্বরের প্রত্যেক বাক্য বা পাক কিতাবের সকল কথা বিশুদ্ধ বা পরীক্ষাসিদ্ধ হওয়ার দাবির সাথে এটা শতভাগ সাংঘর্ষিক। ঈশ্বর নিজেই যদি মিথ্যা বলেন, প্ররোচিত বা প্রতারিত করেন তবে তাঁর সকল কথা কিভাবে বিশুদ্ধ বা সঠিক বলে গণ্য হয়?
বাইবেল অন্যত্র বলছে: ‘‘তোমরা কেমন করে বলতে পার, আমরা জ্ঞানী এবং আমাদের কাছে মাবুদের শরীয়ত আছে? দেখ, আলেমদের (scribes: লিপিকারদের; কেরি: অধ্যাপকদের) মিথ্যা লেখনী তা মিথ্যা করে ফেলেছে। ... নবী ও ইমামসুদ্ধ সমস্ত লোক প্রবঞ্চনায় রত।’’ (যিরমিয়/ইয়ারমিয়া ৮/৭-১০)
এ বক্তব্যও নিশ্চিত করছে যে, ঈশ্বরের সকল কথা বিশুদ্ধ নয়। কারণ ঈশ্বরের কথা তো নবীদের মাধ্যমেই জানা যায় এবং আলেমদের বা লিপিকারদের অনুলিপির মাধ্যমেই পরবর্তী প্রজন্মগুলোর কাছে পৌঁছায়। যখন নবী ও ইমামসুদ্ধ সকলেই প্রবঞ্চনায় লিপ্ত হয় এবং লিপিকারদের মিথ্যা কলম ঈশ্বরের বাক্যকে মিথ্যা করে ফেলে তখন নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের নামে কথিত বা লিখিত সকল কথা বা অনেক কথাই মিথ্যা ও প্রবঞ্চনা।
ঈশ্বরের সকল বাক্য সত্য, ঈশ্বর কোনো কোনো ভাববাদীকে প্রতারণা করেন এবং অধ্যাপকদের মিথ্যা কলম ঈশ্বরের বাক্য মিথ্যা বানায়: এ তিন বিষয়ক বাইবেলীয় বক্তব্যগুলো উল্লেখ করে ‘বাইবেলের মারাত্মক খুঁতসমূহ’ (Fatal Bible Flaws) প্রবন্ধে ডোনাল্ড মরগান (Donald Morgan) বলেন:
“Not every word of God can prove true if God deceives anyone at all; teaching from the Bible cannot be trusted if the scribes falsify the word. In other words, the first reference is mutually exclusive with the other three. Thus, the Bible cannot be the perfect work of a perfect, all-powerful and loving God since one or more of the above references is obviously untrue. Note also: Some versions use the word "persuade" rather than "deceives." The context makes clear, however, that deception is involved.”
‘‘ঈশ্বর যদি কাউকে প্রতারণা করেন তবে কখনোই ঈশ্বরের সকল কথা পরীক্ষাসিদ্ধ বা সত্য প্রমাণিত নয়; যদি অনুলিপিকাররা ঈশ্বরের কথা মিথ্যা বানাতে পারে তবে বাইবেলের শিক্ষার উপর নির্ভর করা যায় না। অন্য কথায়, পরবর্তী দুটো কথা প্রথম কথাটাকে বাতিল বলে প্রমাণ করে। এভাবে সুস্পষ্ট যে, উপরের তিনটা তথ্যের কোনো একটা বা দুটো অসত্য। এতে প্রমাণ হয় যে, বাইবেল সর্বশক্তিমান প্রেমময় ঈশ্বরের রচিত কোনো নিখুঁত কর্ম নয়। আরেকটা দ্রষ্টব্য: কোনো কোনো সংস্করণে প্রতারণা শব্দটার পরিবর্তে প্ররোচনা বা বোঝানো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সর্বাবস্থায়, বক্তব্যের বিষয়বস্ত্ততে ‘প্রতারণা’-র অর্থ সুস্পষ্টভাবেই সংশ্লিষ্ট।’’[1]