পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৩. ৯. ৩১. মৃতদের মধ্য থেকে প্রথম পুনরুত্থিত হন কে?

নতুন নিয়মের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে, যীশুই মৃতদের মধ্য থেকে প্রথম পুনরুত্থিত। প্রেরিত ২৬/২৩: ‘‘KJV: That Christ should suffer, and that he should be the first that should rise from the dead. RSV: by being the first to rise from the dead’’: ‘‘খৃস্টকে দুঃখভোগ করতে হবে এবং তিনিই প্রথম মৃতগণের মধ্য হইতে পুনরুত্থিত হবেন/ হয়ে...।’’

কেরির অনুবাদ: ‘‘আর তাহা এই, খ্রিষ্টকে দুঃখভোগ করিতে হইবে, আর তিনিই প্রথম, মৃতগণের পুনরুত্থান দ্বারা’’। জুবিলী বাইবেল: ‘‘খৃস্টকে যন্ত্রণাভোগ করতে হবে, এবং মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিতদের প্রথম হওয়ায় তাঁকে আমাদের জাতির কাছে ও বিজাতীয়দের কাছে আলো প্রচার করতে হবে।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘মসীহকে কষ্টভোগ করতে হবে এবং তাঁকেই মৃত্যু থেকে প্রথমে জীবিত হয়ে উঠে...।’’

১ করিন্থীয় ১৫/২০: ‘‘KJV/RSV: But now is Christ risen from the dead, and become the first fruits of them that slept’’: ‘‘কিন্তু এখন খ্রিষ্ট মৃতদের মধ্য থেকে উত্থিত হয়েছেন, এবং যারা ঘুমিয়ে পড়েছিল (মৃত্যুবরণ করেছিল) তাদের মধ্যে তিনিই প্রথম ফসল হয়েছেন। ERV: Easy-to-Read Version: the first one of all those who will be raised: ‘‘মৃতদের মধ্যে থেকে যারা জীবিত হবেন সকলের মধ্যে তিনিই প্রথম।’’ কেরি: ‘‘তিনি নিদ্রাগতদের অগ্রিমাংশ’’। জুবিলী: ‘‘আসলে খ্রিষ্ট মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থান করেছেন- নিদ্রাগতদের প্রথম ফসল রূপে’’। কি. মো.-২০০৬: ‘‘তিনিই প্রথম ফল, অর্থাৎ মৃত্যু থেকে যাদের জীবিত করা হবে তাদের মধ্যে তিনিই প্রথমে জীবিত হয়েছেন।’’

কলসীয় ১/১৮: KJV/RSV: who is the beginning, the firstborn from the dead: কেরি: ‘‘তিনি আদি, মৃতগণের মধ্য হইতে প্রথমজাত’’। কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘তিনিই প্রথম আর তিনিই মৃত্যু থেকে প্রথম জীবিত হয়েছিলেন।’’

এ সকল বক্তব্য নিশ্চিত করে যে, যীশুর পূর্বে কোনো মৃত জীবিত হননি; বরং তিনিই প্রথম মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত।

কিন্তু এর বিপরীতে ইঞ্জিলগুলো থেকে জানা যায় যে, যীশুর পূর্বেই তিনজন মানুষ মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হন: (১) অধ্যক্ষ বা নেতার কন্যা, যার কথা শুধু প্রথম তিন ইঞ্জিল (মথি, মার্ক ও লূক) উল্লেখ করেছে (মথি ৯/২৫; মার্ক ৫/৪২; লূক ৮/৫৫), (২) নায়িন নামক নগরের এক বিধবা মাতার একমাত্র সন্তান শুধু লূক তার কথা উল্লেখ করেছেন (লূক ৭/১১-১৬) এবং (৩) লাসার নামক ব্যক্তি, যাকে জীবিত করার ঘটনা শুধুমাত্র যোহন উল্লেখ করেছেন (যোহন ১১/১-৪৪)।

পুরাতন নিয়ম থেকে আরো হাজার হাজার মানুষের কথা জানা যায় যারা মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। যিহিষ্কেল/ ইহিস্কেল নবী হাজার হাজার মৃত মানুষকে জীবিত করেন (যিহিষ্কেল ৩৭/১-১৪)। এলিয়/ ইলিয়াস (Elijah) একটি মৃত শিশুকে পুনর্জীবিত করেন (১ রাজাবলি ১৭/১৭-২৪)। ইলীশায়/ আল-ইয়াসা (Elisha) একজন মৃত বালককে পুনর্জীবিত করেন (২ রাজাবলি ৪/৮-৩৭)।

দুটো বিষয়ের মধ্যে বৈপরীত্য সুস্পষ্ট। ইঞ্জিলগুলোর ও পুরাতন নিয়মের বর্ণনাগুলো সত্য বলে গ্রহণ করলে মৃতদের মধ্যে যীশুর প্রথম পুনরুত্থিত হওয়ার কথা মিথ্যা হতে বাধ্য। দুটো পরস্পর বিরোধী কথাকে সত্য বলে গ্রহণ করার উপায় নেই। একটাকে মিথ্যা বা ভুল বলতেই হবে, সরাসরি অথবা ব্যাখ্যার মাধ্যমে।

খ্রিষ্টান প্রচারকরা দাবি করবেন যে, যীশুই প্রথম পুনরুত্থিত- কথাটা মিথ্যা নয়। তবে কথাটার একটা প্রকৃত অর্থ আছে। সে প্রকৃত অর্থটা এ বাক্য থেকে বুঝা যায় না। এ বাক্যের সাথে দু-একটা শব্দ যোগ করলে সে অর্থ বুঝা যায়। যেমন যীশুই মৃতদের মধ্যে থেকে ‘অনন্ত জীবনের জন্য’ প্রথম পুনরুত্থিত। পাক-রূহ বা পবিত্র আত্মা এ শব্দগুলো বলেননি। পবিত্র আত্মার ‘না বলা’ বা ‘বলতে ভুলে যাওয়া’ এ শব্দগুলো যোগ করলেই এর প্রকৃত অর্থ পাওয়া যায়। এরূপ সকল ব্যাখ্যার একটাই অর্থ: বাইবেলে যা লেখা আছে তা মিথ্যা, তবে তার সাথে সংযোজন বা বিয়োজন করে যে ব্যাখ্যা প্রচারকরা পেশ করছেন তা সত্য।