লগইন করুন
নতুন নিয়মের বিভিন্ন স্থানে যীশুর বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, সকল মানুষই মুক্তি পাবে; তিনি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না। তিনি বলেন: ‘‘আর আমাকে যখন ভূতল থেকে উঁচুতে তোলা হবে তখন সকলকে (সকল মানুষকে) আমার কাছে আকর্ষণ করবো (if I be lifted up from the earth, will draw all men unto me) (যোহন ১২/৩২, মো.-১৩)। এ থেকে জানা যায় যে, সকল মানুষই মুক্তি পাবে।
এর বিপরীতে বলা হয়েছে যে, যীশুর সাথে এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার মানুষ জান্নাতে থাকবেন। আর এরা সকলেই অবিবাহিত, অমৈথুন, রমণীদের সংসর্গে কলুষিত না হওয়া পুরুষ (not defiled with women)। এরা ছাড়া কেউ স্বর্গের গান গাইতে পারবে না। (প্রকাশিত বাক্য/ প্রকাশিত কালাম ১৪/১-৪)
‘‘আমি আর একজন ফেরেশতাকে ... আসতে দেখলাম। তাঁর কাছে জীবন্ত আল্লাহর সীলমোহর ছিল। যে চারজন ফেরেশতাকে দুনিয়া ও সমুদ্রের ক্ষতি করবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সেই চারজন ফেরেশতাকে তিনি খুব জোরে চিৎকার করে বললেন, ‘আমাদের আল্লাহর গোলামদের কপালে সীলমোহর না দেওয়া পর্যন্ত দুনিয়া ও সমুদ্র বা গাছপালার ক্ষতি কোরো না।’ তারপর আমি সেই সীলমোহর করা লোকদের সংখ্যা শুনলাম। বনি-ইসরাইলদের সমস্ত বংশের মধ্য থেকে মোট এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার লোককে সীলমোহর করা হয়েছিল।’’ (প্রকাশিত কালাম ৭/২-৪, মো.-০৬)
‘‘ অনেক পংগপাল দুনিয়াতে বের হয়ে আসল। সেই পংগপালগুলোকে দুনিয়ার কাঁকড়া বিছার মত ক্ষমতা দেওয়া হল। তাদের বলা হল যেন তারা দুনিয়ার কোন ঘাস বা সবুজ কোন কিছু অথবা কোন গাছের ক্ষতি না করে; কেবল যে লোকদের কপালে আল্লাহর সীলমোহর নেই তাদেরই ক্ষতি করে।’’ (প্রকাশিত কালাম ৯/৩-৪, মো.-০৬)
‘‘তারপর আমি চেয়ে দেখলাম, সেই মেষশাবক সিয়োন পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর সংগে আছে এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার লোক। তাদের কপালে মেষশাবক ও তাঁর পিতার নাম লেখা রয়েছে। ... সেই সিংহাসন ও সেই চারজন প্রাণী এবং সেই নেতাদের সামনে তারা একটা নতুন কাওয়ালী গাইছিল। কেউ সেই কাওয়ালী শিখতে পারল না; কেবল সেই এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার লোক, যাদের দুনিয়ার লোকদের মধ্য থেকে কিনে নেওয়া হয়েছিল তারাই শিখতে পারল। তারা স্ত্রী-সংসর্গে কলুষিত হয়নি; কারণ তারা চিরকুমার (ইংরেজি: These are they which were not defiled with women; for they are virgins কেরি: ইহারা রমণীদের সংসর্গে কলুষিত হয় নাই; কারণ ইহারা অমৈথুন। মো.-১৩: এরা রমণীদের সংসর্গে কলুষিত হয়নি, কারণ এরা অমৈথুন) যেখানে মেষশাবক যান তারা তাঁর পিছনে পিছনে যায়। আল্লাহ এবং মেষশাবকের কাছে প্রথম ফল হিসাবে কোরবানী দেবার জন্য লোকদের মধ্য থেকে তাদের কিনে নেওয়া হয়েছিল। তারা কখনও মিথ্যা কথা বলে নি, আর তাদের মধ্যে কোন দোষ পাওয়া যায় নি।’’ (প্রকাশিত কালাম ১৪/৩-৫: মো.-২০০৬)
এ থেকে জানা যায় যে, যারা চিরকুমার বা অমৈথুন থেকেছেন এরূপ ১,৪৪,০০০ পুরুষই শুধু জান্নাত লাভ করবেন। নরকের পঙ্গপালেরা তাদের ক্ষতি করবে না।
উল্লেখ্য যে, কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ সংস্করণে এখানে অনুবাদ করা হয়েছে: ‘‘এরা সেই লোকেরা, যারা স্ত্রীলোকদের সংগে জেনা করে নিজেদের নাপাক করে নি।’’ এখানে (for they are virgins): ‘‘কারণ তারা চিরকুমার-অমৈথুন’’ কথাটা অনুবাদ থেকে পুরোপুরিই বাদ দেওয়া হয়েছে। এ পুস্তকেরই মাত্র ৮ অধ্যায় পরে ২২ অধ্যায়ের ১৯ শ্লোক বলছে: ‘‘আর এই কিতাবের সমস্ত কথা, অর্থাৎ আল্লাহর কালাম থেকে যদি কেউ কিছু কথা বাদ দেয় তবে আল্লাহও এই কিতাবে লেখা জীবন-গাছ ও পবিত্র শহরের অধিকার তার জীবন থেকে বাদ দেবেন।’’ আমরা জানি না; বাইবেলে বিশ্বাসী বাইবেল অনুবাদকরা কিভাবে বাইবেলের অনুবাদের সময় চারটা শব্দ বাদ দিলেন।
আর এ বাদ দেওয়ার ফলে মূল অর্থটাই পরিবর্তন হয়ে গেল। পরিবর্তিত অর্থ থেকে পাঠক জানছেন যে, জেনা, মিথ্যা ও দোষ থেকে মুক্ত থাকতে পারলেই মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থ হল, জেনা, মিথ্যা ও দোষ থেকে মুক্ত তো হতেই হবে, উপরন্তু ঈশ্বরের সীলমোহর, মুক্তি ও যীশুর সাহচর্যের জন্য চিরকুমার/চিরকুমারী (virgin) থাকা শর্ত। আর এ এজন্যই খ্রিষ্টধর্মে কৌমার্য (celibacy)-এর গুরুত্ব।