লগইন করুন
যীশু ইহুদিদেরকে ঈশ্বরের বিষয়ে বলেন: ‘‘তাঁর স্বর (voice, কেরি: রব) তোমরা কখনও শুন নি, তাঁর আকারও দেখ নি।’’ (যোহন ৫/৩৭, মো-১৩)
এ কথা বাইবেলের অন্য বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। ইহুদিরা ঈশ্বরকে দেখেছিলেন। এবং তাঁর রবও তারা শুনেছিলেন: ‘‘দেখ, আমাদের আল্লাহ মাবুদ আমাদের কাছে তাঁর প্রতাপ ও মহিমা দেখালেন এবং আমরা আগুনের মধ্য থেকে তাঁর বাণী (voice কেরি: রব) শুনতে পেলাম..।’’ (দ্বিতীয় বিবরণ ৫/২৪, মো.-১৩)
যীশু যেভাবে বলেছেন, সেভাবে বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরকে কেউ দেখে নি এবং দেখা সম্ভবও নয়। যেমন: যাত্রাপুস্তক ৩৩/২০: ‘‘আরও বললেন, তুমি আমার মুখ দেখতে পাবে না, কেননা মানুষ আমাকে দেখলে বাঁচতে পারে না।’’ যোহন ১/১৮ ‘‘আল্লাহকে কেউ কখনও দেখে নি।’’ ১ তীমথিয় ৬/১৬: ‘‘যাঁকে মানুষদের মধ্যে কেউ কখনও দেখতে পায় নি; দেখতে সক্ষমও নয়।’’ (মো.-১৩)
কিন্তু এর বিপরীতে বাইবেলের অন্যান্য স্থানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরকে দেখা যায়, মুখোমুখি দেখা যায়, একত্রে পানাহার করা যায় এবং মল্লযুদ্ধও করা যায়।
আদিপুস্তক/ পয়দায়েশ ১২/৭: ‘‘পরে মাবুদ ইব্রামকে (ইবরাহিমকে) দর্শন দিয়ে (the LORD appeared unto Abram) বললেন, আমি তোমার বংশকে এই দেশ দেব; আর যিনি ইব্রামকে দর্শন দিয়েছিলেন, ইব্রাম সেই মাবুদের উদ্দেশে সেই স্থানে একটি কোরবানগাহ তৈরি করলেন।’’ (মো.-১৩)
পয়দায়েশ ২৬/২, মো.-১৩: ‘‘আর মাবুদ তাঁকে (ইবরাহিমকে) দর্শন দিয়ে বললেন বললেন, তুমি মিসর দেশে নেমে যেও না।’’
তৌরাতের বর্ণনায় একরাতে ইয়াকুব (আ.) সারারাত ঈশ্বরের সাথে মল্লযুদ্ধ করেন। সারারাতের যুদ্ধেও ঈশ্বর যাকোবকে পরাজিত করতে অক্ষম হন। এজন্য শেষরাতে তাঁকে ‘ইসরাইল’ বা ঈশ্বরের সাথে যুদ্ধকারী উপাধি দান করেন (আদিপুস্তক ৩২/২৪-৩০)। ‘‘তখন ইয়াকুব সেই স্থানের নাম রাখলেন ‘পনূয়েল’ (আল্লাহর মুখ); কেননা তিনি বললেন, আমি আল্লাহকে সামনাসামনি দেখলাম (I have seen God face to face), তবুও আমার প্রাণ বাঁচল।’’ (পয়দায়েশ ৩২/৩০, মো.-১৩)
হিজরত ২৪/৯-১১, মো.-১৩: ‘‘তখন মূসা ও হারুন, নাদব ও অবীহূ, এবং ইসরাইলের প্রাচীন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সত্তর জন উঠে গেলেন; আর তাঁরা ইসরাইলের আল্লাহকে দর্শন করলেন (they saw the God of Israel); তাঁর চরণতলের স্থান নীলকান্তমণি-নির্মিত শিলাস্তরের কাজের মত এবং এবং নির্মলতায় সাক্ষাৎ আসমানের মত ছিল। ... তাঁরা আল্লাহকে দর্শন করে (they saw God) ভোজন পান করলেন।’’
আমোষ ৯/১: আমি প্রভুকে (মাবুদকে) দেখলাম, তিনি কোরবানগাহর কাছে দ-ায়মান ছিলেন (I saw the Lord standing upon the altar)।’’ (মো.-১৩)
যাত্রাপুস্তক ৩৩/১১: ‘‘আর মানুষ যেমন তার বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করে, তেমনি মাবুদ মূসার সঙ্গে সামনাসামনি (face to face) আলাপ করতেন।’’ (মো.-১৩)
এভাবে বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরকে দেখা যায়। (আদিপুস্তক ১৭/১; ১৮/১; যাত্রাপুস্তক ৩/১৬; ৬/২-৩; ২৪/৯-১১; গণনা পুস্তক ১২/৭-৮; ১৪/১৪; ইয়োব ৪২/৫; অমোষ ৭/৭-৮)।
যোহন ঈশ্বরকে স্বর্গে সিংহাসনে উপবিষ্ট দেখতে পান। ‘‘যিনি বসে আছেন, তিনি দেখতে সূর্যকান্তের ও সার্দীয় মণির মত।’’ (প্রকাশিত কালাম ৪/৩, মো.-১৩)
এ প্রসঙ্গে স্কট বিডস্ট্রাপ উল্লেখ করেছেন যে, কোনো কোনো খ্রিষ্টান প্রচারক উপরের বৈপরীত্যগুলোর মধ্য থেকে দু-একটার ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করেছেন। যাকোবের বক্তব্য ‘আমি আল্লাহকে সামনাসামনি দেখলাম (I have seen God face to face)’’ কথাটার ব্যাখ্যায় তারা বলেন, সামনাসামনি বা ‘মুখোমুখি দেখা’ বলতে যাকোব নৈকট্য বুঝিয়েছেন, তিনি ‘মুখোমুখি দেখা’ বলতে সরাসরি দেখা বুঝাননি। অথবা যাকোব ঈশ্বরের সামান্য কোনো দিক বা বিষয় দর্শন করেছিলেন এবং তিনি মনে করেন যে, তিনি ঈশ্বরকে মুখোমুখি দেখেন। আদিপুস্তকের লেখক এখানে যাকোবের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন মাত্র, তিনি যাকোবের বক্তব্য সঠিক বলে উল্লেখ করেননি।
এ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন: “This argument is obviously weak, in that it entails an interpretation of "face to face" as simply not meaning what it says - which is contrary to the literalists' position. If one is seeing an "aspect" of God, but not his face, why does this perfect god who is speaking through Jacob allow Jacob to record an error in this perfect book? Why does the Genesis author not set the record straight? After all, leaving it uncorrected certainly causes a problem with interpretation.”
‘‘এ যুক্তি সুস্পষ্টভাবেই দুর্বল। কারণ এ ব্যাখ্যার ভিত্তি হল, এখানে ‘মুখোমুখি’ কথাটাতে যা বলা হয়েছে তা বুঝানো হয়নি। এটা আক্ষরিকতার সাথে সাংঘর্ষিক। যাকোব যদি ঈশ্বরের মুখ না দেখে কোনো দিক বা বিষয় দর্শন করে থাকেন তবে সে নিখুঁত ঈশ্বর, যিনি স্বয়ং যাকোবের মুখ দিয়ে কথাগুলো বলছেন, তিনি কেন যাকোবকে তাঁর নিখুঁত গ্রন্থের মধ্যে ভুল কথা সংকলন করতে দিলেন? আদিপুস্তকের লেখক সঠিক বিষয়টা লেখলেন না কেন? সর্বোপরি ভুল কথা অসংশোধিত রেখে দিলে অনুধাবন-অনুবাদে সমস্যা হবেই।’’[1]