লগইন করুন
আমেরিকান গবেষক স্কট বিডস্ট্রাপ (Scott Bidstrup) ‘খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা আপনাকে যা জানতে দিতে চায় না: বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তির একটা সংক্ষিপ্ত সমীক্ষা’ (What The Christian Fundamentalist Doesn't Want You To Know: A Brief Survey of Biblical Errancy) প্রবন্ধে ‘ক্রুশারোহণ ও পুনরুত্থান জগাখিচুড়ি’ (The Crucifixion and Resurrection Mess) শীর্ষক পরিচ্ছেদে লেখেছেন[1]:
‘‘ক্রুশারোহণ ও পুনরুত্থান জগাখিচুড়ি অথবা একই ঘটনার বর্ণনাকে আমরা কত বেশি সাংঘর্ষিক বানাতে পারি? বাইবেলের মধ্যে অনেক বৈপরীত্য ও স্ববিরোধিতা বিদ্যমান। কিন্তু চার ইঞ্জিলের মধ্যে বর্ণিত ক্রুশারোহণ ও পুনরুত্থানের বিবরণ যেরূপ তালগোল পাকিয়েছে বাইবেলের অন্য কোনো বৈপরীত্য এরূপ তালগোল পাকায় নি। এখানে আমরা চারজন ভিন্ন ভিন্ন লেখক বর্ণিত একটা ঘটনার বর্ণনা দেখছি, যা এত বেশি সাংঘর্ষিক যে, আমি কখনোই এর কোনো ব্যাখ্যা দেখিনি। মৌলবাদীরা এ জট কিভাবে ছাড়ান তা দেখতে মজাই লাগবে! ...
যখন সূর্য উপরে উঠছিল (মথি ২৮/১), তখনো আঁধার ছিল (যোহন ২০/১) মগ্দলীনী মরিয়ম (যোহন ২০/১) অথবা মগ্দলীনী মরিয়ম ও অন্য মরিয়ম (মথি ২৮/১) অথবা মহিলাগণ (বহুবচন লক্ষ্য করুন: লূক ২৪/১) কবরে গেলেন। একটা ভূমিকম্প হল, একজন ফেরেশতা নেমে আসলেন এবং পাথরটা সরিয়ে দিলেন কবরের মুখ থেকে এবং পাথরটার উপর বসলেন (মথি ২৮/২)। যদিও আগে থেকেই পাথরটা সরানো ছিল! মগ্দলীনী মরিয়ম যখন কবরের কাছে যান তখন বাহ্যত পাথরটা আগে থেকেই সরানো ছিল (যেহান ২০/১; মার্ক ১৬/৪; লূক ২৪/২)। কবরে গমন করার উদ্দেশ্য ছিল মৃতদেহে ‘খোশবু মসলা’ মাখানো (মার্ক ১৬/১; লূক ২৪/১) অথবা শুধু কবরটাকে দেখা (মথি ২৮/১)। আপনার পছন্দটা বেছে নিন!
যখন উক্ত মহিলা অথবা মহিলারা- আপনিই আপনার পছন্দ বেছে নিন- কবরে পৌঁছলেন তখন তিনি/ তাঁরা ভূমিকম্প প্রত্যক্ষ করলেন এবং দেখলেন যে, ফেরেশতা স্বর্গ থেকে নেমে আসলেন (মথি ২৮/১)। অথবা তাঁরা হেটে কবরের মধ্যে প্রবেশ করলেন এবং দেখলেন যে, সাদা পোশাক পরিহিত একজন যুবক ডান দিকে বসে রয়েছে (মার্ক ১৬/৫)। অথবা উজ্জ্বল বস্ত্র পরা দুজন মানুষকে দেখলেন (লূক ২৪/৪)। আপনার পছন্দ বেছে নিন!
এ সময়ে কি হল? যোহন বলছেন যে, মরিয়ম দৌড়ে ফিরে যেয়ে পিতর ও অন্য শিষ্যকে ধরে আনলেন। আর অন্য তিন ইঞ্জিলের লেখক মরিয়মের কবর পরিত্যাগ করে ফিরে যাওয়া এবং কোনো পুরুষ শিষ্যকে নিয়ে ফিরে আসার বিষয় মোটেও উল্লেখ করেননি। যদি/ যখন তিনি/ তাঁরা ফিরে আসেন তখন ফেরেশতাটা (মার্ক ১৫/৬) অথবা ফেরেশতাগণ (লূক ২৪/৫) কী বললেন সে বিষয়ে ইঞ্জিল লেখকরা ত্রিবিধ বর্ণনা দিয়েছেন: (১) তিনি এখানে নেই, তিনি উত্থিত হয়েছেন, তিনি যেমন বলেছিলেন (মথি ২৮/৬), অথবা (২) তিনি এখানে নেই, তিনি উত্থিত হয়েছেন (মার্ক ১৫/৬; লূক ২৪/৬), অথবা (৩) নারী, তুমি কাঁদছ কেন? (যোহন ২০/১৩)। তখন মহিলাটা অথবা মহিলারা কবর থেকে দৌড়ে চলে গেলেন শিষ্যদেরকে এ কথা জানাতে (মথি ২৮/৮)। অথবা তারা ভীষণ ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে চলে গেলেন এবং কাউকে কিছুই বললেন না (মার্ক ১৬/৮)। আপনার পছন্দ বেছে নিন। ...
আমি দুঃখিত, এর পরে এ গল্পগুলো এমন ভয়ানকভাবে সাংঘর্ষিক হয়ে গিয়েছে যে, কোনোভাবেই সেগুলোকে একসাথে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তবে এতটুকুতেই চলবে। আপনি সূত্র পেয়ে গিয়েছেন। এখানে এত বেশি জাজ্বল্যমান বৈপরীত্য বিদ্যমান যে, একান্তই অযৌক্তিক প্রচারক ছাড়া আর কারো পক্ষে সেগুলোর সমন্বয় করা সম্ভব নয়। বিষয়টা এত বেশি সাংঘর্ষিক যে, চারটা বর্ণনাই সত্য বলে দাবি করা একান্তই হাস্যকর। আপনি দেখেছেন যে, চারটা বর্ণনা-ই সত্য হওয়া অসম্ভব।’’
উপসংহারে তিনি বলেন: “If you want to get a real sense of the inconsistencies in the narrative of the four gospels, start with the trial of Jesus, and compare the accounts in the gospels side by side, reading the account of each incident in the narrative in each gospel before going on to the next incident in the narrative. It will quickly become obvious just how inconsistent the Bible really is. As you do this, you'll come to realize just how imperfect this supposedly perfect document has to be. And as such, the reasonableness of one of the basic claims of the fundamentalist Christians, that of the inerrancy of the Bible, will evaporate like the dew on a summer morning.”
‘‘চার ইঞ্জিলের বিবরণের মধ্যে বিদ্যমান বৈপরীত্য বিষয়ে যদি আপনি বাস্তব চিত্র জানতে চান তবে যীশুর বিচার দিয়ে শুরু করুন এবং চার ইঞ্জিলের বর্ণনা পাশাপাশি তুলনা করতে থাকুন। প্রত্যেক ঘটনার বিষয়ে প্রত্যেক ইঞ্জিলের বিবরণ পুরোপুরি অধ্যয়ন করে এরপর অন্য ঘটনা অধ্যয়ন শুরু করুন। বাইবেল যে বাস্তবে কত বেশি পরস্পর-বিরোধী ও সাংঘর্ষিক তা শীঘ্রই আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। আপনি যখন এরূপ অধ্যয়ন করবেন তখন আপনিই অনুধাবন করবেন, যে পু্স্তককে ‘নিখুঁত’ বলে ধারণা করা হয় সে পুস্তকটা কত বেশি খুঁতসম্পন্ন! মৌলবাদী খ্রিষ্টানদের মৌলিক দাবিগুলোর অন্যতম দাবি হল: বাইবেল অভ্রান্ত। আর এ অধ্যয়নের মাধ্যমে বাইবেলীয় অভ্রান্ততার এ দাবি গ্রীষ্মকালীন সকালের শিশিরের মতই বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে।’’
‘যে সকল মৌলবাদী আমার এ প্রবন্ধ পড়ছেন তাদের জন্য একটা জ্ঞাতব্য ও একটা চ্যালেঞ্জ’ (A Note And A Challenge to Fundamentalists Who Read This Essay) অনুচ্ছেদে স্কট বিডস্ট্রাপ উল্লেখ করেছেন যে, অনেক ব্যক্তি ই-মেইলের মাধ্যমে দাবি করেছেন যে এ জগাখিচুড়ির সমাধান তাদের কাছে আছে। তিনি বলেন, সমাধান থাকার দাবি নয়, ক্রুশ ও পুনরুত্থান বিষয়ে চার ইঞ্জিল ও প্রেরিতগণের কার্যবিবরণের সকল বর্ণনা তথ্যনির্ভর ব্যাখ্যা দ্বারা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্যভাবে সমন্বিত করে দিলে তিনি তা তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন এবং নিজের মত পরিবর্তন করবেন। এছাড়া তাকে ১০,০০০ ডলার পুরস্কারও দেওয়া হবে। তবে ‘লিপিকারের ভুল’ জাতীয় কোনো সমাধান তিনি গ্রহণ করবেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন:
“If you concede that the Bible contains errors that have been made by translators or editors, then you can conceivably explain anything in it as a copyist, translational or editing error. That's an easy way out, that also has the effect of saying that since the Bible is actually does have errors in it, it can't reliably be considered to be the infallible word of God, either. If you want to take that easy way out, then you're not talking about the inerrant Bible that the fundamentalists claim I can pick up off of my local bookshop shelf. My essay is aimed at them, not you. So PLEASE don't bother to tell me that these are all translator's, copyist's and editor's errors. If it is going to be the reliable word of God, it has to be inerrant, and that means truly inerrant; i.e., devoid of all translational, copyist or editing errors.”
‘‘আপনি যদি স্বীকার করেন যে, বাইবেলের মধ্যে ভুলভ্রান্তি রয়েছে, যেগুলো অনুবাদক বা সম্পাদকদের সৃষ্ট, তবে আপনি অনুমেয়ভাবে বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান যে কোনো বিষয়কে লিপিকার, অনুবাদক বা সম্পাদকের ভুল বলে ব্যাখ্যা করতে পারেন। এটা একটা সহজ বহির্গমন পথ। কিন্তু এ দ্বারা এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, যেহেতু বর্তমান বাস্তবতায় বাইবেলের মধ্যে ভুলভ্রান্তি বিদ্যমান সেহেতু একে ঈশ্বরের অভ্রান্ত বাণী বলে নির্ভরযোগ্যভাবে মনে করা যায় না। অন্য কথায়, আপনি যদি এ সহজ বহির্গমন পথ গ্রহণ করতে চান, তাহলে মৌলবাদীরা যে অভ্রান্ত বাইবেলের কথা বলেন আপনি সে অভ্রান্ত বাইবেলের কথা বলছেন না। মৌলবাদীরা দাবি করেন যে, একটা অভ্রান্ত বাইবেল আমি স্থানীয় বইয়ের দোকান থেকে কিনতে পারব। আমার রচনা তাদের জন্য, আপনার জন্য নয়। কাজেই দয়া করে আমাকে বলবেন না যে, এগুলো অনুবাদক, লিপিকার বা সম্পাদকের ভুল। বাইবেলকে যদি ঈশ্বরের নির্ভরযোগ্য বাণী হতে হয় তবে একে অবশ্যই ভুলমুক্ত হতে হবে। আর সত্যিকার অর্থে ভুলমুক্ত হওয়ার অর্থ সকল প্রকারের অনুবাদ, অনুলিপি ও সম্পাদনার ভুল থেকেও মুক্ত থাকা।’’
খ্রিষ্টান প্রচারকদের অতি পরিচিত একটা অভ্যাস, যৌক্তিক ও তথ্যনির্ভর আলোচনার পরিবর্তে আবেগী প্রচার বা অভিশাপ। সাধারণত খ্রিষ্টান প্রচারকরা সবাইকেই বলতে চান: খ্রিষ্ট আপনার জন্য জীবন দিয়েছেন, আপনি তাঁকে গ্রহণ করবেন না? তাঁকে গ্রহণ করলেই আপনার মুক্তি! ঈশ্বর কত ভালবেসে আপনার জন্য পুত্রকে উৎসর্গ করেছেন! আপনি তাঁকে গ্রহণ না করলে অনন্ত ধ্বংসে পড়বেন! ইত্যাদি। এছাড়া প্রত্যেকেই দাবি করেন যে, ঈশ্বরের পক্ষ থেকে পবিত্র আত্মার নির্দেশে তিনি আপনাকে মুক্ত করতে এসেছেন!! স্কট বিডস্ট্রাপ বিষয়টা উল্লেখ করে বলেন:
“And finally, if you feel "called by God" to write to me and "bring me to Jesus," save yourself the trouble. Do you seriously think you're the first? My web site gets a lot of traffic (thousands of hits per day) and I get emails like that without exception with every single email session I download, and I'm getting awfully tired of hitting the delete button over and over and over. You're not making Christianity or Jesus any more appealing to me by pestering me about Jesus blessing me, or my impending residence in Hell, or doing the work of Satan, or my lack of reading the Bible in the "spirit," etc. Believe me, I've heard it all a thousand times before, and I'm not impressed. All you're doing by trying to evangelize me is to lend additional credence to my contention that Christianity is nothing more than a highly evolved and infective meme complex. So please, don't try to proselytize, evangelize or harangue me about the above issues. If you have something genuinely novel to offer, or are interested in genuine, open-minded debate, I welcome your response. But if your intent is to convert me into a follower of Jesus, or simply reiterate the same hopelessly inadequate explanations I've already listed here, forget it.”
‘‘আর সবশেষে বলি। যদি আপনি অনুভব করেন যে, ‘আমাকে যীশুর কাছে নেওয়ার জন্য’ আপনি ‘ঈশ্বরের পক্ষ থেকে আহূত হয়েছেন’, তবে আপনার প্রতি অনুরোধ, এ কষ্ট থেকে আপনাকে মুক্ত রাখুন। আপনি কি সত্যিকারভাবেই মনে করেন যে, আপনিই প্রথম এরূপ আহূত ব্যক্তি? আমার ওয়েবসাইটে প্রতি দিন এ জাতীয় হাজার হাজার মেইল আসছে। কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই প্রতিবার ই-মেইল ডাউনলোড করতে বসে আমি বারবার ডিলিট বাটন টিপতে টিপতে ভয়ানকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। ‘যীশু আমাকে আশীর্বাদ করছেন’, ‘নরক হবে আমার স্থায়ী আবাস’, ‘আমি শয়তানের কর্ম করছি’, ‘আমি ‘আত্মায়’ মগ্ন হয়ে বাইবেল পড়িনি বলে বুঝতে পারিনি’, ইত্যাদি কথা বলে আপনি খ্রিষ্টধর্ম বা যীশুকে আমার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য বানাতে পারছেন না। আমাকে বিশ্বাস করুন, আমি ইতোপূর্বে হাজার হাজার বার এ সকল কথা শুনেছি এবং তাতে আমি আকর্ষিত হইনি। আপনারা আমাকে খ্রিষ্টান বানাতে যত বেশি চেষ্টা করছেন, ততই আমার বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে যে, খ্রিষ্টান ধর্ম একটা উচু পর্যায়ে বিকশিত সংক্রমণশীল সামাজিক মনোবিকৃতি ভাইরাস ছাড়া কিছুই নয়। কাজেই, দয়া করে, আমাকে ধর্মে দীক্ষিত করতে, খ্রিষ্টান বানাতে বা উপরের বিষয়গুলো নিয়ে আমাকে লম্বা-চওড়া বক্তৃতা শুনাতে চেষ্টা করবেন না। যদি আপনার কাছে সত্যই কোনো অভিনব কিছু পেশ করার মত থাকে অথবা সত্যই যদি আপনি খোলা মনে বিতর্ক করতে চান তবে আমি আপনার উত্তরকে স্বাগত জানাব। কিন্তু যদি আপনি আমাকে যীশুর অনুসারীতে পরিণত করতে চান, অথবা আমি ইতোমধ্যে যে সকল ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছি সে জাতীয় নৈরাশ্যজনক ব্যাখ্যাগুলো পুনরুল্লেখ করতে চান তবে তা ভুলে যান।’’[2]
[2] http://www.bidstrup.com/bible2.htm