লগইন করুন
আমরা দেখলাম, যোহন বাপ্তাইজকের মাতা ইলীশাবেথ যীশুর মাতা মরিয়ম বা মেরির জ্ঞাতি বোন (cousin) ছিলেন (লূক ১/৩৬) এবং যোহন যীশুর চেয়ে মাত্র ছয় মাসের বড় ছিলেন (লূক ১/২৬)। যীশুকে গর্ভে নিয়ে মেরি ইলীশাবেথের বাড়িতে বেড়াতে যান। তখন ইলীশাবেথের গর্ভস্থ সন্তান যোহন আনন্দে মায়ের পেটের মধ্যেই নেচে উঠেন (লূক ১/৩৯-৪৪)। ইলীশাবেথও পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে যীশুকে প্রভু হিসেবে উল্লেখ করেন। এ থেকে আমরা জানছি যে, গর্ভে থাকা অবস্থাতেই যোহন যীশুকে চিনতেন। বিশেষত ইঞ্জিলে সুস্পষ্টতই বলা হয়েছে যে, যোহন ‘মায়ের গর্ভে থাকতেই পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হবে’ (লূক ১/১৫)। আর পবিত্র আত্মায় পূর্ণ ব্যক্তি যীশুর প্রকৃত পরিচয় জানবেন না এমন হতেই পারে না। এছাড়া জন্মের পর স্বভাবতই মায়ের নিকট থেকে যোহন যীশুর পরিচয় পেয়েছেন। তাঁর অলৌকিক জন্মের কথা এবং জন্মের সময় ফেরেশতা তাঁকে খ্রিষ্ট হিসেবে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তাও তিনি জেনেছিলেন।
কিন্তু অন্যত্র বলা হয়েছে যে, যীশুর পরিচয় যোহন জানতেন না। বাপ্তাইজ হওয়ার পর পবিত্র আত্মার অবতরণ দেখে তিনি তাঁর পরিচয় জানতে পারেন। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে যে, বাপ্তাইজের পরেও যীশুর পরিচয় যোহন জানতে পারেন নি।
মথি (৩/১৩-১৬) লেখেছেন: ‘‘ঈসা ইয়াহিয়া কর্তৃক বাপ্তিস্ম নেবার জন্য গালীল থেকে জর্ডানে তাঁর কাছে আসলেন। কিমত্মু ইয়াহিয়া তাঁকে বারণ করতে লাগলেন, বললেন, আপনার কাছে আমারই বাপ্তিস্ম নেয়া উচিত, আর আপনি কেন এসেছেন আমার কাছে?’’ এরপর অনেক কথার পরে ‘‘ঈসা বাপ্তিস্ম নিয়ে যখন পানি থেকে উঠলেন; আর দেখ, তাঁর জন্য বেহেস্ত খুলে গেল এবং তিনি আল্লাহর রূহকে কবুতরের মত নেমে তাঁর নিজের উপরে আসতে দেখলেন।’’ (মো.-১৩)
এ থেকে জানা গেল যে, রূহ অবতরণের পূর্ব থেকেই যোহন বা ইয়াহিয়া যীশুকে চিনতেন। কিন্তু যোহনের (ইউহোন্নার) বর্ণনায় ইয়াহিয়া বলেছেন যে তিনি খ্রিষ্টকে চিনতেন না, কিন্তু পাক-রূহকে তাঁর উপর কবুতরের মত নেমে আসতে দেখে তাঁকে চিনতে পেরেছেন: ‘‘আমি তাঁকে চিনতাম না, কিন্তু যিনি আমাকে পানিতে বাপ্তিস্ম দিতে পাঠিয়েছেন, তিনিই আমাকে বললেন, যাঁর উপরে রূহকে নেমে অবস্থিতি করতে দেখবে, তিনিই সেই ব্যক্তি।’’ (ইউহোন্না ১/৩২-৩৩, মো.-১৩)
মথি অন্যত্র লেখেছেন, ‘‘পরে ইয়াহিয়া কারাগারে থেকে মসীহের কাজের বিষয় শুনে তাঁর নিজের সাহাবীদের দ্বারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করে পাঠালেন, ‘যাঁর আগমন হবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি? না আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকবো?’’ (মথি ১১/২-৩)
এ থেকে জানা গেল যে, যীশুর উপর আত্মা অবতরণের পরেও যোহন তাকে চিনতে পারেন নি। বিষয়টা অদ্ভুত! মাতৃগর্ভ থেকে পবিত্র-আত্মায় পূর্ণ নবী ইয়াহিয়া বাপ্তিস্মের আগে বা পরে মাসীহকে চিনবেন, ঈশ্বরের পুত্র বলে সাক্ষ্য দিবেন এবং তার কিছুদিন পরেই সব ভুলে কারাগার থেকে যীশুর পরিচয় জানতে লোক পাঠাবেন!