লগইন করুন
২. ১৪. বাইবেলের অভ্রান্ততা
সম্মানিত পাঠক, পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে আমরা বাইবেলের প্রামাণ্যতা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে, বর্তমানে বিদ্যমান বাইবেলীয় পুস্তকগুলোকে সংশিস্নষ্ট নবী বা শিষ্যদের লেখা, ঐশী প্রেরণায় বা পবিত্র আত্মার প্রেরণায় লেখা বলে দাবি করার দালিলিক ভিত্তি পাওয়া যায় না। এগুলো অনেক পরের মানুষদের লেখা এবং আরো পরে সংশোধিত ও পরিমার্জিত গ্রন্থ বলে দাবি করার পক্ষে অনেক প্রমাণ বিদ্যমান। এজন্য আধুনিক যুগে বাইবেল বিশেষজ্ঞদের প্রায় সকলেই এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করছেন। তাদের উত্থাপিত প্রমাণাদির কিছু বিষয় আমরা উপরে আলোচনা করলাম।
তবে, এরপরও এ সকল প্রমাণকে পাশ কাটিয়ে একান্তই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে কেউ দাবি করতে পারেন যে, এ সকল পুস্তক সত্যই অভ্রান্ত ধর্মগ্রন্থ এবং সংশিস্নষ্ট নবী বা শিষ্যদের রচিত। কোনো ধর্মগ্রন্থ যদি কোনো বিশ্বাস পেশ করে তবে সে ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থের অনুসারীরা স্বভাবতই তা গ্রহণ করবেন এবং তার পক্ষে কথা বলবেন। তবে প্রশ্ন হল, বাইবেল কি কোথাও নিজেকে অভ্রান্ত বলে দাবি করেছে?
নতুন নিয়মের দু-একটা বক্তব্য দ্বারা অনেক খ্রিষ্টান ধর্মগুরু বা ধার্মিক মানুষ দাবি করেন যে, বাইবেল অভ্রান্ত (inerrant) এবং খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জন্য বাইবেলকে অভ্রান্ত বলে বিশ্বাস করা বাইবেলের নির্দেশ। এর বিপরীতে অনেক খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ও বাইবেল বিশেষজ্ঞ তাদের এ দাবি খণ্ডন করেছেন। তাদের মতে, বাইবেল কখনোই নিজেকে অভ্রান্ত ধর্মগ্রন্থ বলে দাবি করেনি এবং এরূপ বিশ্বাস বাইবেলের নির্দেশ নয়। বাইবেলীয় অভ্রান্ততা (Biblical Inerrancy) বর্তমানে খ্রিষ্টান ধর্মগুরুদের মধ্যে বিতর্কিত একটা বিষয়। আগ্রহী পাঠক এ শব্দদুটো লেখে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করলে অনেক বিষয় জানতে পারবেন। এছাড়া Bible Absurdities, Bible Atrocities ইত্যাদি সার্চ করতে পারেন। আমরা এখানে সংক্ষেপে বিষয়টা আলোচনা করব।
২. ১৪. ১. যীশু ও প্রেরিতগণের সাক্ষ্য
‘বাইবেলীয় অভ্রান্ততা’ বা ‘বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান সকল কথাই ঈশ্বরের বাক্য’ এ বিশ্বাস পোষণকারীরা তাদের বিশ্বাসের পক্ষে নিম্নরূপ প্রমাণ পেশ করেন:
২. ১৪. ১. ১. যীশু ও প্রেরিতগণের নীরবতা ও সরব সাক্ষ্য
যীশু ও তাঁর প্রেরিতগণ কখনোই পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলোর বিকৃতির কথা বলেননি। এগুলোতে কোনো বিকৃতি থাকলে তাঁদের দায়িত্ব ছিল তা বলা। তাঁদের এ নীরবতাই প্রমাণ করে যে, এগুলো তাঁদের সময়ে অভ্রান্ত ছিল। যীশু ও তাঁর প্রেরিতগণ এ সকল পুস্তক থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন এবং এগুলোকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। পুরাতন নিয়ম বুঝাতে তাঁরা তিনটা পরিভাষা ব্যবহার করতেন: (১) লিখিত বা ভাববাদী কর্তৃক লিখিত (written/ written by the prophet)[1], (২) শাস্ত্র, ধর্মগ্রন্থ বা কিতাব (the scripture/ scriptures)[2] এবং (৩) ব্যবস্থা ও ভাবাদীগণ অর্থাৎ তৌরাত ও নবীগণ (the law and the prophets)[3]। এতে প্রমাণ হয় যে, এ গ্রন্থগুলো তাদের সময়ে লিখিত ছিল এবং তাঁরা এগুলোকে শাস্ত্র বা ধর্মগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
২. ১৪. ১. ২. তৌরাত ও নবীদের স্থায়িত্বের ভবিষ্যদ্বাণী
যীশু এগুলোর স্থায়িত্বের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘‘মনে করিও না যে, আমি ব্যবস্থা কি ভাববাদিগ্রন্থ লোপ (destroy) করিতে আসিয়াছি (কি. মো.-০৬: ‘‘এই কথা মনে কোরো না, আমি তৌরাত কিতাব আর নবীদের কিতাব বাতিল করতে এসেছি); আমি লোপ করিতে আসি নাই, কিন্তু পূর্ণ (fulfil) করিতে আসিয়াছি। কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে পর্যন্ত আকাশ ও পৃথিবী লুপ্ত না হইবে, সে পর্যন্ত ব্যবস্থার এক মাত্রা কি এক বিন্দুও লুপ্ত হইবে না, সমস্তই সফল হইবে। অতএব যে কেহ এই সকল ক্ষুদ্রতম আজ্ঞার মধ্যে কোন একটা আজ্ঞা লঙ্ঘন করে, ও লোকদিগকে সেইরূপ শিক্ষা দেয়, তাহাকে স্বর্গরাজ্যে অতি ক্ষুদ্র বলা যাইবে; কিন্তু যে কেহ সে সকল পালন করে ও শিক্ষা দেয়, তাহাকে স্বর্গ-রাজ্যে মহান বলা যাইবে।’’ (মথি ৫/১৭-১০)।
যীশুর এ বক্তব্য থেকে তারা প্রমাণ করেন যে, তৌরাত ও নবীদের গ্রন্থ যীশুর যুগে যেভাবে বিদ্যমান ছিল পরবর্তী যুগেও সেভাবেই বিদ্যমান থাকবে।
[2] মথি ২১/৪২; ২২/২৯; ২৬/৫৪; ২৬/৫৬; মার্ক ১২/১০; ১২/২৪; ১৫/২৮; লূক ৪/২১; যোহন ২/২২; ৭/৩৮; ৭/৪২; ১০/৩৫; ১৩/১৮; ১৭/১২; ১৯/২৪; ১৯/২৮; ১৯/৩৬; ১৯/৩৭; ২০/৯; প্রেরিত ১/১৬; ৮/৩২; ৮/৩৫; রোমীয় ৪/৩; ৯/১৭; ১০/১১; ১১/২; গালাতীয় ৩/৮; ৩/২২; ৪/৩০; ১ তীমোথিয় ৫/১৮; ২ তীমোথিয় ৩/১৬; যাকোব ২/৮; ২/২৩; ৪/৫; ১ পিতর ২/৬; ২ পিতর ১/২০।
[3] মথি ৫/১৭; ৭/১২; ২২/৪০; লূক ১৬/১৬; যোহন ১/৪৫; প্রেরিত ১৩/১৫; রোমীয় ৩/২১।