লগইন করুন
নতুন নিয়মের ৫টা পুস্তক যীশু-শিষ্য যোহন (John) বা ইউহোন্না রচিত বলে প্রসিদ্ধ। এগুলোর মধ্যে চতুর্থ ইঞ্জিলটার বিষয় আমরা দেখেছি। এছাড়াও যোহনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পত্র এবং যোহনের নিকট প্রকাশিত বাক্য বা প্রকাশিত কালাম: নতুন নিয়মের ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৭ নং পুস্তকও যোহন লিখিত বলে মনে করা হয়।
চতুর্থ ইঞ্জিল প্রসঙ্গে আমরা দেখেছি যে, পুস্তকটা বেনামি বা লেখকের নামবিহীন। অনুরূপভাবে যোহনের নামে প্রচারিত পত্র তিনটাও বেনামি। এগুলোতে লেখকের কোনো নাম বা পরিচয় নেই। ‘Authorship of the Bible’ প্রবন্ধে উইকিপিডিয়া লেখছে: “In fact 1 John is anonymous, and 2 and 3 John identify their author only as `the Elder’.” : ‘‘প্রকৃত বাস্তবতায় যোহনের প্রথম পত্র বেনামি বা লেখকের নাম বিহীন। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পত্রে শুধু উল্লেখ করা হয়েছে যে, লেখক একজন মুরববী বা বয়স্ক মানুষ।’’
যোহনের নামে প্রচলিত তিনটা পত্রের রচনাকাল প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়া ‘Dating the Bible’ প্রবন্ধে লেখেছে: “90–110 CE. The letters give no clear indication, but scholars tend to place them about a decade after the Gospel of John.”: ‘‘৯০-১১০ খ্রিষ্টাব্দ। পত্রগুলো কোনো সুস্পষ্ট সময় নির্দেশ করে না। তবে গবেষকরা ধারণা করেন যে, যোহনের ইঞ্জিল রচনার এক দশক পরে এ পত্রগুলো রচিত।’’
যোহনের পত্রগুলোর প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় ৩য় বা ৪র্থ শতাব্দীতে লিখিত বাইবেলের সিনাই পাণ্ডুলিপির মধ্যে। (উইকিপিডিয়া, ‘Dating the Bible’)
নতুন নিয়মের সর্বশেষ পুস্তক: ‘The Revelation to John’। কেরির অনুবাদ: ‘যোহনের নিকটে প্রকাশিত বাক্য’, কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘প্রকাশিত কালাম’ এবং জুবিলী বাইবেল: ‘যোহনের কাছে প্রত্যাদেশ’। এ পুস্তকটা বেনামি নয়; বরং লেখক নিজের নাম ‘যোহন’ বলে উল্লেখ করেছেন। অনেক খ্রিষ্টান ধর্মগুরু তাকে যীশু-শিষ্য যোহন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু অন্যান্য ধর্মগুরু ও গবেষক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
‘John of Patmos’ বা প্যাটমসের যোহন প্রবন্ধে উইকিপিডিয়া লেখেছে:
“The author of the Book of Revelation identifies himself only as ‘John’. Traditionally, this was often believed to be the same person as John, son of Zebedee, one of the apostles of Jesus, to whom the Gospel of John was also attributed. The early 2nd century writer, Justin Martyr, was the first to equate the author of Revelation with John the Apostle. Other early Christian writers, however, such as Dionysius of Alexandria and Eusebius of Caesarea, noting the differences in language and theological outlook between this work and the Gospel, discounted this possibility, and argued for the exclusion of the Book of Revelation from the canon as a result. The assumption that the apostle John was also author of the Book of Revelation is now widely rejected in modern critical scholarship. The early Christian writer Papias appeared in his writings to distinguish between John the Evangelist and John the Elder, and many biblical scholars now contend that the latter was the author of Revelation.”
‘‘প্রকাশিত বাক্য পুস্তকের লেখক নিজেকে শুধু ‘যোহন’ বলে পরিচয় দিয়েছেন। গতানুগতিকভাবে অনেক সময় বিশ্বাস করা হয় যে, এ যোহনই যীশুর শিষ্য সিবদিয়ের পুত্র যোহন, যোহনের ইঞ্জিলটাও যার লেখা বলে মনে করা হয়। দ্বিতীয় শতকের প্রথম দিকের লেখক জাস্টিন মার্টারই প্রথম প্রকাশিত বাক্যের লেখক যোহন ও শিষ্য যোহন একই ব্যক্তি বলে মনে করেন। পক্ষান্তরে আলেকজান্দ্রিয়ার ডাইনোসিয়াস, কায়েসারিয়ার ইউসিবিয়াস প্রমুখ প্রাচীন খ্রিষ্টান লেখক এ ধারণা অগ্রাহ্য করেছেন। তারা লক্ষ্য করেছেন যে, যোহনের ইঞ্জিল এবং প্রকাশিত বাক্যের মধ্যে ভাষা ও ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য বিদ্যমান। আর এজন্যই তারা প্রকাশিত বাক্য পুস্তকটা নতুন নিয়ম থেকে বাদ দেওয়ার দাবি করেছেন। প্রকাশিত বাক্য পুস্তকটা যীশু-শিষ্য যোহন কর্তৃক রচিত হওয়ার ধারণা বর্তমান যুগের গবেষণায় ব্যাপকভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে। প্যাপিয়াস নামক প্রাচীন খ্রিষ্টান লেখক ইঞ্জিল লেখক যোহন ও মুরববী যোহন দুজন পৃথক ব্যক্তি বলে উপস্থাপন করেছেন এবং অনেক বাইবেল বিশেষজ্ঞ দাবি করেন যে, দ্বিতীয় ব্যক্তিই প্রকাশিত বাক্যের লেখক।’’
উইকিপিডিয়ার ‘Book of Revelation’ প্রবন্ধ এ প্রসঙ্গে লেখেছে:
“The author names himself as ‘John’, but it is extremely unlikely that the author of Revelation was also the author of the Gospel of John. Some of the evidence for this was set out as early as the second half of the 3rd century by Dionysius, archbishop of Alexandria, who noted that the gospel and the epistles attributed to John, unlike Revelation, do not name their author, and that the Greek of the gospel is correct and elegant while that of Revelation is neither; some later scholars believe that the two books also have radical differences in theological perspective. Tradition links him to John the Apostle, but it is unlikely that the apostle could have lived into the most likely time for the book's composition, the reign of Domitian, and the author never states that he knew Jesus. All that is known is that this John was a Jewish Christian prophet, ... His precise identity remains unknown, and modern scholarship commonly refers to him as John of Patmos. Early Church tradition dates the book to end of the emperor Domitian (reigned AD 81–96), and most modern scholars agree...”
‘‘লেখক উল্লেখ করেছেন যে, তার নাম যোহন। তবে প্রকাশিত বাক্যের লেখকই যোহনের ইঞ্জিলের লেখক ছিলেন বলে মনে করা একেবারেই অসম্ভাবনীয়। অনেক আগেই, তৃতীয় খ্রিষ্টীয় শতকের শেষার্ধেই আলেকজান্দ্রিয়ার প্রধান বিশপ ডায়োনিসিয়াস এ বিষয়ে কিছু প্রমাণ উল্লেখ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, যোহনের নামে প্রচলিত পত্রগুলো ও ইঞ্জিলটা প্রকাশিত বাক্য পুস্তকটার মত লেখকের নাম উল্লেখ করছে না এবং যোহনের ইঞ্জিলের গ্রিক বিশুদ্ধ এবং মার্জিত, কিন্তু প্রকাশিত বাক্য পুস্তকটার গ্রিক বিশুদ্ধও নয়, মার্জিতও নয়। পরবর্তী কতিপয় গবেষক বিশ্বাস করেন যে, ইঞ্জিল ও প্রকাশিত বাক্য দু’টা বইয়ের মধ্যে ধর্মতাত্ত্বিক বৈপরীত্য বিদ্যমান। গতানুগতিকভাবে এটাকে শিষ্য যোহনের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। কিন্তু এ বইটা রচনাকাল বিষয়ে সর্বোচ্চ সম্ভাবনাময় সময় সম্রাট ডোমিটিয়ানের রাজত্বকাল। আর এ সময় পর্যন্ত শিষ্য যোহনের বেঁচে থাকা অসম্ভাবনীয়। এছাড়া প্রকাশিত বাক্যের লেখক কখনোই বলেননি যে, তিনি যীশুকে চিনতেন। সর্বোচ্চ যা জানা যায় তা হল, এ পুস্তকের লেখক ‘যোহন’ খ্রিষ্টের অনুসারী একজন ইহুদি নবী ছিলেন। ... তাঁর সঠিক পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে। আধুনিক গবেষকরা তাকে ‘প্যাটমসের যোহন’ বলে আখ্যায়িত করেন। প্রাচীন খ্রিষ্টান চার্চ দাবি করেছে যে, এ পুস্তকটা সম্রাট ডোমিটিয়ানের যুগে (রাজত্ব ৮১-৯৬ খ্রি.) লেখা হয়েছিল। অধিকাংশ আধুনিক গবেষক তা মেনে নেন ....।
প্রকাশিত বাক্য পুস্তকটার বর্তমানে বিদ্যমান প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপির খণ্ডতে টুকরোটা (earliest known fragment) ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লেখা। (উইকিপিডিয়া, Dating the Bible)