লগইন করুন
ইঞ্জিলগুলোর বর্ণনা থেকে আমরা দেখি যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যীশুর কথার মধ্যে অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতা থাকত। এমনকি তিনি বুঝিয়ে না দিলে তাঁর যুগের মানুষেরা এবং তাঁর শিষ্যরাও অনেক সময় তাঁর কথা বুঝতে পারতেন না। এ প্রকার বক্তব্যের অনেক উদাহরণ রয়েছে। (লূক ৯/৪৪-৪৫; ১৮/৩১-৩৪; যোহন ৮/২৭; ১০/৬, ১২/১৬)। এখানে সামান্য দু-একটা নমুনা পেশ করছি।
গোঁড়া ইহুদিদের একটা ফিরকা ফরীশী (Pharisees) নামে প্রসিদ্ধ। ফরীশী ফিরকার একজন ইহুদি অধ্যক্ষ বা নেতা (ruler) ছিলেন নীকদীম (Nicodemus)। তিনি যীশুর নিকট এসে তাঁর সাথে কথা বলেন। যীশু নীকদীমকে বলেন: ‘‘সত্যি সত্যি, আমি তোমাকে বলছি, নতুন জন্ম না হলে কেউ আল্লাহ্র রাজ্য দেখতে পায় না।’’
নীকদীম যীশুর এই কথার অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে অক্ষম হন। তিনি বলেন: ‘‘মানুষ বৃদ্ধ হলে কেমন করে তার জন্ম হতে পারে. সে কি দ্বিতীয়বার মায়ের গর্ভে প্রবেশ করে জন্ম নিতে পারে?’’
তখন যীশু আবার তাঁর কথাটা তাঁকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু এবারেও নীকদীম বুঝতে অক্ষম হন। তিনি আবার প্রশ্ন করেন: ‘‘এসব কিভাবে হতে পারে? জবাবে ঈসা তাঁকে বললেন, ‘‘তুমি ইসরাইলের শিক্ষক হয়েও এসব বুঝতে পারছো না?’’... (যোহন/ ইউহোন্না ৩/১-১১, মো.-১৩)।
যোহন (ইউহোন্না) লেখেছেন: ‘‘এর পরে (যীশু) তাঁদেরকে বললেন, আমাদের বন্ধু লাসার ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু আমি ঘুম থেকে তাকে জাগাতে যাচ্ছি। তখন সাহাবীরা তাঁকে বললেন, প্রভু, সে যদি ঘুমিয়েই থাকে তবে রক্ষা পাবে। ঈসা তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বলেছিলেন, কিন্তু তাঁরা মনে করলেন যে, তিনি নিদ্রাজনিত বিশ্রামের কথা বলছেন। অতএব ঈসা তখন স্পষ্টভাবে তাঁদেরকে বললেন, লাসার ইন্তেকাল করেছে।’’ (ইউহোন্না/ যোহন ১১/১১-১৪, মো.-১৩)
এখানেও মাসীহের শিষ্যরা তাঁর কথা বুঝতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি স্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করার পরে তাঁরা বুঝলেন।
মথি ১৬ অধ্যায়ে বলা হয়েছে: ‘‘ঈসা তাদেরকে বললেন, তোমরা সতর্ক হও, ফরীশী (Pharisees) ও সদ্দূকীদের (Sadducees) খামি (leaven: খামির) থেকে সাবধান থাক। তখন তাঁরা পরস্পর তর্ক করে বলতে লাগলেন, আমরা যে রুটি আনিনি। এই কথা বুঝতে পেরে ঈসা বললেন, হে অল্প-বিশ্বাসীরা, তোমাদের রুটি নেই বলে কেন পরস্পর তর্ক করছো? ..... তোমরা কেন বোঝ না যে, আমি তোমাদেরকে রুটির বিষয় বলিনি? কিন্তু তোমরা ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামি থেকে সাবধান থাক। তখন তাঁরা বুঝতে পারলেন, তিনি রুটির খামি থেকে নয়, কিন্তু ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষা থেকে সাবধান থাকবার কথা বলেছেন।’’ (মথি ১৬/৬-১২, মো.-১৩)
এখানেও খ্রিষ্টের শিষ্যরা তাঁর কথা বুঝতে পারেননি। তিনি তাঁদের ধমক দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরেই তাঁরা তাঁর কথার অর্থ বুঝতে পারলেন।
যীশু যে মৃত বালিকাকে জীবিত করেন, তার বিষয়ে লূক ৮ অধ্যায়ে বলা হয়েছে: ‘‘তখন সকলে তার জন্য কাঁদছিল ও মাতম করছিল। তিনি বললেন, কেঁদো না; সে মারা যায় নি, ঘুমিয়ে রয়েছে। তখন তারা তাঁকে উপহাস করলো, কেননা তারা জনতো, সে ইন্তেকাল করেছে।’’ (লূক ৮/৫২-৫৩, মো.-১৩)
এখানেও সমবেত মানুষেরা তাঁর কথা বুঝতে না পেরে তাঁকে উপহাস করেন। পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখব যে, যীশুর বিভিন্ন বক্তব্যের ভিত্তিতে যীশুর শিষ্যরা প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাস করতেন যে, তাঁদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত ও পুনরুত্থান সংঘটিত হবে। বর্তমান যুগের খ্রিষ্টান গবেষকরা একমত যে, তাঁরা যীশুর কথার ভুল অর্থ বুঝেছিলেন। যোহনের সুসমাচারের শেষে স্পষ্টতই বলা হয়েছে যে, শিষ্য ও ভ্রাতৃগণ যীশুর বক্তব্যের অর্থ বুঝেননি।
এভাবে বাইবেলের বারবার বলা হয়েছে যে, যীশুর বক্তব্য শিষ্যরা ভালভাবে বুঝতে পারতেন না। এছাড়া অধিকাংশ শিষ্য উচ্চশিক্ষিত ছিলেন না। যীশুর মূল বক্তব্য তাঁর নিজের ভাষায় সংরক্ষিত না থাকার কারণে শিষ্যরা বা পরবর্তীরা কোন কথার কী অর্থ বুঝেছেন এবং কী অনুবাদ করেছেন তা আমরা জানতে পারছি না।