লগইন করুন
আমরা দেখেছি, প্রথম শতাব্দীতে ‘নতুন নিয়ম’ নামে কিছুই ছিল না। দ্বিতীয় শতাব্দীতে ইঞ্জিল নামে ও শিষ্যদের পত্র নামে অনেক পুস্তক বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এ শতাব্দীর কোনো পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় শতাব্দীর কোনো কোনো ধর্মগুরুর বক্তব্য থেকে ধর্মীয় পুস্তকের মধ্যে বিকৃতির প্রবল ধারার কথা জানা যায়।
সেন্ট ডায়োনিসিয়াস (St. Dionysius) খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ও প্রচারক। তিনি করিন্থের বিশপ ছিলেন। তাঁর মৃত্যু তারিখ জানা যায় না। তবে ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া উল্লেখ করেছে যে, তিনি ১৭০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে করিন্থের বিশপ ছিলেন।[1] ধর্মগ্রন্থের পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে বিকৃতি দ্বিতীয় শতাব্দীতেও কত ব্যাপক ছিল তা তাঁর লেখা থেকে জানা যায়। ডায়োনিসিয়াস বিভিন্ন চার্চে অনেকগুলো যাজকীয় পত্র (epistles) লেখেছিলেন।[2] নিজের লেখা পত্রের মধ্যে নিজের জীবদ্দশাতেই ব্যাপক বিকৃতি দেখে তিনি মন্তব্য করেন:
“As the brethren desired me to write epistles, I wrote. And these epistles the apostles of the devil have filled with tares, cutting out some things and adding others. For them a woe is reserved. It is, therefore, not to be wondered at if some have attempted to adulterate the Lord's writings also, since they have formed designs even against writings which are of less account.”
‘‘ভাতৃগণের ইচ্ছা অনুসারে আমি অনেকগুলো পত্র লেখেছিলাম। আর শয়তানের অনুসারীরা নোংরা বিষয় দিয়ে এ সকল পত্র ভরে দিয়েছে। কিছু বিষয় তারা বাদ দিয়েছে এবং কিছু বিষয় তারা সংযোজন করেছে। তাদের জন্য দুঃখই পাওনা। কাজেই, এতে কোনো অবাক হওয়ার কারণ নেই যে, কেউ কেউ আমাদের প্রভুর লেখনিগুলোকে বিকৃত করার চেষ্টা করবে। কারণ, তারা সেগুলোর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ পুস্তকাদি এভাবে বিকৃত করার পরিকল্পনা করেছে।’’[3]
আমরা জানি যে, ডায়োনিসিয়াসের পত্রগুলো ধর্মগুরুদের এবং চার্চগুলোর মধ্যেই প্রচারিত ছিল। ধর্মগুরু বা ধার্মিক মানুষেরাই এগুলো পাঠ ও অনুলিপি করতেন এবং বিকৃতিও তারাই করেছিলেন। প্রথম শতাব্দীগুলোর ধার্মিক খ্রিষ্টানরা প্রত্যেকে যা বুঝতেন সেটাকেই সঠিক বিশ্বাস ও পবিত্র আত্মার প্রেরণা বলে গণ্য করতেন। এজন্য ধর্মগ্রন্থের যে কথাগুলো তাদের কাছে অসম্পূর্ণ বা সঠিক বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে হত তাৎক্ষণিক তারা তা পরিবর্তন, সংযোজন বা বিয়োজনের মাধ্যমে ‘ঠিক’ করে দিতেন। এজন্যই এত দ্রম্নত ডায়োনিসিয়াসের পত্রগুলোও বিকৃত হয়ে যায়।
ডায়োনিসিয়াসের পত্রগুলোর ধর্মীয় গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত কম ছিল। সেগুলোর সংশোধনে যদি সে যুগের ধর্মগুরু বা ধার্মিক মানুষেরা এত তৎপর হন তবে এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যীশুর বিবরণ সম্বলিত তথ্যগুলোর অপূর্ণতা, অস্পষ্টতা বা বিভ্রান্তি পরিবর্তন, সংযোজন বা বিয়োজনের মাধ্যমে সংশোধন করতে তাদের অধিক তৎপর হওয়াই স্বাভাবিক। এছাড়া ডায়োনিসিয়াসের পত্রগুলো তাঁর জীবদ্দশায় অল্প পরিসরেই প্রচারিত হয়েছিল এবং অল্প সংখ্যক ধার্মিক মানুষের হাতে পড়েছিল। পক্ষান্তরে যীশুর নামে প্রচারিত তথ্যগুলো স্বভাবতই আরো অনেক বেশি প্রচারিত ছিল, বেশি মানুষের হাতে পড়েছে এবং বিকৃতি, পরিবর্তন বা সংশোধনও অনেক বেশি পরিমাণে হয়েছে। এজন্য আমরা দেখব যে, বাইবেলের পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে বৈপরীত্য ও ভিন্নতার পরিমাণ বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান শব্দের সংখ্যার চেয়েও বেশি!
[2] Eusebius, The Ecclesiastical History, page 158, 475.
[3] Eusebius, The Ecclesiastical History, page 160.