লগইন করুন
নতুন নিয়মের মধ্যে বিদ্যমান প্রেরিতদের কার্যবিবরণ ও শিষ্যদের পত্র থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অন্যান্য শিষ্যের অবস্থাও একইরূপ ছিল। প্রচলিত ইঞ্জিলগুলো লেখা না হলেও ইঞ্জিলে উদ্ধৃত যীশুর বক্তব্যগুলো তো প্রেরিত ও শিষ্যদের মধ্যে প্রচলিত থাকার কথা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রেরিতরা, শিষ্যরা ও প্রথম প্রজন্মের খ্রিষ্টানরা অনেক বিতর্ক করছেন, পুরাতন নিয়ম থেকে প্রমাণ পেশ করছেন, কিন্তু তাঁদের ত্রাণকর্তা যীশুর একটা বক্তব্যও উদ্ধৃত করছেন না। কয়েকটা নমুনা দেখুন:
(ক) অ-ইহুদিদের খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে অত্যন্ত উত্তপ্ত বিতর্ক হচ্ছে। পিতর ও পল পুরাতন নিয়ম থেকে অনেক অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য উদ্ধৃত করে অ-ইহুদিদের খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা দেওয়ার বৈধতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু ইঞ্জিলের মধ্যে বিদ্যমান যীশুর সর্বশেষ ও সর্বাধিক প্রসিদ্ধ নির্দেশের কথা কেউই বলছেন না।
ইঞ্জিলগুলোর বর্ণনা অনুসারে যীশু মৃত্যু থেকে পুনরুত্থানের পর তাঁর ১১ জন প্রেরিতকে নির্দেশ দেন, ‘‘তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতিকে সাহাবী কর; পিতার, পুত্রের ও পাক-রূহের নামে তাদেরকে বাপ্তিস্ম দাও।’’ (মথি ২৮/১৯-২০, মো.-১৩। পুনশ্চ: মার্ক ১৬/১৫; লূক ২৪/৪৭-৪৯)
প্রেরিতদের কার্যবিবরণের ১০ অধ্যায়ে আমরা দেখি যে, একটা স্বপ্নের ভিত্তিতে পিতর অ-ইহুদিদের মধ্যে ধর্মপ্রচার শুরু করেন। এ পুস্তকের ১১ অধ্যায়ে আমরা দেখি যে, যিরুশালেমের খ্রিষ্টধর্মীয় প্রধানরা পিতরের কর্মে আপত্তি করলে তিনি তাঁর স্বপ্নের কথা ও অলৌকিক কর্মের কথা জানান। এ পুস্তকের ১৫ অধ্যায়ে আমরা দেখি যে, এ বিষয়ে ‘প্রেরিতগণ ও খ্রিষ্টধর্মীয় প্রাচীনবর্গে’-র সম্মেলনে পিতর পুরাতন নিয়ম থেকে উদ্ধৃতি প্রদান করে নিজের মত সমর্থনের চেষ্টা করছেন। রোমীয় ও অন্যান্য পুস্তকে পল পুরাতন নিয়মের অনেক বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন অ-ইহুদিদের মধ্যে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের পক্ষে। কিন্তু সম্মেলনে উপস্থিত ১২ শিষ্য, পল, বার্নাবা বা অন্য কেউই ইঞ্জিলের মধ্যে উদ্ধৃত যীশুর এ বক্তব্যগুলোর কথা উল্লেখ করছেন না। মথি ও মার্ক ১২ প্রেরিতের দু’জন। তাঁরা তাঁদের ইঞ্জিলের মধ্যে যীশুর এ বক্তব্য লেখলেন, কিন্তু প্রেরিতদের সম্মেলনে এ বিষয়ে একটা শব্দও বললেন না! এর স্বাভাবিক ব্যাখ্যা এই যে, ইঞ্জিলগুলো অনেক পরে অজ্ঞাত লেখকদের দ্বারা প্রচলিত বা কাল্পনিক তথ্যের ভিত্তিতে লেখা। প্রেরিতরা এবং খ্রিষ্টধর্মের প্রথম প্রজন্মের ‘প্রাচীনবর্গ’ কেউই ইঞ্জিলগুলোর মধ্যে বিদ্যমান এ সকল কথা কিছুই জানতেন না।
(খ) পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখব যে, সাধু পল শরীয়ত ও তৌরাত পালনের বিরোধী ছিলেন। তিনি তাঁর মতের পক্ষে অনেক যুক্তি পেশ করেছেন এবং পুরাতন নিয়মের অনেক বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। যাকোব তাঁর পত্রে শরীয়ত ও তৌরাত পালনের পক্ষে অনেক যুক্তি দিয়েছেন এবং পলের দলিল খণ্ডন করেছেন। তবে যীশুর অতি প্রসিদ্ধ বক্তব্যগুলো একটাও উল্লেখ করেননি। মথির ইঞ্জিলের বর্ণনায় যীশু বলেন: ‘‘এই কথা মনে কোরো না, আমি তৌরাত কিতাব আর নবীদের কিতাব বাতিল করতে এসেছি.... তাই মূসার শরীয়তের মধ্যে ছোট একটা হুকুমও যে কেউ অমান্য করে এবং লোককে তা অমান্য করতে শিক্ষা দেয় তাকে বেহেশতি রাজ্যে সবচেয়ে ছোট বলা হবে। আমি তোমাদের বলছি, আলেম ও ফরীশীদের ধার্মিকতার চেয়ে তোমাদের যদি বেশী কিছু না থাকে তবে তোমরা কোনমতেই বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে না।’’ (মথি ৫/১৭-২০, মো.-০৬)
লূকের বর্ণনায় তিনি বলেন: ‘‘তবে তৌরাত শরীফের একটা বিন্দু বাদ পড়বার চেয়ে বরং আসমান ও জমীন শেষ হওয়া সহজ।’’ (লূক ১৬/১৭, মো.-০৬)
এ সকল বক্তব্য যাকোবের জানা থাকলে তিনি কি তা উদ্ধৃত না করে পুরাতন নিয়ম ও নানাবিধ যুক্তিতর্কের আশ্রয় নিতেন? যাকোবের বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট যে, তিনি এ সকল বক্তব্য যীশুর মুখ থেকে বা অন্য কারো মুখ থেকে কখনো শুনেননি।