লগইন করুন
বাইবেলের মূল ভাষা হিব্রু ও গ্রিক। এ ভাষাদ্বয়ে রচিত বাইবেল সহজপ্রাপ্য নয় এবং ভাষা দুটোও অত্যন্ত কঠিন। মধ্যযুগে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় গ্রিকভাষা থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত বাইবেলের উপরেই নির্ভর করত। ল্যাটিন ভাষা কারো মাতৃভাষা ছিল না। শুধু ধর্মগুরুরা এ ভাষা চর্চা করতেন। ফলে বাইবেল সম্পর্কে খ্রিষ্টান জনগণ কিছুই জানত না। ধর্মগুরুরা জনগণের ভাষায় বাইবেল অনুবাদের ঘোর বিরোধিতা করতেন। খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতকের শেষদিকে প্রসিদ্ধ ধর্মগুরু ‘John Wycliffe’- জন উইকলিফ (১৩৩০-১৩৮৮) সর্বপ্রথম বাইবেলকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন। এ অপরাধে খ্রিষ্টান চার্চের পক্ষ থেকে তাঁকে এবং তাঁর অনূদিত বাইবেলের পাঠকদেরকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারার শাস্তি প্রদান করা হয়। উইকলিফের মৃত্যু হওয়ার কারণে চার্চের নির্দেশে তাঁর মৃতদেহ কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ছাইগুলো নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।[1]
ক্যাথলিক চার্চ ও পোপ সাধারণের মধ্যে প্রচলিত কোনো ভাষায় বাইবেল অনুবাদের ঘোর বিরোধিতা করলেও খ্রিষ্টীয় ১৬শ শতকে প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মমত জোরালো হয় এবং তারা মাতৃভাষায় বাইবেল অনুবাদের পক্ষে ছিলেন। ইংল্যান্ডের প্রটেস্ট্যাস্ট রাজা জেমস ইংরেজিতে বাইবেল অনুবাদের জন্য খ্রিষ্টান ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে একটা কমিটি গঠন করেন। তাদের অনূদিত ও সম্পদিত বাইবেলটা ‘কিং জেমস বাইবেল’ বা কিং জেমস ভার্শন নামে প্রসিদ্ধ। ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে তা প্রকাশিত হয়।
এটা ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বর্তমান শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ৪ শত বছর ‘অথোরাইজড ভার্শন’ অর্থাৎ অনুমোদিত, স্বীকৃত বা নির্ভরযোগ্য সংস্করণ বলে গৃহীত। আমেরিকার খ্রিষ্টীয় চার্চ সম্মেলনী (the Division of Christian Education of the National Council of the Churches of Christ in the USA) ১৯৫২-১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপিগুলোর উপর নির্ভর করে রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্শন (The Revised Standard Version: RSV) প্রকাশ করে। এরপর এ সংস্করণের উপর নির্ভর করে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে নিউ রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্শন (the New Revised Standard Version: NRSV) এবং ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে ইংলিশ স্টান্ডার্ড ভার্শন (the English Standard Version: ESV) প্রকাশ করা হয়। ইহুদি ও খ্রিষ্টান বাইবেল গবেষকরা এ ভার্শনগুলোকে নির্ভরযোগ্য ও প্রাচীন পাণ্ডুলিপি নির্ভর বলে উল্লেখ করেছেন।
ইংরেজি অনুবাদ কতটুকু মূলাশ্রয়ী আমরা তা জানি না। ইংরেজি অনুবাদ বিষয়ক আপত্তি ও পর্যালোচনা সম্পর্কিত কিছু তথ্যের জন্য পাঠক নিম্নের ওয়েবসাইটটা দেখতে পারেন: http://www.rejectionofpascalswager.net/versions.html। তবে আমরা যেহেতু মূল হিব্রু বা গ্রিক ভাষা জানি না সেহেতু আমরা এ সকল ইংরেজি ভার্শনকেই মূল হিসেবে গণ্য করছি। আমরা দেখব যে, বাইবেলের হাজার হাজার পাণ্ডুলিপির একটার সাথে আরেকটার মিল নেই। বিশেষত নতুন নিয়মের একটা শ্লোকও দুটো পাণ্ডুলিপিতে অবিকল একরকম নয়। প্রতিটা শ্লোকেই পাণ্ডুলিপিগত বৈপরীত্য বিদ্যমান। আমরা আশা করি এ সমস্যার মধ্য থেকেই এ সকল স্বীকৃত ইংরেজি ভার্শনে মূল পাঠ যথাসম্ভব সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।