লগইন করুন
মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির অন্যতম বিষয় ‘আহলূল বাইত’ বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বংশধরদের বিষয়ে উম্মাতের দায়িত্ব ও বিশ্বাসের পরিধি নিয়ে। আমরা ইতোপূর্বে তৃতীয় অধ্যায়ে রিসালাতের বিশ্বাসের আলোচনা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আহলু বাইত ও সাহাবীগণের বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা দেখেছি। এ সকল নিদের্শের আলোকে সাহাবীগণ ও তাঁদের অনুসারী মূলধারার তাবিয়ীগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বংশের মানুষদের সম্মান করেছেন, ভালবেসেছেন ও ভক্তি করেছেন। পাশাপাশি দীন বুঝা ও পালনের ক্ষেত্রে কুরআন কারীম ও সুন্নাতের নববীর উপর নির্ভর করেছেন। নবী-বংশের জন্য কোনো বিশেষ ‘পবিত্রতা’ বা অধিকার প্রদান করেন নি। নবী-বংশের মানুষেরাও কখনোই এরূপ কিছু দাবি করেন নি।
উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতের সময় থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি প্রচারিত হতে থাকে, যা পরবর্তীকালে বিভক্তিতে রূপান্তরিত হয়। উসমান (রাঃ)-এর খিলাফাতকালে আব্দুল্লাহ ইবনু সাবা নামক একজন ইহূদী ইসলাম গ্রহণের দাবি করে। এ ব্যক্তি ও তার অনুসারীগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বংশধরদের মর্যাদা, ক্ষমতা, বিশেষত আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা, বিশেষ জ্ঞান, বিশেষ ক্ষমতা, অলৌকিকত্ব, তাকে ক্ষমতায় বসানোর প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয়ে ও উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর নিন্দায় অগণিত কথা বলতে থাকে। এ সব বিষয়ে অধিকাংশ কথা তারা বলতো যুক্তিতর্কের মাধ্যমে। আবার কিছু কথা তারা আকারে-ইঙ্গিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামেও বানিয়ে বলতে থাকে।
৩য়-৪র্থ হিজরী শতকের অন্যতম ফকীহ, মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনু জারীর তাবারী (৩১০ হি) ৩৫ হিজরীর ঘটনা আলোচনা কালে বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু সাবা ইয়ামানের ইহুদী ছিল। উসমান (রাঃ) এর সময়ে সে ইসলাম গ্রহণ করে। এরপর বিভিন্ন শহরে ও জনপদে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক কথা প্রচার করতে থাকে। হিজাজ, বসরা, কূফা ও সিরিয়ায় তেমন সুবিধা করতে পারে না। তখন সে মিশরে গমন করে। সে প্রচার করতে থাকে: অবাক লাগে তার কথা ভাবতে যে ঈসা (আঃ) পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন বলে বিশ্বাস করে, অথচ মুহাম্মাদ (ﷺ) পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন বলে বিশ্বাস করে না। .... হাজারো নবী চলে গিয়েছেন। প্রত্যেক নবী তাঁর উম্মতের একজনকে ওসীয়তের মাধ্যমে দায়িত্ব প্রদান করে গিয়েছেন। মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রদত্ত ওসীয়ত ও দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি আলী ইবনু আবী তালিব। ... মুহাম্মাদ (ﷺ) শেষ নবী এবং আলী শেষ ওসীয়ত প্রাপ্ত দায়িত্বশীল।... যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওসীয়ত ও দায়িত্ব প্রদানকে মেনে নিল না, বরং নিজেই ক্ষমতা নিয়ে নিল, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে। ...[1]
এ সকল মিথ্যাচারের ভিত্তিতে ‘আহলু বাইত’-এর ভালবাসা ও অধিকারের নামে শীয়াগণের বিভক্তি প্রকাশ পায়। তারা দাবি করে যে, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শাসনক্ষমতা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বংশধর হিসেবে আলী (রাঃ) ও তাঁর বংশধরদের পাওনা এবং তাঁদের ক্ষমতা ও অধিকারে বিশ্বাস, তাঁদের নিষ্পাপত্বে বিশ্বাস, তাঁদের অলৌকিক ক্ষমতা, গাইবী জ্ঞান ও অপার্থিব অধিকারে বিশ্বাস ইসলামী আকীদার অংশ।