লগইন করুন
আমরা দেখেছি যে, ফিরিশতাগণ, নবীগণ এবং আল্লাহর প্রকৃত বা কল্পিত প্রিয় বান্দাগণের শাফা‘আত লাভ এবং তাদের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছাই শিরকের অন্যতম কারণ। কুরআন কারীমে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে শাফা‘আতের আশায় তার শিরক করত তা যে তারা পাবে না। বারংবার কিয়ামতের দিবসে মুশরিকদের চরম অসহায় ও বান্ধবহীন অবস্থার কথা বলা হয়েছে।
আমরা জানি যে, যীশুখৃস্টের বা ঈসা মাসীহের (আঃ) প্রতি ভক্তির সর্বোচ্চ প্রমাণ দিতে তাঁর নামে নিজেদের নামকরণ করেছে খৃস্টানগণ বা মাসীহীগণ। ঈসা (আঃ)-এর ভক্তির নামে তাকে আল্লাহর শরীক বানিয়েছে তাঁরা। তাদের একটিই দাবি যে, ঈসা (আঃ) তাদের আখিরাতের কান্ডারী, মুক্তিদাতা বা ত্রাণকর্তা (savior)। অনুরূপভাবে আরবের মুশরিকগণ ফিরিশতাগণকে, জিন্নগণকে, কোনো কোনো নবীকে এবং মনগড়া অনেক আল্লাহর প্রিয় বান্দা বা সন্তানকে ইবাদত করেছে। তাদেরও বিশ্বাস যে, এরা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে শাফা‘আত করবেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য যে, এরা কেউই এদের জন্য শাফা‘আত করবেন না। এর অর্থ এ নয় যে, নবীগণ, ফিরিশতাগণ বা অন্যান্য নেক বান্দা শাফা‘আত করবেন না। তাঁরা শাফা‘আত করবেন শুধু তাদের জন্য যারা শিরক থেকে মুক্ত ছিল, যাদের ন্যূনতম তাওহীদে মহান আল্লাহ খুশি ছিলেন এবং যাদের বিষয়ে শাফা‘আত করতে মহান আল্লাহ তাদেরকে অনুমতি দিবেন।
এ বিষয়ক কিছু আয়াত আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি। এ অর্থে অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُونَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ مِنْ شُرَكَائِهِمْ شُفَعَاءُ وَكَانُوا بِشُرَكَائِهِمْ كَافِرِينَ
‘‘যেদিন কিয়ামত হবে সে দিন অপরাধিগণ হতাশ হয়ে পড়বে। তাদের শরীকগণের (উপাস্যগণের) মধ্য থেকে কেউ তাদের জন্য সুপারিশ করবে না এবং তারা তাদের শরীকগণকে অস্বীকার করবে।’’[1]
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا رَأَى الَّذِينَ أَشْرَكُوا شُرَكَاءَهُمْ قَالُوا رَبَّنَا هَؤُلاءِ شُرَكَاؤُنَا الَّذِينَ كُنَّا نَدْعُوا مِنْ دُونِكَ فَأَلْقَوْا إِلَيْهِمُ الْقَوْلَ إِنَّكُمْ لَكَاذِبُونَ وَأَلْقَوْا إِلَى اللَّهِ يَوْمَئِذٍ السَّلَمَ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَفْتَرُونَ
‘‘মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়েছিল তাদেরকে যখন তারা দেখবে তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক, এরাই তো তারা যাদেরকে আমরা তোমার শরীক বানিয়েছিলাম, যাদেরকে আমরা ডাকতাম তোমার পরিবর্তে। অতঃপর তদুত্তরে তারা (শরীকগণ বা উপাস্যগণ) বলবে: তোমরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। সে দিন তারা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করবে এবং যে মিথ্যা তারা উদ্ভাবন করেছিল তা তাদের জন্য নিষ্ফল হবে।’’[2]
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:
وَقِيلَ ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَرَأَوُا الْعَذَابَ لَوْ أَنَّهُمْ كَانُوا يَهْتَدُونَ
‘‘তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমাদের শরীকদেরকে ডাক’, তখন তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। হায়! তারা যদি সৎপথ অনুসরণ করত!’’[3]
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
وَيَوْمَ يَقُولُ نَادُوا شُرَكَائِيَ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ مَوْبِقًا
‘‘যে দিন তিনি বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে ডাক। তারা তখন তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না এবং তাদের উভয়ের মধ্যস্থলে রেখে দিব এক ধ্বংস-গহবর।’’[4]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَقُولُ أَأَنْتُمْ أَضْلَلْتُمْ عِبَادِي هَؤُلاءِ أَمْ هُمْ ضَلُّوا السَّبِيلَ قَالُوا سُبْحَانَكَ مَا كَانَ يَنْبَغِي لَنَا أَنْ نَتَّخِذَ مِنْ دُونِكَ مِنْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنْ مَتَّعْتَهُمْ وَآَبَاءَهُمْ حَتَّى نَسُوا الذِّكْرَ وَكَانُوا قَوْمًا بُورًا
‘‘এবং যেদিন তিনি একত্র করবেন তাদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করত তাদেরকে, এবং তিনি তাদের এ সকল উপাস্যকে বলবেন: তোমরাই কি আমার এ বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলে না তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল? তারা বলবে, ‘পবিত্র ও মহান তুমি! তোমার পরিবর্তে আমরা অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করতে পারি না। তুমিই তো এদেরকে এবং এদের পিতৃপুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলে, পরিণামে তারা ওহী বিস্মৃত হয়েছিল এবং পরিণত হয়েছিল এক ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে।’’[5]
কুরআন কারীমে আরো অনেক স্থানে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।[6]
[2] সূরা (১৬) নাহল: ৮৬-৮৭ আয়াত।
[3] সূরা (২৮) কাসাস: ৬৪ আয়াত।
[4] সূরা (১৮) কাহাফ: ৫২ আয়াত।
[5] সূরা (২৫) ফুরকান: ১৭-১৮ আয়াত।
[6] দেখুন: সূরা (৭) আ’রাফ: ৩৭ ও সূরা (১০) ইউনুস: ২৮-২৯ আয়াত।