লগইন করুন
শিরকের অন্যতম কারণ ছিল শয়তানের প্রতারণা। মহান আল্লাহ বলেন:
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ يَقُولُ لِلْمَلائِكَةِ أَهَؤُلاءِ إِيَّاكُمْ كَانُوا يَعْبُدُونَ قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُونِهِمْ بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ أَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُؤْمِنُونَ
‘‘যেদিন তিনি এদেরকে সকলকে একত্রিত করবেন এবং ফিরিশতাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘এরা কি তোমাদেরকেই ইবাদত করত?’ ফিরিশতারা বলবে, ‘তুমি পবিত্র, মহান! আমাদের সম্পর্ক তোমারই সাথে, তাদের সাথে নয়। তারা তো ইবাদত করত জিন্নদের এবং এদের অধিকাংশই ছিল তাদের প্রতি বিশ্বাসী।’’[1]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا رَأَى الَّذِينَ أَشْرَكُوا شُرَكَاءَهُمْ قَالُوا رَبَّنَا هَؤُلاءِ شُرَكَاؤُنَا الَّذِينَ كُنَّا نَدْعُوا مِنْ دُونِكَ فَأَلْقَوْا إِلَيْهِمُ الْقَوْلَ إِنَّكُمْ لَكَاذِبُونَ
‘‘মুশরিকগণ যাদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়েছিল (কিয়ামদের দিন) যখন তারা তাদেরকে দেখবে তখন বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক, এরাই তো তারা যাদেরকে আমরা তোমার শরীক বানিয়েছিলাম, যাদেরকে আমরা তোমার পরিবর্তে ডাকতাম। তখন তাদের কথার প্রতি-উত্তরে তারা বলবে: তোমরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’’[2]
এ সকল আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, জিন্ন শয়তানগণ এ সকল উপাস্যের বেশ ধরে এদের নিকট প্রকাশিত হতো, এদেরকে স্বপ্ন, কাশফ, অলৌকিক দর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করত, বিভিন্ন অলৌকিক কার্য করিয়ে দিত। এভাবে এ সকল মুশরিক মনে করত যে, তারা ফিরিশতাদেরই ইবাদত করছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা শয়তানের ইবাদত করত।
সাধারণভাবে শয়তান ধার্মিক মানুষদেরকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নেককার বুজুর্গদের বিষয়ে ভক্তির মাত্রা বাড়াতে বাড়াতে শিরকের মধ্যে নিপতিত করার জন্য প্ররোচনা দেয় বলে হাদীস শরীফ থেকে জানা যায়। নূহ (আঃ)-এর জাতির কুফর সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন:
وَقَالُوا لا تَذَرُنَّ آَلِهَتَكُمْ وَلا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلا سُوَاعًا وَلا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا
তারা বলল, ‘তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের ইলাহদেরকে (উপাস্যদেরকে), পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সূওয়া’আ, য়াগূস, য়া‘ঊক ও নাস্র-কে।’’[3]
হাদীস শরীফে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারি যে, প্রথম মানব সমাজ ছিল তাওহীদবাদী মুমিন মুসলিম। আদম (আঃ)-এর পরে কয়েক শতাব্দী এভাবেই মানুষ তাওহীদ ও ঈমানের উপর ছিল। এরপর আওলিয়া কেরামের ক্ষেত্রে অতিভক্তির কারণে ক্রমান্বয়ে সমাজে শিরকের শুরু হয়। সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে, তাফসীরে তাবারী ও অন্যান্য তাফসীরের গ্রন্থে এ বিষয়ক অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ সকল বর্ণনার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ: আদম সন্তানদের মধ্যে ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূস, ইয়াঊক ও নাসর - এই পাঁচ ব্যক্তি খুব নেককার বুজুর্গ মানুষ ছিলেন। তাঁদের অনেক অনুসারী, ভক্ত ও মুরীদ ছিলেন, যারা তাঁদের বিলায়েতের বিষয়ে খুবই উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। তাঁদের মৃত্যুর পরে তাঁদের বিষয়ে অতিভক্তিকারী কোনো কোনো অনুসারী শয়তানের ওয়াওয়াসায় বলেন: আমরা এদের মাজলিস বা স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলিতে এদের জন্য কিছু স্মৃতিচিহ্ন বা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে রাখি। আমরা যদি এঁদের ছবি বানিয়ে রেখে দিই তাহলে তা আমাদেরকে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করতে উৎসাহিত করবে। এরপর যখন এরাও মারা গেল তখন ইবলিস পরবর্তী যুগের মানুষদেরকে ওয়াসওয়াসা দিতে লাগল, তোমাদের পূর্ববর্তীগণ তো এঁদের শুধু শুধু ছবি করে রাখেননি। তারা তো এদের ‘ভক্তি’ করত এবং এদের ডাকার ফলেই তো তারা বৃষ্টি পেত। তখন সে যুগের মানুষেরা এঁদের পূজা করা শুরু করল।[4]
[2] সূরা (১৬) নাহল: ৮৬ আয়াত।
[3] সূরা (৭১) নূহ: ২৩ আয়াত।
[4] বুখারী, আস-সহীহ ৪/১৮৭৩, তাবারী, তাফসীর ২৯/৯৮-৯৯।