লগইন করুন
আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের একটি বিশেষ দিক তাঁর ‘হাকামিয়্যাত’ বা হুকুম, বিধান বা ফয়সালা দানের অধিকার ও ক্ষমতা। আল্লাহর মহান নামগুলির অন্যতম ‘আল-হাকাম’ অর্থাৎ বিচারক বা বিধানদাতা। যিনি প্রতিপালক তাঁরই অধিকার তার প্রতিপালিত সৃষ্টির জন্য বিধান প্রদান করার। মানুষ যেমন আপেক্ষিক অর্থে অন্যের রাবব বা প্রতিপালক হতে পারে, তেমনি আপেক্ষিক অর্থে বিধানদাতা, বিচারক ইত্যাদি হতে পারে। মহান আল্লাহর দেওয়া নির্দেশর আওতায় বা যেখানে তিনি মানুষের অধিকার দিয়েছে সেখানে মানুষ বিধান প্রণয়ন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে প্রশ্নাতীত ও সামগ্রিক অধিকার ও ক্ষমতা একমাত্র মহান আল্লাহর। একমাত্র স্রষ্টা ও সর্বজ্ঞ মহাজ্ঞানী প্রতিপালক হিসেবে তিনিই জানেন সৃষ্টির কল্যাণ কিসে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আর্ন্তজাতিক সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহকে একমাত্র হাকাম বা বিচারক ও বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করা তাওহীদুর রুবূবিয়্যাতের অংশ। আর তাঁর উলূহিয়্যাতের দাবি যে, বান্দা তাঁর হুকুমের আনুগত্য করবে। এজন্য আনুগত্য ইবাদতের অন্যতম প্রকাশ। মহান আল্লাহ বলেন:
أَفَغَيْرَ اللَّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا وَهُوَ الَّذِي أَنْزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلا
বল, ‘তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে হুকুমদাতা মানব? যদিও তিনিই তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।’’[1]
অন্যত্র তিনি বলেন:
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ
‘‘তারা কি জাহিলীযুগের বিধিবিধান কামনা করে? দৃঢ়প্রতয়ী বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধান দানে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর আর কে?’’[2]
আল্লাহর বিধানবালি তাঁর রাসূলের (ﷺ) মাধ্যমেই পাওয়া যায়। তিনি যে বিধান প্রদান করেন তাই আল্লাহর বিধান। কাজেই তাঁর সকল বিধান সর্বান্তকরণে মেনে নেওয়াই ঈমান। আল্লাহ বলেন:
فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
‘‘কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার তোমার উপর অর্পন না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে না নেয়।’’[3]
তাওয়াক্কুল, ভয়, আশা ও ভালবাসার ন্যায় আনুগত্যেরও লৌকিক ও অলৌকিক দুটি পর্যায় রয়েছে। ‘অলৌকিক বিশ্বাসজাত আনুগত্য’ একমাত্র মহান আল্লাহরই নিমিত্ত। অন্য কাউকে এরূপ আনুগত্য করলে তা শিরক বলে গণ্য হবে। মহান আল্লাহ বলেন;
وَلا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ
‘‘যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় নি তার কিছুই ভক্ষণ করো না। তা অবশ্যই পাপ। শয়তান তার বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়; যদি তোমর তাদের আনুগত্য কর তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হবে।’’[4]
এখানে কাফিরদের আনুগত্য করাকে শিরক্ বলা হয়েছে। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لا إِلَهَ إِلا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
‘‘তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পন্ডিতগণকে এবং সংসার-বিরাগীগণকে রবব-প্রতিপালক রূপে গ্রহণ করেছে, এবং মরিয়ম তনয় মাসীহকেও। কিন্তু তারা শুধু এক ইলাহের ইবাদত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিল। তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তারা যা শরিক করে তা থেকে তিনি কত পবিত্র!’’[5]
ইহূদী-খৃস্টানদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি যে, বিভিন্নভাবে তারা আলিম ও দরবেশদেরকে ‘রাবব’ হিসেবে গ্রহণ করেছে:
(১) তারা বিশ্বাস করত যে, আলিম, দরবেশ, সাধু বা সেন্টগণ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। বিশেষত মৃত্যুর পরে তারা অলৌকিক কল্যাণ, অকল্যাণ ও বিশ্ব পরিচালনার ক্ষমতা লাভ করেন। এজন্য তারা এ সকল সেন্ট, সান্তা বা সাধুদের মুর্তি তৈরি করত, তথায় মানত, নযর বা ভেট প্রদান করত, তাদের কবরের নিকট ইবাদতগাহ তৈরি করত এবং তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান থেকে ‘বরকত’ লাভের জন্য সচেষ্ট থাকত। তাদের ধর্মীয় ইতিহাস এবং বিভিন্ন হাদীস থেকে বিষয়গুলি জানা যায়।
(২) তারা পোপ-পাদরিগ ও সাধুদের ‘ইসমাত’ বা অভ্রান্ততায় (infallibility) বিশ্বাস করত। তারা বিশ্বাস করত ও করে যে, পবিত্র আত্মার প্রেরণায় তারা কাশফ, ইলহাম ও ইলমু লাদুন্নী লাভ করেন। সেগুলির আলোকে তারা ধর্মের যে বিধান প্রদান করেন তাই চূড়ান্ত। তাদের সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে না। সাধারণ মানুষদের জন্য ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন বা ধর্মীয় বিধান জানা সম্ভব নয়। ‘বাইবেলে’ কি আছে বা নেই তা বড় কথা নয়। পোপ বা ধর্মগুরুগণ কি ব্যাখ্যা বা নির্দেশ দিলেন তাই বড় কথা। এ সকল পোপ-পাদরি কখনোই সরাসরি ধর্মগ্রন্থের গুরুত্ব অস্বীকার করত না। সাধারণত তারা ‘ইল্লাত’ ও ‘হিকমাত’ বা কারণ ও দর্শন দেখিয়ে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করত ও করে। এ বিষয়টি অমুক কারণে ফরয বা হারাম করা হয়েছে, কাজেই অমুক বা তমুক কারণে তা তোমার জন্য বা সকলের জন্য এখন হালাল বা হারাম। সাধারণ অনুসারীরা তাদের এরূপ বিধানকে চূড়ান্ত বলে মেনে নিত।
এভাবে তারা রুবূবিয়্যাত বা প্রতিপালনের বিষয়ে আলিম ও দরবেশদেরকে আল্লাহর শরীক বানাতো। আর প্রতিপালনের শিরক আবশ্যম্ভাবীভাবে ইবাদতের শিরকে নিপতিত করে। তাদের অলৌকিক ক্ষমতার বিশ্বাসের কারণে তারা তাদেরকে ডাকত ও তাদের জন্য মানত উৎসর্গ ইত্যাদি ইবাদত করত। অনুরূপভাবে তাদের ‘ইসমাত’ ও হাকামিয়্যাতের বিশ্বাসের কারণে তারা তাদের চূড়ান্ত ও নিঃশর্ত আনুগত্য করত। কুরআনের বক্তব্য থেকে তাদের এ দু প্রকারের শিরকই সুস্পষ্ট। আয়াতের প্রথমে তাদের রুবূবিয়্যাতের শিরকের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এবং শেষে ইবাদতের শিরকের কথা বলা হয়েছে। একটি যয়ীফ সনদের হাদীস থেকে তাদের এ শিরকের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু জানা যায়।
গুতাইফ ইবনু আ‘ইউন (غطيف بن أعين) নামক দ্বিতীয় শতকের একজন অজ্ঞাত-পরিচয় তাবি-তাবিয়ী বলেন, প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মুসআব ইবনু সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (১০৩ হি) তাকে বলেছেন, সাহাবী আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) বলেন,
سَمِعْتُ رسول الله (ﷺ) يَقْرَأُ فِي سُورَةِ بَرَاءَةٌ ( اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ ) قَالَ أَمَا إِنَّهُمْ لَمْ يَكُونُوا يَعْبُدُونَهُمْ وَلَكِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا أَحَلُّوا لَهُمْ شَيْئًا اسْتَحَلُّوهُ وَإِذَا حَرَّمُوا عَلَيْهِمْ شَيْئًا حَرَّمُوهُ
‘‘আমি শুনলাম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সূরা তাওবায় পাঠ করছেন: ‘তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পন্ডিতগণকে এবং সংসার-বিরাগীগণকে রবব-মালিক রূপে গ্রহণ করেছে’। তিনি বললেন, ইহূদী-খৃস্টানগণ তাদের (আলিম-দরবেশদের) ইবাদত করত না বটে, কিন্তু তারা যখন তাদের জন্য কোনো কিছু হালাল করে দিত, তখন তারা তাকে হালাল বলে মেনে নিত। আর তারা যখন তাদের উপর কোনো কিছু হারাম করে দিত, তখন তারা তা হারাম বলে মেনে নিত।’’[6]
ইমাম তাবারী তাঁর তাফসীরে গুতাইফের সূত্রে হাদীসটি সংকলন করেছেন। তার বর্ণনায় হাদীসটির ভাষা নিম্নরূপ:
قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا لَسْنَا نَعْبُدُهُمْ فَقَالَ أَلَيْسَ يُحَرِّمُوْنَ مَا أَحَلَّ اللهُ فَتُحَرِّمُوْنَهُ وَيُحِلُّوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ فَتُحِلُّوْنَهُ؟ قَالَ قُلْتُ بَلَى قَالَ فَتِلْكَ عِبَادَتُهُمْ
‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে উক্ত আয়াতটি পাঠ করতে শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো তাদের ইবাদত করি না! তিনি বলেন, আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারা তা তোমাদের জন্য হারাম করলে তোমরা কি তা হারাম বলে গ্রহণ কর না? আর আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারা তা হালাল করলে তোমরা কি তা হালাল বলে মেনে নাও না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, এ-ই হলো তাদের ইবাদত করা।’’[7]
হুযাইফা (রাঃ), ইবনু আববাস (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী বলেছেন যে, ইহূদী খৃস্টানদের পন্ডিত-দরবেশগণ যখন আল্লাহর বিধান উল্টে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করত তখন তারা তা মেনে নিত। আর এই আনুগত্যই ছিল তাদের ‘রবব’ মানা।[8]
এখানে লক্ষণীয় যে, ‘আনুগত্য’ও ভয়, ভালবাসা ইত্যাদির মত স্বাভাবিক কর্ম। সাধারণভাবে তা ইবাদত নয়। এজন্য আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত শিরক হলেও আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য অবৈধ নয়। ইসলামী নির্দেশের বিপরীত নয় এমন বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য ইসলামে বৈধ বরং নির্দেশিত। কুরাআন-হাদীসে পিতামাতা, শাসক- প্রশাসক, আলিম-উলামা প্রমুখের আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দীনের বিধান না জানলে আলিমদেরকে জিজ্ঞাসা করে পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলামী নির্দেশের বিপরীত কোনো মানুষের আনুগত্য করলে তাতে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার পাপ হবে, তবে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করার অপরাধ হবে না। যদি মানবীয় ভালবাসা, ভয়, লোভ ইত্যাদি কারণে কারো নির্দেশ মত আল্লাহর বিধানের বিরোধী কাজ করে তবুও তা শিরক বলে গণ্য হবে না। আমরা দেখেছি যে, এরূপ ভয়জনিত আনুগত্যের ভিত্তিতে শিরক বা কুফরী কর্মে লিপ্ত হলেও তা শিরক-কুফর বলে গণ্য হবে না।
পক্ষান্তরে কাউকে প্রশ্নাতীত চূড়ান্ত আনুগত্যের যোগ্য বলে বিশ্বাস করে তার আনুগত্য করলেই শুধু তা শিরক বলে গণ্য হবে। যেমন মনে করা যে, কুরআন-হাদীসে যা-ই থাক, অমুক যেহেতু বলেছেন যে, এ কর্মটি আমার জন্য হালাল কাজেই তা আমার জন্য হালাল হয়ে গিয়েছে। অনুরূপভাবে যদি কেউ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ বা তাঁর রাসূলের নির্দেশে যাই থাক না কেন, অমুক ব্যক্তি, আলিম, রাজা বা পার্লামেন্ট যা হালাল বলেছে তা প্রকৃতই হালাল এবং যা নিষিদ্ধ করেছে তা প্রকৃতই হারাম তাহলেও তা শিরক্ হবে। এক্ষেত্রেও মূলত বিশ্বাসই শিরক, কর্ম নয়।
এভাবে আমরা দেখছি যে, আনুগত্যও শিরক হতে পারে, যদি তা ইবাদত পর্যায়ের বা ‘চূড়ান্ত বিনয়-ভক্তি’ হিসেবে হয়। ইহূদী খৃস্টানদের আনুগত্য ছিল এ পর্যায়ের আনুগত্য। শয়তানের বন্ধু বা মুশরিকদের আনুগত্যের বিষয়টিও একইরূপ। এখানে আনুগত্য কর্মে নয়, বিশ্বাসে। এখানে আনুগত্য হলো মৃত প্রাণীর মাংস ভক্ষণ বৈধ বলে বিশ্বাস করা।
আনুগত্যের শিরকের বর্ণনা দিয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ (রাহ) বলেন: মুশরিকগণ তাদের আলিমগণ ও নেককার আবিদগণকে রাবব বা মালিক ও প্রতিপালন হিসেবে গ্রহণ করত। এর অর্থ এই যে, তারা এ আকীদা পোষণ করত যে, এ সকল আলিম বা বুজুর্গ যা হালাল বলেন তা প্রকৃতপক্ষেই হালাল ও বৈধ। আর যা কিছু এ সকল আলিম ও বুজুর্গ হারাম করেন তা প্রকৃতই নিষিদ্ধ, হারাম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ... এর রহস্য এই যে, কোনো বিষয়কে হালাল বা বৈধ করা এবং হারাম বা অবৈধ করার অর্থ সৃষ্টির রাজত্বে এরূপ কার্যকর নিয়ম সৃষ্টি করা যে, অমুক কাজটি করলে তাতে শাস্তি পেতে হবে এবং অমুক কাজটি করলে তাতে শাস্তি পেতে হবে না। এরূপ সৃষ্টি ও পরিচালনা একমাত্র আল্লাহরই বিশেষণ এবং তাঁর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
এখানে দুটি প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রথমত, কিভাবে একথা বলা হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অমুক বিষয় হালাল করেছেন বা হারাম করেছেন? দ্বিতীয়ত, কিভাবে বলা হয় যে, অমুক ইমাম বা মুজতাহিদ একে হালাল বা হারাম বলেছেন?
এর উত্তর হলো, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বক্তব্য বা নির্দেশনা আল্লাহর নির্দেশনা জানার সুনিশ্চিত প্রমাণ। যখন তিনি বলেন যে, অমুক বিষয় হালাল বা হারাম তখন নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, আল্লাহ তা হালাল বা হারাম করেছেন। আর মুজতাহিদদের বিষয় হলো, তাঁরা আল্লাহর ওহী থেকে বা ইজতিহাদের মাধ্যমে হালাল হারামের বিধানটি অবগত করান মাত্র।
এখানে উল্লেখ্য যে, যখন আল্লাহ কোনো রাসূল প্রেরণ করেন এবং মুজিযার মাধ্যমে তাঁর রিসালতের দায়িত্ব প্রমাণিত হয় এবং তাঁর জবানীতে আল্লাহ পূর্ববর্তী শরীয়তের কোনো হারাম বিষয় হালাল করেন তখন যদি কারো অন্তরে বিধানটি গ্রহণ করতে দ্বিধা ও আপত্তি দেখা যায় তবে তা দুটি কারণে হতে পারে। প্রথম কারণটি এরূপ হতে পারে যে, উক্ত ব্যক্তির অন্তরে নতুন বিধানটি প্রামাণ্যতায় সন্দেহ থাকবে। এক্ষেত্রে সে উক্ত রাসূলের রিসালতে অবিশ্বাসকারী বা কাফির বলে গণ্য হবে।
এরূপ দ্বিধা ও আপত্তির দ্বিতীয় কারণটি এরূপ হতে পারে যে, উক্ত ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, প্রথমে যে হারামের বিধানটি দেওয়া হয়েছিল তা রহিত বা পরিবর্তন করা যায় না। কারণ যে ব্যক্তির মাধ্যমে বিধানটি পাওয়া গিয়েছিল সে ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহ ‘উলূহিয়্যাত’ বা ‘ঈশ্বরত্বের’ কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন। অথবা তিনি মহান আল্লাহর মধ্যে ফানা বা বিলুপ্ত হয়েছিলেন এবং তারই সাথে ‘বাকা’ বা অস্তিত্ব পেয়েছিলেন। কাজেই তিনি যে কাজটি নিষেধ করেছেন, অথবা অপছন্দ করেছেন তার বিরোধিতা করলে সম্পদ বা সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। এরূপ ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত। কারণ সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্তা বা ব্যক্তির ‘পবিত্র ক্রোধ ও বিরক্তি’ আছে বলে বিশ্বাস করে এবং বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা সত্তা ‘পবিত্র বা অলঙ্ঘনীয়’ হালাল বা হারামের বিধান দিতে পারেন।[9]
[2] সূরা (৫) মায়িদা: ৫০ আয়াত।
[3] সূরা (৪) নিসা:
[4] সূরা আন‘আম, ১২১ আয়াত।
[5] সূরা তাওবা, ৩১ আয়াত।
[6] তিরমিযী, আস-সুনান ৫/২৭৮। তিনি বলেন, ‘‘হাদীসটি গরীব ... গুতাইফ ইবনু আইউন হাদীস বর্ণনায় পরিচিত নয়।
[7] তাবারী, তাফসীর ১০/১১৪।
[8] তাবারী, তাফসীর ১০/১১৪-১১৫।
[9] শাহ ওয়ালি উল্লাহ, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১/১৮৬-১৮৭।