লগইন করুন
আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, জাগতিক ও আপেক্ষিক অর্থে মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ‘অমুকের পালনকর্তা’, মালিক বা মনিব অর্থে ‘অমুকের ‘রাবব’ বলা যায়। অনুরূপভাবে জাগতিক দাসত্ব অর্থে একজনকে অন্যের ‘আব্দ’ অর্থাৎ বান্দা, দাস বা চাকর বলা যায়। তবে এরূপ শব্দ ব্যবহার না করতে হাদীস শরীফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এতে শব্দের মধ্যে শিরক হয়ে যায়, যদিও বিশ্বাসে শিরক না থাকে। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
لا يَقُلْ أَحَدُكُمْ أَطْعِمْ رَبَّكَ وَضِّئْ رَبَّكَ اسْقِ رَبَّكَ وَلْيَقُلْ سَيِّدِي مَوْلايَ وَلا يَقُلْ أَحَدُكُمْ عَبْدِي أَمَتِي-كُلُّكُمْ عَبِيدُ اللَّهِ وَكُلُّ نِسَائِكُمْ إِمَاءُ اللَّهِ- وَلْيَقُلْ فَتَايَ وَفَتَاتِي وَغُلامِي.
‘‘তোমাদের কেউ (মালিককে ‘রাবব’ বলবে না), বলবে না: তোমার রাববকে খাবার দেও, তোমার রাববকে ওযূ করাও, তোমার রাববকে পানি পান করাও। বরং সে যেন (মালিককে) সাইয়েদী অর্থাৎ আমার নেতা, মাওলাইয়া অর্থাৎ আমার অভিভাবক বলে। আর তোমাদের কেউ (নিজের দাস বা চাকরকে) ‘আমার বান্দা’ বা আমার বান্দি বলবে না, কারণ তোমরা সকলেই তো আল্লাহর বান্দা এবং তোমাদের সকল নারীই তো আল্লাহর বান্দি। বরং বলবে: আমার যুবক বা ছেলে, আমার যুবতী বা মেয়ে বা আমার বালক।’’[1]
এভাবে আমরা দেখছি যে, মালিককে রাবব বলা এবং দাস বা চাকরকে ‘বান্দা’ বলা মূলত বৈধ হলেও শব্দের শিরকের কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা বর্জন করতে উৎসাহ দিয়েছেন।
এভাবে আমরা দেখছি যে, সাধারণ শব্দ ব্যবহারের মধ্যেও অনেক আদব ও শিরকের বিষয় রয়েছে, যা শিরক আকবার না হলেও শিরক আসগর বলে গণ্য হতে পারে। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শিরক থেকে সতর্ক থাকতে এবং সর্বদা শিরক থেকে তাওবা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا هَذَا الشِّرْكَ فَإِنَّهُ أَخْفَى مِنْ دَبِيبِ النَّمْلِ فَقَالَ لَهُ مَنْ شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقُولَ وَكَيْفَ نَتَّقِيهِ وَهُوَ أَخْفَى مِنْ دَبِيبِ النَّمْلِ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ قُولُوا اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ نُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لا نَعْلَمُ
‘‘হে মানুষেরা, শিরক থেকে আত্মরক্ষা কর; কারণ শিরক পিপিলিকার পদক্ষেপের চেয়েও সুক্ষ্মতর। তখন একব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, তা যদি পিপিলিকার পদক্ষেপের চেয়েও সুক্ষ্মতর হয় তবে কিভাবে তা থেকে আত্মরক্ষা করব? তিনি বলেন, তোমরা বলবে; হে আল্লাহ, আমরা জেনেশুনে আপনার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং যা না জানি তা থেকে আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’’[2]
[2] আহমদ, আল-মুসনাদ ৪/৪০৩; মাকদিসী, আল-আহাদীস আল-মুখতারাহ ১/১৫০; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/২২৩-২২৪; আলবানী, সাহীহুত তারগীব ১/৯। হাদীসটির সনদ হাসান।