লগইন করুন
কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা আখিরাত বা পরকালীন জীবনের বিভিন্ন দিক জানতে পারি, যেগুলি আমাদের বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলির মধ্যে রয়েছে মৃত্যুর পরে কিয়ামত বা পুনরুত্থানের আগে মধ্যবর্তী সময়ের অবস্থা। মহান আল্লাহ বলেন:
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآَخِرَةِ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ
‘‘যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ শাশ্বত বাণীতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন ইহজীবনে এবং পরজীবনে এবং যারা জালিম আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।’’[1]
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, ইহজীবনের ন্যায় পরজীবনেও শাশ্বত বাণীর উপর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আছে। বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় যে পরকালীন জীবনের শুরুতেই কবরে ‘মুনকার-নাকীর’ নামক মালাকদ্বয়ের প্রশ্নের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠা প্রমাণিত হবে।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنْتُمْ عَنْ آَيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ
‘‘যদি তুমি দেখতে, যখন জালিমগণ মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকবে এবং মালাকগণ হাত বাড়িয়ে বলবে: ‘তোমাদের প্রাণ বের কর, তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে অন্যায় বলতে ও তাঁর নিদর্শন সম্বন্ধে ঔদ্ভত্য প্রকাশ করতে, সে জন্য আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি প্রদান করা হবে।’’[2]
এ আয়াত থেকে মৃত্যুকালীন শাস্তি এবং মৃত্যুর পরেই- সেদিনেই যে শাস্তি প্রদান করা হবে তার বিষয়ে জানা যায়। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন:
وَحَاقَ بِآَلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِ النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آَلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ
‘‘কঠিন শাস্তি পরিবেষ্টন করল ফিরাউনের সম্প্রদায়কে। সকাল সন্ধ্যায় তাদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুনের সামনে এবং যেদিন কিয়ামত ঘটবে সেদিন (বলা হবে:) ফিরাউনের সম্প্রদায়কে প্রবেশ করাও কঠিন শাস্তির মধ্যে।’’[3]
এ থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, কিয়ামতের পূর্বেও কাফিরগণকে শাস্তি প্রদান করা হবে এবং আগুনের সামনে তাদের উপস্থিত করা হবে।
অসংখ্য হাদীসে মৃত্যুর সময়ের, মৃত্যুর পরের এ সকল শাস্তি, পুরস্কার ইত্যাদির বিষয়ে জানানো হয়েছে। সামগ্রিকভাবে কবরের প্রশ্ন, আযাব ও নিয়ামত বিষয়ক হাদীসগুলি মুতাওয়াতির বলে গণ্য। এ সকল হাদীস থেকে জানা যায় যে, মৃতব্যক্তিকে কবরের রাখার পরে তার ‘রূহ’ তাকে ফেরত দেওয়া হবে এবং তাকে ‘মুনকার ও নাকীর’ নামক ফিরিশতাগণ প্রশ্ন করবেন তার প্রতিপালক, তার দীন ও তারা নবী সম্পর্কে। মুমিন ব্যক্তি এ সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবেন। মুনাফিক বা কাফির এ সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে অক্ষম হবে। পাপী ও অবিশ্বাসীদেরকে কবরে বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি ভোগ করতে হবে। পক্ষান্তরে নেককার মুমিনগণ কবরে অবস্থানকালে শান্তি ও নিয়ামত ভোগ করবেন। এগুলি সবই মুমিন বিশ্বাস করেন।
সাধারণভাবে এ অবস্থাকে ‘কবরের’ অবস্থা বলা হয়। তবে ‘কবর’ বলতে মৃত্যু ও কিয়ামতের মধ্যবর্তী অবস্থাকেই বুঝানো হয়। কোনো ব্যক্তি কোনো কারণে কবরস্থ না হলেও সে এ সকল শাস্তি বা পুরস্কার লাভ করে। কুরআন কারীমে বলা হয়েছে:
حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ.
‘‘যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে পুনরায় প্রেরণ কর। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি পূর্বে করি নি। না, এ হওয়ার নয়। এ তো তার একটি উক্তি মাত্র। তাদের সম্মুখে ‘বারযাখ’ (প্রতিবন্ধক বা পৃথকীকরণ সময়কাল) থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।’’[4]
ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেন:
وسؤال منكر ونكير حق كائن في القبر، وإعادة الروح إلى جسد العبد في قبره حق، وضغطة القبر وعذابه حق كائن للكفار كلهم ولبعض عصاة المؤمنين.
‘‘মুনকার ও নাকীরের প্রশ্ন সত্য, যা কবরের মধ্যে হবে, কবরের মধ্যে বান্দার রূহকে দেহে ফিরিয়ে দেওয়া সত্য। কবরের চাপ এবং কবরের আযাব সত্য, কাফিররা সকলেই এ শাস্তি ভোগ করবে এবং কোনোকোনো পাপী মুমিনও তা ভোগ করবে।’’[5]
[2] সূরা (৬) আন‘আম: ৯৩ আয়াত।
[3] সূরা (৪০) গাফির/মুমিন: ৪৫-৪৬ আয়াত।
[4] সূরা (২৩) মুমিনুন: ৯৯-১০০ আয়াত।
[5] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১৭০-১৭২।