লগইন করুন
মহান আল্লাহ বলেন:
مَنْ آَمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآَخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ
‘‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’’[1]
কুরআনে পরকালে বিশ্বাসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, স্রষ্টায় বিশ্বাস সকল সমাজের সকল মানুষের মধ্যে সার্বজনীন বিশ্বাস, যা মানুষের জন্মগত অনুভূতির অংশ। পরকালের জীবনে বিশ্বাস ছাড়া স্রষ্টার প্রতি এই বিশ্বাস অর্থহীন হয়ে যায়। এই অর্থহীন বিশ্বাস ছিল মক্কার কাফিরদের মধ্যে। মক্কার কাফিরেরা ঈমানের অন্যান্য কিছু বিষয় বিকৃতভাবে বিশ্বাস করলেও তাদের মধ্যে অনেকেই পরকালে বা পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করত না এবং অনেকে অস্পষ্টভাবে কিছু ধারণা পোষণ করত। কুরআন কারীমে কাফিরদের এ বিভ্রান্তি এবং আখিরাতে বিশ্বাসের আবশ্যকতা, যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব বারংবার আলোচনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে আখেরাতের বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে তাদের অবিশ্বাস বিষয়ক যুক্তি-তর্ক খন্ডন করা হয়েছে এবং সেগুলির অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে।
কুরআনের আলোকে আমরা দেখতে পাই যে, আল্লাহে বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো পরকালীন জীবনে বিশ্বাস করা। কুরআন কারীমে ঈমানের নির্দেশনা জ্ঞাপক আয়াতগুলিতে সর্বদা ‘আখিরাত’ বা ‘শেষ দিবসে’ ঈমান আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।[2] ইতোপূর্বে আমরা এ বিষয়ক কয়েকটি নির্দেশ দেখেছি।
বস্ত্তত কুরআন কারীম পাঠ করলে যে কোনো পাঠক বুঝতে পারেন যে, দুটি বিষয়কে কুরআন কারীমে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে: (১) আল্লাহর ইবাদতের একত্ব বা তাওহীদুল ইবাদাত এবং (২) আখিরাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব। কুরআন কারীমের এমন একটি পৃষ্ঠাও পাওয়া কষ্ট যে পৃষ্ঠাতে আখিরাতের কোনো না কোনো বর্ণনা নেই।
আমরা সাধারণভাবে বুঝতে পারি যে, আল্লাহয় বিশ্বাসী ধার্মিক মানুষের কঠিনতম পদস্খলন ও বিভ্রান্তির দুটি পথ: (১) শির্কে নিপতিত হওয়া এবং (২) আখিরাত সম্পর্কে অসচেতনতা। অনেক সময় বিশ্বাসী মানুষও পার্থিব বিষয়াদি নিয়ে অতি-ব্যস্ততা, অস্থিরতা, অসচেতনতা বা শয়তানী প্ররোচনার কারণে আখিরাত সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়েন বা আখিরাতের জীবনকে অবজ্ঞা করতে থাকেন। এই ভয়ঙ্করতম পদস্খলন থেকে মুমিনকে রক্ষা করার জন্য সদা-সর্বদা আখিরাতের স্মরণ অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। বাহ্যত তাওহীদুল ইবাদাত ও আখিরাতের বিষয়ে কুরআনের বিশেষ গুরুত্বপ্রদানের এ হলো একটি কারণ।
[2] দেখুন: সূরা (২) বাকারা: ৬৩, ১২৬, ১৭৭, ২২৮, ২৩২, ২৬৪; সূরা (৩) আল-ইমরান: ১১৪; সূরা (৪) নিসা: ৩৯, ৫৯, ১৬৩, ১৬২; সূরা (৫) মায়িদা: ৬৯; সূরা (৯) তাওবা: ১৮, ১৯, ৪৪, ৪৫, ৯৯; সূরা (২৪) নূর: ২; সূরা (২৯) আনকাবূত: ৩৬; সূরা (৩৩) আহযাব: ২১; সূরা (৫৮) মুজাদালা: ২২; সূরা (৬০) মুমতাহিনা: ৬; সূরা (৬৫) তালাক: ২।