কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা চতুর্থ অধ্যায়: আরকানুল ঈমান ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৪. ৪. ৪. নবী-রাসূলগণের নাম

কুরআনে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে: আদম, ইদরিস, নূহ, হুদ, সালিহ, ইবরাহীম, লূত, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব, ইউসূফ, আইয়ূব, শুয়াইব, মূসা, হারূন, ইউনূস, দাউদ, সুলাইমান, ইল্ইয়াস, ইল্ইয়াসা’, যুলকিফল, যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা, মুহাম্মাদ (عليهم الصلاة والسلام)।[1]

কুরআন কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উযাইরকে ইহূদীগণ আল্লাহর পুত্র বলে দাবি করত।[2] কিন্তু তাঁর নবুয়ত সম্পর্কে কিছুই বলা হয় নি। আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

مَا أَدْرِيْ أعُـزَيْـرٌ نَـبِـيُّ هُـوَ أَمْ لاَ

‘‘আমি জানি না যে, উযাইর নবী ছিলেন কি না।’’[3]

মূসার (আঃ) খাদিম হিসাবে ইউশা ইবনু নূন-এর নাম হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত কোনো সহীহ হাদীসে অন্য কোনো নবীর নাম উল্লেখ করা হয় নি। কোনো কোনো যয়ীফ হাদীসে আদম (আঃ) এর পুত্র ‘‘শীস’’-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কালুত, হাযকীল, হাযালা, শামূয়েল, জারজীস, শামঊন, ইরমিয়, দানিয়েল প্রমুখ নবীর নাম, জীবণবৃত্তান্ত ইত্যাদি বিষয়ে যা কিছু বলা হয় সবই মূলত ইসরাঈলীয় বর্ণনা ও সেগুলির ভিত্তিতে মুফাসসির ও ঐতিহাসিকগণের মতামত।

কুরআন কারীমে উল্লিখিত নবী-রাসূলগণকে আমরা নির্দিষ্টভাবে আল্লাহর মনোনীত নবী হিসেবে বিশ্বাস করি। এঁদের সবাইকে আমরা ভালবাসি ও শ্রদ্ধা করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, তারা সবাই নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী পবিত্র মানুষ ছিলেন। তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁদের  প্রতি প্রদত্ত দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেছেন। তাঁরা সবাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবী ছিলেন। এঁদের নবুয়ত বা রিসালত আমরা অস্বীকার করিনা। কেউ যদি এঁদের কারো নবুয়ত বা রিসালাত অস্বীকার করেন, অথবা এঁদের ঘৃনা বা অবমাননা করেন তিনি অবিশ্বাসী বা কাফির বলে গণ্য হবেন।

কুরআন-হাদীসে যাদেরকে নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয় নি তাদের কাউকে আমরা নির্দিষ্টরূপে আল্লাহর মনোনীত নবী বলতে পারিনা। অন্য কোনো মানুষের সম্পর্কেই আমরা বলতে পারিনা যে, তিনি আল্লাহর নবী ছিলেন। তবে আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ যুগে যুগে আরো অনেক নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন, যারা আল্লাহর মনোনীত প্রিয় পুত-পবিত্র, নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী বান্দা ছিলেন। তাঁরা তাঁদের  প্রতি প্রদত্ত দায়িত্ব পুরোপুরি পালন  করেছেন। তাঁদের  নাম বা বিবরণ  আমরা জানিনা।

[1] ইবনু কাসীর, তাফসীর ১/৫৮৬; কুরতুবী, তাফসীর, ৩/৩১;
[2] সূরা ৯: তাওবা, আয়াত ৩০।
[3] আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২১৮; আযীম আবাদী, আউনুল মা’বুদ ১২/২৮০।