লগইন করুন
ইসলামের সকল বিধান ও কর্মের মধ্যে যেমন ঈমানের গুরুত্ব বেশি, তেমনিভাবে সকল ইসলামী ইলম বা জ্ঞানের মধ্যে ঈমান বা আকীদা বিষয়ক জ্ঞানের গুরুতব সবচেয়ে বেশি। ইসলামী আকীদার পঠন ও পাঠনের মাধ্যমে আমরা নিম্নের বিষয়গুলি জানতে পারি:
(১) বিশুদ্ধ ঈমানের পরিচিতি ও স্বরূপ
(২) ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়াদি, সেগুলির কারণ ও স্বরূপ
(৩) বিভ্রান্তিকর আকীদাসমূহ, সেগুলিরর কারণ ও স্বরূপ
মূলত একজন মুমিনের জন্য এ বিষয়গুলি বিষদভাবে অবগত হওয়া তার দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তি ও সফলতার জন্য অপরিহার্য।
১. ৩. ১. বিশুদ্ধ ঈমানের গুরুত্ব
মানুষের প্রকৃতি ও মানবজাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, সঠিক বিশ্বাসই মানুষের সকল সফলতা ও সৌভাগ্যের ভিত্তি। বিশ্বাসই মানুষের পরিচালিকা শক্তি। সঠিক বিশ্বাস মানুষকে মানবতার শিখরে তুলে দেয়, তার জীবনে বয়ে আনে অফুরন্ত শান্তি ও আনন্দ। আর ভুল বিশ্বাস বা কুসংস্কার মানুষের মনকে সদাব্যস্ত, অস্থির ও হতাশ করে ফেলে।
আমরা জানি বিশ্বাস ও কর্মের সমন্বয়ে ইসলাম। সঠিক বিশ্বাস বা ঈমান ইসলামের মূল ভিত্তি। আমরা যত ইবাদত বা সৎকর্ম করি সবকিছু আল্লাহর নিকট কবুল বা গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রথম শর্ত বিশুদ্ধ শির্ক-কুফরমুক্ত ঈমান। কুরআন করীমে বিভিন্ন স্থানে একথা বলা হয়েছে। এক স্থানে আল্লাহ বলেন:
وَمَنْ أَراَدَ الآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُوراً
‘‘এবং যে ব্যক্তি পরলৌকিক জীবনে কল্যাণ চায়, সে জন্য চেষ্টা করে এবং সে বিশ্বাসী বা মুমিন হয় তাহলে তার চেষ্টা ও কর্ম কবুল করা হবে।’’[1]
দুনিয়াতে আল্লাহর নিয়ামত ও বরকত অর্জনের এবং আল্লাহর ওয়াদাকৃত পবিত্র জীবন লাভের শর্ত হলো সঠিক ঈমান। আল্লাহ বলেছেন:
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
‘‘যদি কোনো পুরুষ বা মহিলা সৎকর্ম করে এবং সে মুমিন হয়, আমি অবশ্যই তাদেরকে (দুনিয়াতে) পবিত্র জীবন দিয়ে জীবিত রাখব এবং (আখিরাতে) তাদের সর্বোত্তম কর্মের উপর ভিত্তি করে তাদের পুরষ্কার দান করব।’’[2]
দুনিয়াতে সার্বিক বরকত ও কল্যাণ লাভের জন্য প্রথমত সঠিক ও বিশুদ্ধ ঈমানের অধিকারী হতে হবে। অতঃপর আল্লাহকে ভয় করে সৎ জীবন যাপন করতে হবে। আর কুফরী বা অবিশ্বাসের শাস্তি হলো ধ্বংস ও ক্ষতি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
‘‘যদি জনপদ সমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর বরকত-কল্যাণসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা অবিশ্বাস করল, কাজেই আমি তাদের কর্ম অনুযায়ী ফল দান করলাম।’’[3]
আল্লাহর বন্ধুত্ব ও সন্তুষ্টি অর্জনের প্রথম ধাপই বিশুদ্ধ ঈমান। আল্লাহ বলেন:
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ
‘‘জেনে রাখ! আল্লাহর ওলীগণের কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তাগ্রস্তও হবে না- যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়ার পথ অনুসরণ করে।’’[4]
এখানে দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষণীয়:
প্রথমত, আমরা ইতোপূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই মানবীয় বুদ্ধি, বিবেক ও যুক্তির মাধ্যমে মহান স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব ও প্রমাণ করতে পারে। কিন্তু তাঁর প্রতি বিশ্বাসের স্বরূপ ও বিস্তারিত বিষয়াদি অনুভব করতে পারে না। এজন্য ওহীর জ্ঞানের উপর নির্ভর করতে হয়। এজন্য কুরআন ও হাদীসের আলোকে ইসলামী ঈমানের স্বরূপ, ভিত্তি, আরকান ইত্যাদি বিস্তারিত অবগত হওয়া ছাড়া বিশুদ্ধ ঈমান অর্জন করা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, আমরা পরবর্তী বিভিন্ন অধ্যায়ে দেখব যে, ঈমান অর্জনের ন্যায় সংরক্ষণও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুগে যুগে অনেক জাতিই নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে আসমানী হেদায়াত ও ঈমান লাভ করেছে। কিন্তু তারা তা সংরক্ষণ করতে পারে নি। বরং বিভিন্ন ঈমান বিনষ্টকারী বিশ্বাস বা কর্মের মাধ্যমে তারা ঈমান হারিয়ে ফেলেছে। এজন্য ঈমান বিনষ্টের কারণ ও অবিশ্বাসের স্বরূপ জানা মুমিনের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়।
[2] সূরা (১৬) নাহল: ৯৭ আয়াত।
[3] সূরা (৭) আরাফ: ৯৬ আয়াত।
[4] সূরা (১০) ইউনূস: ৬২-৬৩ আয়াত।