সুন্নতের আলো ও বিদআতের আঁধার ২য় অধ্যায় : বিদআতের অন্ধকার ইসলামহাউজ.কম
কবরের পাশে সংঘটিত বিদআত

১। মৃত ব্যক্তির নিকট নিজের প্রয়োজনীয় বস্তু চাওয়া। এ প্রকার বিদআত মূর্তি পুজার অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ

قٌلْ ادْعُواْ الَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِ فَلاَ يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلاَ تَحْوِيلاً. أُوْلِئِكَ الَّذِيْنَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى ربِهِمُ الوَسِيلَةَ أَيُّهُمُ أَقَْربُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذابَ ربِّكَ كَانَ مَحْذُورًا ( الإسراء: 56-57)

অর্থঃ বলুন, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে মা‘বুদ মনে করে আহবান কর; তারা তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার অথবা পরিবর্তন করার শক্তি রাখে না। তারা যাদের আহবান করে তারাই তো নিজ রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের কে কত নিকটতম হতে পারে, তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। তোমার রবের শাস্তি ভয়াবহ।[1]               

অতএব যারাই নবী, অলী, নেককার বুজুর্গদের ডাকে করে এবং তাদের এক প্রকার মা‘বুদ বানায়; এ আয়াত তাদের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে। কেননা এ আয়াত ঐ সকল লোকদের ব্যপারে যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে মা‘বুদ হিসেবে ডাকে। অথচ সকল মা‘বুদই আল্লাহর নৈকট্য লাভের উসিলা তালাশ করে, তাঁর রহমত কামনা করে এবং তাঁর আযাবকে ভয় করে।

 অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত মৃত অথবা অদৃশ্য কোন পীর, অলী বা নবীর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করল, সে বড় শিরক করল, যা আল্লাহ কখনও ক্ষমা করবেন না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন নবী বা অলীর ব্যাপারে অতিরঞ্জন করল এবং গায়রুল্লাহকে এভাবে সম্বোধন করল যে, হে বাবা! আমাকে সাহায্য কর, আমাকে মদদ কর, আমার ফরিয়াদ কবুল কর, আমাকে রিযিক দাও, আমাকে সন্তান দাও ইত্যাদি। এটাও বড় শিরক। এ ধরণের ব্যক্তিকে তওবা করতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলগণকে একমাত্র তাঁর ইবাদত করার এবং তাঁর সাথে কোন প্রকার শিরক না করার বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন।

২। মৃত ব্যক্তির ওয়াসিলায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা। এটা বিদআতের অর্ন্তভুক্ত। তবে শিরকে আকবার হবে না।

 কোন কোন লোক নবী এবং অলীগণের ওসিলায় দুআ করেন। যেমন- হে আল্লাহ! তোমার নবীগণের, ফেরেশতাগণের, ওলীগণের, অমুক শায়খের, অমুকের সম্মানে এবং লৌহ কলমের ওসিলায় আমার দুআ কবুল কর ইত্যাদি শব্দে দুআ করে থাকে। এগুলো সব নিকৃষ্টতম বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।

তবে হ্যাঁ; ওসিলা সম্পর্কে হাদীসে যা পাওয়া যায় তা হল, আল্লাহর নাম, তাঁর গুণাবলী ও নিজ নেক আমলের ওসিলা করে দুআ করা জায়েয। যেমন- বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত (গুহায় আটকে পড়া) তিন ব্যক্তির ঘটনা দ্বারা জানা যায়। তবে জীবিত ব্যক্তির দুআর ওসিলায় অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য দুআর প্রমাণ পাওয়া যায়।

৩।  কবরের পাশে দুআ করলে কবুল হয় অথবা কবরের পাশে দুআ করাকে মসজিদে দুআ করার চেয়ে উত্তম মনে করা এবং এ উদ্দেশ্যে কবরের পাশে যাওয়া ইত্যাদি সকলের ঐকমত্যে হারাম।

এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন অনুমোদন দেননি। এমন কি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও ইমামগণের কেউ এমন আমল করেননি। সাহাবীগণ অনেক বিপদ-আপদে পড়েছেন, তথাপি কোন দিন কোন সাহাবী রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরে আসেননি। বরং উমর (রা) রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচা আববাস (রা) কে নিয়ে বের হয়েছিলেন এবং বৃষ্টির জন্য তাঁর ওসিলায় দুআ করেছিলেন। ছলফে ছালেহীনগণ কবরের পাশে দুআ করতে নিষেধ করেছেন।

আলী ইবনে হোসাইন (রা) জনৈক ব্যক্তিকে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের পাশে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করতে দেখে; তাকে ডেকে বললেন, আমি কি আপনাকে আমার নানার একটি হাদীস শুনাব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ

 لَاتَجْعَلُوْا قَبْرِيْ عِيْداً وَلَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قبُوُرْاً. وَصَلُّوْا عَلَيَّ وَ سَلِّمُوْا حَيْثُمَا كُنْتُمْ فَسَيُبَلِّغُنِيْ سَلَامَكُمْ وَصَلَاتَكُمْ. (فضل الصلاة على النبي صلى الله عليه وسلم )

অর্থঃ তোমরা আমার কবরকে ঈদ বা আনন্দ উৎসবের জায়গা বানিও না, তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না। তোমরা আমার উপর সালাত ও সালাম পাঠ কর। তোমরা যেখানেই তা পাঠ কর না কেন তোমাদের সালাম ও সালাত আমার  কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।[2]

যেখানে ভূখন্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ কবর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবর, সেখানেই ঈদ বা ওরস করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে দুনিয়ার অন্যান্য কবরের কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না।

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قَبُوْراً وَلَا تَجْعَلُوْا قَبْرِيَ عِيْدًا وَصَلُّوْا عَليََّ فَأِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِيْ حَيْثُ& كُنْتُمْ. (أبو داود)

অর্থঃ তোমরা নিজেদের ঘরকে কবর বানিও না, আমার কবরকে ঈদ বা উৎসবস্থল বানিও না। আমার উপর দরুদ পাঠ কর, তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমাদের দরূদ ও সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।[3]

[1] ইসরাঃ ৫৬-৫৭
[2] ফজুলস সালাত আলান নবী (সঃ):৩৪ পৃ
[3] আবু দাউদ : ২০৪২