লগইন করুন
এক: এমন শব্দে দিয়ে নাম রাখা যার অনুপস্থিতিকে মানুষ কুলক্ষণ মনে করে। যেমন- কারো নাম যদি হয় রাবাহ (লাভবান)। কেউ যদি রাবাহকে ডাকে, আর রাবাহ বাড়ীতে না-থাকে তখন বাড়ীর লোকদেরকে বলতে হবে রাবাহ বাড়ীতে নেই। এ ধরনের বলাকে সাধারণ মানুষ কুলক্ষণ মনে করে। অনুরূপভাবে আফলাহ (সফলকাম), নাজাহ (সফলতা) ইত্যাদির নামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধরনের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। পরবর্তীতে নিষেধ না করে চুপ থেকেছেন।[1]
দুই: যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলা সাহাবীর নাম বার্রা (পূন্যবতী) থেকে পরিবর্তন করে তার নাম দেন যয়নব। এবং বলেন: “তোমরা আত্মস্তুতি করো না। আল্লাহই জানেন কে পূন্যবান।”[2]
তিন: দাম্ভিক ও অহংকারী শাসকদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ। শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি। [3]
চার: যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষের স্বাভাবিক রুচিবোধ যেসব শব্দকে নাম হিসেবে ঘৃণা করে; ভদ্রতা ও শালীনতার পরিপন্থী কোন শব্দকে নাম বা কুনিয়ত হিসেবে গ্রহণ করা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।[4]
পাঁচ: একদল আলেম কুরআন শরীফের মধ্যে আগত অস্পষ্ট শব্দগুলোর নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি।[5]
ছয়: দ্বৈতশব্দে নাম রাখাকে শায়খ বকর আবু যায়দ মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন।[6] যেমন- মোহাম্মদ আহমাদ, মোহাম্মদ সাঈদ। কারণ এতে করে কোনটি ব্যক্তির নিজের নাম ও কোনটি ব্যক্তির পিতার নাম এ বিষয়ে জটিলতা তৈরী হতে পারে এবং দ্বৈতশব্দে নাম রাখা সলফে সালেহীনদের আদর্শ নয়। এতদ অঞ্চলে মুসলিমদের নামকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নাম থেকে চিহ্ণিত করার নিমিত্তে “শ্রী” শব্দের পরিবর্তে “মুহাম্মদ” লেখার প্রচলন সে প্রেক্ষাপটে শুরু হয়েছিল সে প্রেক্ষাপট এখন অনুপস্থিত। তাই মুসলিম শিশুর নামের পূর্বে অতিরিক্ত মুহাম্মদ শব্দ যুক্ত করার কোন প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে নেই।
সাত: অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে আব্দ (দাস) শব্দ বাদে অন্য কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করা। যেমন- রহমত উল্ল্যাহ (আল্লাহর রহমত)। শায়খ বকর আবু যায়দের মতে রাসূল শব্দের সাথে কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও মাকরূহ।[7] যেমন- গোলাম রাসূল (গোলাম শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ হিসেবে ধরা হয় এর অর্থ হবে রাসূলের চাকর বা বাছা তখন এটি মাকরূহ। আর যেসব ভাষায় গোলাম শব্দটি দাস অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব ভাষার শব্দ হিসেবে নাম রাখা হয় তখন এ ধরনের নাম রাখা হারাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।)
[2]. সহীহ মুসলিম, হাদিস নং - ২১৪২।
[3]. মাতালেবু উলিন্নুহা, পৃষ্ঠা- ২/৪৯৪ ও ইবনুল কাইয়্যেম, তুহফাতুল মাওদুদ, পৃষ্ঠা-১/ ১১৮ ।
[4]. আল-মাওসুআ আল্ফিকহিয়া আলকুয়েতিয়া, পৃষ্ঠা-১১/৩৩৪ ও শারহুল আযকার, পৃষ্ঠা- ৬/১১১।
[5]. বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/২৭।
[6]. বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/২৭।
[7]. তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ২৬।