লগইন করুন
আকীকার বিধান প্রবর্তিত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম ও উক্তি- উভয়প্রকার হাদীসের মাধ্যমে। এ সম্পর্কে অনেক ‘আছার’ও বর্ণিত হয়েছে অনেক। নিচে এর কিছু তুলে ধরা হচ্ছে :
প্রথমত. সুন্নাহ কাওলী বা মৌখিক হাদীস :
১. সালমান বিন আমের দাব্বী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«مَعَ الْغُلَامِ عَقِيقَةٌ فَأَهْرِيقُوا عَنْهُ دَمًا وَأَمِيطُوا عَنْهُ الْأَذَى»
‘পুত্র সন্তানের সঙ্গে আকীকা রয়েছে। সুতরাং তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত করো এবং তার থেকে কষ্ট দূর করো।’ [বুখারী : ৫০৪৯; তিরমিযী : ১৫১৫; মুসনাদ আহমদ : ১৭৯০৭।]
২. সামুরা বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«كُلُّ غُلاَمٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى»
‘প্রত্যেক শিশুই তার আকীকা জরুরী। জন্মের সপ্তম দিনে তার জন্য জবাই করা হবে এবং তার মাথা নেড়ে করা হবে আর নাম রাখা হবে। [আবূ দাউদ : ২৮৪০; মুসনাদ আহমদ : ২০০৯৫।]
৩. উম্মে কুরয আল-কা‘বিয়া রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি,
«عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ».
‘ছেলে সন্তানের পক্ষে সমবয়সী দু’টি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি ছাগল (দিয়ে আকীকা করা যাবে)।’ [আবূ দাউদ : ২৮৩৬; মুসনাদ আহমদ : ২৭৪০৯।]
৪. উম্মে কুরয আল-কা‘বিয়া রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, উত্তরে তিনি বলেন,
«عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ وَاحِدَةٌ وَلاَ يَضُرُّكُمْ ذُكْرَانًا كُنَّ أَمْ إِنَاثًا».
‘ছেলে সন্তানের পক্ষে সমবয়সী দু’টি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষে একটি ছাগল (দিয়ে আকীকা দেয়া যাবে) আর ওই ছাগলগুলো পাঠা হোক বা পাঠ তাতে তোমাদের কোনো অসুবিধা নাই।’ [তিরমিযী : ১৫৯৯; মুসনাদ আহমদ : ২৭৩৭৩।]
৫. হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা তাঁকে অবহিত করেছেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَنِ الْغُلامِ شَاتَانِ ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ»
‘পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল।’ [ইবন হিব্বান : ৫৩১০; ইবন আবী শাইবা : ২৪৭২৯।]
৬. একই হাদীসের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে,
«عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ ، أَنَّهُمْ دَخَلُوا عَلَى حَفْصَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ فَسَأَلُوهَا عَنِ العَقِيقَةِ ، فَأَخْبَرَتْهُمْ أَنَّ عَائِشَةَ أَخْبَرَتْهَا ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُمْ عَنِ الغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ ، وَعَنِ الجَارِيَةِ شَاةٌ».
‘ইউসুফ বিন মাহাক থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার কাছে গেলেন এবং তাঁকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে জানালেন যে, তিনি তাঁকে এ মর্মে অবহিত করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ছেলে হলে সমবয়সী দু’টি ছাগল ও মেয়ে হলে একটি ছাগল দিয়ে আকীকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ [তিরমিযী : ১৫১৩।]
৭. আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْعَقِيقَةُ حَقٌّ ، عَنِ الْغُلامِ : شَاتَانِ ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ : شَاةٌ».
‘পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে প্রায় সমবয়সী দু’টি ছাগল হক এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে একটি।’ [আল-আদাদ ওয়াল-মাছানী : ৩৩৫৩; মুসনাদ আহমদ : ২৭৫৮২।]
৮. ইয়াযীদ বিন আব্দুল্লাহ মুযানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يُعَقُّ عَنِ الْغُلاَمِ ، وَلاَ يُمَسُّ رَأْسُهُ بِدَمٍ».
‘পুত্র সন্তানের পক্ষে আকীকা করা হবে আর তার মাথায় রক্ত স্পর্শ করা হবে না।’ [ইবন মাজা : ৩১৬৬; আল-আদাদ ওয়াল-মাছানী : ১১০৮।]
৯. আমর বিন শুয়াইব তার বাবা আর বাবা তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে,
«أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِتَسْمِيَةِ الْمَوْلُودِ يَوْمَ سَابِعِهِ وَوَضْعِ الأَذَى عَنْهُ وَالْعَقِّ».
‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের সপ্তম দিবসে নবজাতকের নাম রাখা, তার আবর্জনা দূর করা (তথা নেড়ে করা) ও আকীকার নির্দেশ দিয়েছেন।’ [তিরমিযী : ২৮৩২।]
১০. ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا كان يوم سابعه فأهريقوا عنه دما وأميطوا عنه الأذى وسموه».
‘যখন তার (নবজাতকের জন্মের) সপ্তম দিন আসবে, তখন তার পক্ষে রক্ত প্রবাহিত করো আর তার আবর্জনা (মাথার চুল) দূর করো এবং তার নাম রাখো।’ [তাবরানী, আল-মু‘জামুল আওসাত : ১৮৮৩।]
১১. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আকীকা সংক্রান্ত যে হাদীস বর্ণনা করেন, তা থেকেও এমনটি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন,
«وَكَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَةِ يَجْعَلُونَ قُطْنَةً فِى دَمِ الْعَقِيقَةِ وَيَجْعَلُونَهُ عَلَى رَأْسِ الصَّبِىِّ فَأَمَرَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ يُجْعَلَ مَكَانَ الدَّمِ خَلُوقًا.
‘জাহেলী যুগের লোকেরা আকীকার রক্তে তুলা ভেজাতো এবং তা শিশুর মাথায় রাখতো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন তুলার স্থলে জাফরান তথা সুগন্ধি রাখা হয়।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬৭।]
১২. হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«إِنَّ الْيَهُودَ تَعُقُّ عَنِ الْغُلاَمِ وَلاَ تَعُقُّ عَنِ الْجَارِيَةِ فَعُقُّوا عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَيْنِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ».
‘ইহুদীরা পুত্র সন্তানের আকীকা করতো কিন্তু কন্যা সন্তান হলে তার আকীকা করতো না। অতএব তোমরা পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকীকা করো।’ [বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬০; মুসনাদ বাযযার : ৮৮৫৭।]
দ্বিতীয়ত. সুন্নাহ ফি‘লী বা কর্মগত হাদীস :
১. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْحَسَنِ ، وَالْحُسَيْنِ بِكَبْشَيْنِ كَبْشَيْنِ.
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার জন্য দু’টি দু’টি করে ভেড়া দিয়ে আকীকা করেন।’ [নাসায়ী : ১২১৯।]
২. আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদা থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا.
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য আকীকা করেছেন।’ [মু‘জামুল কাবীর : ২৫১০; নাসায়ী : ৪২১৩; মুসনাদ আহমদ : ২৩০৫১।]
৩. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ يَوْمَ السَّابِعِ وَسَمَّاهُمَا وَأَمَرَ أَنْ يُمَاطَ عَنْ رَأْسِهِمَا الأَذَى.
‘(জন্মের) সপ্তম দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের আকীকা দিয়েছেন, তাঁদের নাম রেখেছেন এবং তাঁদের মাথা থেকে কষ্ট (চুল) দূর করেছেন।’ [বাইহাকী : ১৯০৫৫; সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৩১১।]
৪. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ شَاتَيْنِ يَوْمَ السَّابِعِ وَأَمَرَ أَنْ يُمَاطَ عَنْ رَأْسِهِ الأَذَى. وَقَالَ« : اذْبَحُوا عَلَى اسْمِهِ وَقُولُوا بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمَّ لَكَ وَإِلَيْكَ هَذِهِ عَقِيقَةُ فُلاَنٍ.
‘হাসান ও হুসাইনের (জন্মের) সপ্তম দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি ছাগল দিয়ে আকীকা দেন এবং তার মাথার কষ্ট দূর করার নির্দেশ দেন। আর তিনি বলেন, ‘তাঁর (আল্লাহর) নামে জবাই করো এবং বলো, বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, হে আল্লাহ, আপনার কাছে অমুকের জন্য এ আকীকা।’ [বাইহাকী : ১৯৭৭২; মুসনাদ আবী ইয়া‘লা : ৪৫২১।]
৫. আব্দুল্লাহ ইবন উমরা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَّ عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ عَنْ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا كَبْشَيْنِ اثْنَيْنِ مِثْلَيْنِ مُتَكَافِئَيْنِ.
‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন- উভয়ের প্রত্যেকের জন্যই প্রায় একইরকম সমবয়সী দুটি করে ভেড়া দিয়ে আকীকা দেন।’ [হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৫৯০।]
৬. আলী বিন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْحَسَنِ بِشَاةٍ وَقَالَ « يَا فَاطِمَةُ احْلِقِى رَأْسَهُ وَتَصَدَّقِى بِزِنَةِ شَعْرِهِ فِضَّةً . قَالَ فَوَزَنَتْهُ فَكَانَ وَزْنُهُ دِرْهَمًا أَوْ بَعْضَ دِرْهَمٍ.
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছাগল দিয়ে হাসানের আকীকা দিলেন এবং বললেন, ‘হে ফাতেমা, এর তার মাথার চুল ফেলে দাও এবং তার চুলের ওজনে রুপা সদকা করো। তিনি বলেন, অতপর ফাতেমা তা পরিমাপ করলো, এর ওজন হলো এক দিরহাম বা এক দিরহামের কিছু পরিমাণ।’ [তিরমিযী : ১৬০২; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৫৮৯।]