লগইন করুন
ক. মাইয়্যেতকে কাফন পরানো ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা এ (মাইয়্যেতকে) কাফন পরিয়ে দাও...” (বুখারী: ১২৬৫-১২৬৮)
খ. কাফন পরানোের ফযীলত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি একজন মাইয়্যেতকে কাফন পরাবে, (কাল) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সুন্দর ও ইরাকের (রেশমী) পোশাক পরিয়ে দেবেন। (হাকেম১/৩৫৪, ৩৬২)
গ. কাফন সংক্রান্ত মাসাইল
১. কাফনের কাপড় ক্রয় করবে মৃত ব্যক্তির নিজস্ব সম্পদ থেকে। (বুখারী: ৪০৪৭) তবে তার সে অর্থ না থাকলে অভিভাবকেরা তাদের টাকা দিয়ে ক্রয় করে দিতে পারবে।
২. উত্তমভাবে কাফন পরানো। (মুসলিম: ৯৪৩) আর উত্তম কাফনের অর্থ হলো কাপড়টি পরিষ্কার হওয়া, পুরু বা মোটা হওয়া, সারা শরীর ঢাকে এমন হওয়া এবং মধ্যম মানের বা মাঝারি মূল্যের হওয়া।
৩. কোন কারণে কাফনের ঘাটতি থাকলে মাথা ও শরীর ঢেকে পায়ের অংশে যতটুকু বাকি থাকবে সেটুকু শুকনা কোন ঘাস দিয়ে ঢেকে দেবে।(বুখারী: ৪০৪৭, ৪০৮২)
৪. নতুন কাপড় না থাকলে পুরাতন কাপড় বা ব্যবহৃত জামাকাপড় দিয়েও কাফন পরানো জায়েয। তাছাড়া পুরুষের কাপড় দিয়ে নারীদের কাফন চলে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর লুঙ্গি দিয়ে তার কন্যা জয়নাব (রা.)-কে কাফন পরানো হয়েছিল।(বুখারী)
৫. জীবদ্দশায় নিজেই নিজের কাফনের কাপড় প্রস্তুত করে রাখতে পারে। এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে একটি জামা চেয়ে নিয়েছিলেন তার কাফনের জন্য এবং এটা। দিয়েই তার কাফন পরানো হয়েছিল।(বুখারী: ১২৭৭)।
৬. কাফনের কাপড়টি পূর্ণ লম্বা হওয়া দরকার। যাতে মাইয়্যেতের সমস্ত শরীর ঢাকা যায়। (আলবানীর আহকামল জানায়িয, মাসআলা নং ৩৫)
৭. কাফনের কাপড়ে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য থাকা মুস্তাহাব
(ক) কাপড়টি সাদা হওয়া। (আবু দাউদ: ৩৫২৯, বায়হাকী- ৩/২৪৫)
(খ) হিবারাহ (অর্থাৎ সূতী) কাপড় হওয়া।(আবু দাউদ: ৩১৫০)।
(গ) কাপড় তিন টুকরা হওয়া (বুখারী ও মুসলিম)। রাসূল (সা.)-কে ৩ কাপড়েই কাফন পরানো হয়েছিল। এ জন্য এর চেয়ে বেশি কাপড় ব্যবহার করাকে অনেক ফকীহ নাজায়েয বলেছেন। (আল বানীর আহকামুল জানয়িয, মাসআলা নং ৪২)। তবে কাপড়ের অভাব থাকলে এক বা দুই টুকরা কাপড় দিয়েও কাফন জায়েয আছে। সাহাবী মুসআব ইবনু উমায়ের এবং হামযা (রা.)-এর ক্ষেত্রে এমনটি করা হয়েছিল।
(ঘ) কাপড়ে তিনবার সুগন্ধি লাগানো (ইবনু আবি শাইবা- ৪/৯২) আগরবাতি দিয়ে বা। সুগন্ধযুক্ত কাঠ পুড়িয়ে বা গোলাপ পানি দিয়েও সুগন্ধময় করা যায়।
৮. হজ্জ বা উমরা পালনরত: ইহরাম অবস্থায় নিহত ব্যক্তিকে তার পরনের ২ টুকরা ইহরামের কাপড় দিয়েই কাফন পরাবে। (আবু দাউদ: ৩১৩৮) মুহরিম ব্যক্তির দেহে বা কাপড়ে কোন সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা যায় না।
৯. আর জিহাদের ময়দানে নিহত শহীদের কাফন হলো তার পরিধেয় বস্ত্র। শহীদের পরনের কাপড় খোলা জায়েয নেই। নিজের রক্তমাখা পোশাকই তার কাফন, এ পোশাকেই তাকে কাফন করাতে হবে। এভাবেই উহুদ যুদ্ধের শহীদদের দাফন করা হয়েছিল। (আহমাদ: ২৩১৪৪)
১০. কাপড়ের মাপ: মাইয়্যেতের দেহের প্রস্থ ৩০ সেঃ মিঃ হলে কাফনের প্রস্থ ৯০ সেঃ মিঃ হতে হবে। এইভাবে ৪০ সেঃ মিঃ'র ক্ষেত্রে ১২০ সেঃ মিঃ ৫০ সেঃ মিঃ'র ক্ষেত্রে ১৫০ সেঃ মিঃ, ৬০ সেঃ মিঃ’র ক্ষেত্রে ১৮০ সেঃ মিঃ অর্থাৎ ৩ গুণ হবে। মাইয়্যেতের দেহের দৈর্ঘ্য ১৮০ সেঃ মিঃ হলে লেফাফার দৈর্ঘ্য এর চেয়ে ৬০ সেঃ মিঃ অতিরিক্ত হতে হবে। তদনুরূপ ১৫০ সেঃ মিঃ’র ক্ষেত্রে ৫০ সেঃ মিঃ, ১২০ সেঃ মিঃ’র ক্ষেত্রে ৪০ সেঃ মিঃ এবং ৯০ সেঃ মিঃ'র ক্ষেত্রে ৩০ সেঃ মিঃ কাপড় বেশি লম্বা লাগবে। (জানাযা দর্পন, পৃ. ফাইযী, পৃ. ৫৭)।