লগইন করুন
আল্লামা সাফারায়েনী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যেসব কারণে কবরবাসীদেরকে তাদের কবরে শাস্তি দেয়া হবে, তা দু’ভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। সংক্ষিপ্তভাবে ও বিস্তারিতভাবে।
সংক্ষিপ্তভাবে বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে, তার আদেশসমূহ বাস্তবায়ন না করে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে কবরে আযাব হবে। তিনি এমন কোনো রূহকে কবরে আযাব দিবেন না, যে তাকে চিনতে পেরেছে, তাকে ভালোবেসেছে, তার আদেশ বাস্তবায়ন করেছে এবং তার নিষেধাজ্ঞা থেকে দূরে থেকেছে। এরকম রূহ যে দেহের মধ্যে থাকে, সে দেহকেও তিনি কখনো শাস্তি দিবেন না। কেননা কবরের আযাব ও আখিরাতের আযাব বান্দার প্রতি আল্লাহর ক্রোধের কারণেই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি ইহজগতে আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করবে, তাকে অসন্তুষ্ট করবে এবং তার নাফরমানি করার পরও তাওবা না করেই মৃত্যু বরণ করবে, তার প্রতি আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তষ্টি অনুপাতেই সে বারযাখের শাস্তি ভোগ করবে। অতএব কেউ কম শাস্তি ভোগ করবে, কেউ বেশি ভোগ করবে। যারা কবরের আযাব ও শাস্তির প্রতি ঈমান আনয়ন করবে সে কবরে শান্তি পাবে এবং যারা তাকে অস্বীকার করবে, তারা শাস্তি পাবে।
কবরের আযাবের কারণগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে গিয়ে আমরা ঐসব আমলগুলো উল্লেখ করতে চাই, যেগুলোকে কবরের আযাবের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন দুই ব্যক্তির সংবাদ দিয়েছেন, যাদেরকে তিনি কবরে আযাব ভোগ করতে দেখেছেন। তাদের একজন মানুষের মধ্যে চোগলখোরী করে বেড়াতো এবং অন্যজন স্বীয় পেশাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করতো না কিংবা পেশাব করার সময় নিজেকে আড়াল করতো না। যে ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করা ছাড়াই সালাত পড়তো তার আযাব হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। যে ব্যক্তি কোনো মাযলুম ব্যক্তির কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাকে সাহায্য করে না তারও কবরে আযাব হবে। যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে শিখেছে, কিন্তু সে রাতে তা তেলাওয়াত করে না এবং দিনের বেলায় কুরআন অনুযায়ী আমল করে না তারও কবরে আযাব হবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজের রাতে যেনাকারী নর-নারী, সুদখোর ও ঘুমিয়ে থেকে ফজরের সালাত পরিত্যাগকারীর আযাব দেখেছেন। যারা মালের যাকাত দেয়না, তাদের কবরেও আযাব হবে। মানুষের মাঝে যারা ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে, অহংকার করে, যারা লোক দেখানো আমল করে, মানুষকে নিন্দা করে তাদের কবরেও শাস্তি হবে। নাস্তিক ও অবিশ্বাসীরা তাদের বিবেক-বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের উপর নির্ভর করে কবরের আযাব ও নিয়ামতকে অস্বীকার করেছে। তাদের সর্বোচ্চ দলীল হলো আমরা কাউকে তার কবরে আযাব বা নিয়ামত ভোগ করতে দেখিনা বা কারো আযাবের শব্দ শুনিনা। শাইখুল ইসলামের বক্তব্য এখানেই শেষ। আমাদের জবাব হলো, কবরের আযাব ইলমে গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। সহীহ দলীলের ভিত্তিতে এর প্রতি ঈমান আনয়ন করতে হবে। এতে বিবেক-বুদ্ধির কোনো দখল নেই। আখিরাতের বিষয়গুলোকে দুনিয়ার বিষয়গুলোর উপর কিয়াস করা যাবে না। কোনো বিষয়ে মানুষের জ্ঞান না থাকা উক্ত জিনিষের অস্তিত্ব না থাকার প্রমাণ নয়। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন।