লগইন করুন
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত নবুওয়াতের ধারাসমূহের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে। কেননা তিনি প্রেরিত হয়েছেন কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের নিকট। যেমন আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾
‘‘আর আমি তো তোমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি। কিন্তু বেশীর ভাগ লোক জানে না’’। (সূরা সাবা: ২৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ﴾
‘‘আমি তোমাকে সৃষ্টিজগতের জন্য আমার রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি’’। (সূরা আন্বীয়া: ১০৭) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَىٰ عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا﴾
‘‘বরকতময় তিনি, যিনি তারঁ বান্দার উপর ফুরকান নাযিল করেছেন, যাতে তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারেন’’। (সূরা ফুরকান: ১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا﴾
‘‘হে মুহাম্মাদ! বলো, হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল হিসাবে এসেছি’’। (সূরা আরাফ: ১৫৮)
সুতরাং তার রিসালাত যেহেতু সমস্ত মানুষের জন্যই, তাই তার শরী‘আত পরিপূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে মানুষের সমস্ত প্রয়োজন পূরণে সক্ষম। এ শরী‘আত থাকতে অন্য শরী‘আতের প্রয়োজন নেই এবং অন্য কোনো নবী প্রেরণেরও দরকার নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا﴾
‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিলাম, আমার নিয়ামতকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসাবে মনোনীত করলাম। (সূরা আল মায়িদা: ৩) আল্লাহ তা‘আলা সূরা নাহালের ৮৯ নং আয়াতে বলেন,
﴿وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ﴾
‘‘আমি তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট বিবরণ স্বরূপ এবং মুসলিমদের পথ-নির্দেশ ও সুসংবাদ স্বরূপ’’। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ﴾
‘‘এর পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে আমি তোমার প্রতি সত্যসহ এ কিতাব অবতীর্ণ করেছি’’। (সূরা আল মায়িদা: ৪৮)
শাইখ আবুল আ’লা মাওদুদী কাদিয়ানীদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বলেছেন, আমরা যখন কুরআনে অনুসন্ধান ও গবেষণা চালাবো, তথন দেখতে পাবো যে, পৃথিবীর মানব জাতিসমূহের মধ্য থেকে যখন কোনো একটি গোষ্ঠির নিকট আল্লাহ তা‘আলা নতুন নবী-রসূল পাঠিয়েছেন, তখন চারটি কারণের যে কোনো একটি কারণ অবশ্যই বিদ্যমান ছিল।
(১) পূর্ব থেকে সেই মানব গোষ্ঠির নিকট কোনো রসূল ছিলেন না অথবা ইতিপূর্বে রসূল পাঠানো হয়নি কিংবা অন্য কোনো মানব গোষ্ঠির নিকট থেকে নবী-রসূলের শিক্ষা তাদের কাছে পৌঁছেনি।
(২) ইতিপূর্বে তাদের নিকট নবী-রসূল পাঠিয়েছেন ঠিকই; কিন্তু নবীর শিক্ষা মিটে গিয়েছিল কিংবা লোকেরা তা ভুলে গিয়েছিল অথবা লোকেরা তাতে পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধন করেছিল। এতে করে মানুষের পক্ষে সঠিক ও পরিপূর্ণভাবে নবীর অনুসরণ করা সম্ভব ছিল না।
(৩) পূর্বে নবী পাঠানো হয়েছিল ঠিকই; কিন্তু তার শিক্ষা পরবর্তীতে আগমন কারী সমস্ত মানুষের জন্য পরিব্যাপ্ত ছিল না এবং সর্বযুগের মানুষের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ছিল না। তাই দীনকে পরিপূর্ণ করার জন্য অতিরিক্ত নবী-রসূল পাঠানোর প্রয়োজন ছিল।
(৪) পূর্বে নবী পাঠানো হয়েছে ঠিকই; কিন্তু তাকে সত্যায়ন ও সমর্থন করার জন্য আরেকজন নবী পাঠানোর প্রয়োজন ছিল।
এ চারটি কারণের প্রত্যেকটিই নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের মাধ্যমে পূরণ হয়ে গেছে। সুতরাং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে প্রেরণ করার পর মুসলিম জাতির জন্য অথবা পৃথিবীর অন্য কোনো জাতির জন্য নতুন কোনো নবী প্রেরণের দরকার নেই।
কেননা কুরআন নিজেই বর্ণনা করার দায়িত্ব নিয়েছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমগ্র মানব জাতির নিকট প্রেরণ করা হয়েছে এবং সমস্ত মানুষের হেদায়াতের জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا﴾
‘‘হে মুহাম্মাদ! বলো, হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল হিসাবে এসেছি’’। (সূরা আল আরাফ: ১৫৮)
বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস প্রমাণ করে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের পর থেকে আজ পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠের প্রত্যেক প্রামেত্মর প্রত্যেক জাতির কাছেই তার রিসালাত পৌঁছার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং নবী-রসূল পাঠানোর প্রথম কারণ অনুপস্থিত।
কুরআনুল কারীম, হাদীছ ও সীরাতের কিতাবের ভা-ারগুলো সাক্ষ্য দেয় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে শিক্ষা নিয়ে এসেছেন তা এখনো প্রকৃত অবস্থায় রয়েছে। তাতে ভুল-ভ্রান্তি, বিকৃতি ও পরিবর্তন-পরিবর্ধন অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। তিনি যে কিতাব নিয়ে এসেছেন, তার মধ্যে কোনো বিকৃতি-পরিবর্তন হয়নি, তা থেকে একটি অক্ষরও কমানো হয়নি এবং একটি বাড়ানোও হয়নি। কিয়ামত পর্যন্ত তা হওয়াও সম্ভব নয়।
সে সঙ্গে তিনি তার কথা ও কাজের মাধ্যমে মানুষকে যে পথ প্রদর্শন করেছেন, তার প্রভাব আজও সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি যেন আমাদের সামনেই জীবিত রয়েছেন এবং আমরাও যেন তার সামনেই আছি। সুতরাং নতুন কোনো নবী আসার প্রয়োজন নেই। সুতরাং এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, নতুন নবী পাঠানোর দ্বিতীয় কারণও অনুপস্থিত।
কুরআন সুস্পষ্টরূপে ঘোষণা করেছে যে, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে নতুন নবী প্রেরণের তৃতীয় কারণও অনুপস্থিত।
অতঃপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহায্য ও সত্যায়ন করার জন্য যদি অন্য কোনো নবী পাঠানোর প্রয়োজন পড়তো, তাহলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশাতেই পাঠানো হতো। এর মাধ্যমে নতুন নবী পাঠানোর চতুর্থ সম্ভাবনাও বিদূরিত হলো। সুতরাং উপরোক্ত চারটি কারণ বিদূরিত হওয়ার পর আর কোনো খাস কারণ থাকতে পারে কি? আবুল আলা মাওদুদী রাহিমাহুল্লাহর বক্তব্য থেকে যেটুকু গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল, তা এখানেই শেষ।