লগইন করুন
التبرك অর্থ হলো বরকত অন্বেষণ করা, বরকত কামনা করা এবং উপরোক্ত জিনিসগুলোতে বরক আছে বলে বিশ্বাস করা। উপরোক্ত জিনিসগুলো থেকে বরকত অন্বেষণ করা বড় শিরক। কেননা এর মাধ্যমে বরকত হাসিলের জন্য আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য জিনিসের উপর ভরসা করা হয়ে থাকে। মূর্তিপূজকরা উপরোক্ত জিনিসগুলো থেকে বরকত অন্বেষণ করতো। সৎ লোকদের কবর থেকে বরকত হাসিল করাও বড় শিরক। যেমন লাত নামক মূর্তি থেকে বরকত লাভ করা, গাছ ও পাথর থেকে বরকত হাসিল করা এবং উয্যা ও মানাত নামক মূর্তি থেকে বরকত লাভ করা সৎ লোকদের কবর থেকে বরকতের আশা করার মতোই।
আবু ওয়াকিদ আল-লাইছী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
خَرَجَنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى حنين ونحن حدثاء عهد بكفر لِلْمُشْرِكِينَ سدرة يعكفون عندها و يُعَلِّقُونَ عَلَيْهَا أَسْلِحَتَهُمْ يُقَالُ لَهَا ذَاتُ أَنْوَاطٍ فَمررنا بسدرة فقلنا يَا رَسُولَ اللَّهِ اجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ. فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم اللَّهُ أَكْبَرُ إنها السنن قلتم والذي نفسي بيده كما قالت بنوا إسرائيل لموسى ﴿اجْعَلْ لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ﴾ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ
‘‘আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হুনাইন যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি। এক স্থানে মুশরিকদের একটি বড়ইগাছ ছিল। তারা সেটার পাশে অবস্থান করতো এবং তাদের সমরাস্ত্র তাতে ঝুলিয়ে রাখতো। গাছটিকে তারা ذات أنواط ‘যাতু আনওয়াত’ বা বরকত ওয়ালা গাছ বলতো। আমরা একদিন একটি বড়ই গাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! মুশরিকদের যেমন ‘যাতু আনওয়াত’ আছে আমাদের জন্যও অনুরূপ ‘যাতু আনওয়াত’ নির্ধারণ করে দিন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহু আকবার! এটি পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতি ছাড়া আর কিছু নয়। যার হাতে আমার জীবন তার শপথ! তোমরা এমন কথাই বলেছ, যা বনী ইসরাঈলের লোকেরা মূসা (আ.) কে বলেছিল। তারা বলেছিল, ‘‘হে মূসা! মুশরিকদের যেমন মাবুদ আছে আমাদের জন্য তেমনি একটি মাবুদ নির্ধারণ করে দাও। মূসা (আ.) তখন বললেন: তোমরা একটি মূর্খ জাতি। ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতিই অবলম্বন করছো।[2] ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেছেন।
[1]. البركة বরকত শব্দটির অর্থ হচ্ছে কল্যাণকর বস্তুসমূহ এক স্থানে একত্রিত ও স্থায়ী হওয়া এবং বৃদ্ধি হওয়া। আর التبرك তাবাররুক অর্থ হলো প্রচুর কল্যাণ অনুসন্ধান করা এবং বরকত স্থায়ী হওয়ার প্রার্থনা করা। সে হিসাবে تبرك অর্থ হচ্ছে সে বরকত তালাশ করলো।
কুরআন ও সহীহ হাদীছের অনেক দলীল প্রমাণ করে যে, বরকত কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলাই বরকত প্রদান করেন। কোন মানুষ অন্য কোনো মানুষকে বরকত দান করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا﴾
‘‘বরকতের অধিকারী তিনি যিনি তার বান্দার প্রতি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হয়’’। (সূরা ফুরকান: ১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
‘‘বরকতের মালিক তিনি, যার হাতে রাজত্ব। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান’’। (সূরা মূলক: ১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَبَارَكْنَا عَلَيْهِ وَعَلَى إِسْحَاقَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَظَالِمٌ لِنَفْسِهِ مُبِينٌ﴾
‘‘তাকে এবং ইসহাককে আমি বরকত দান করেছি। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মী এবং কতক নিজেদের উপর স্পষ্ট যুলুমকারী’’। (সূরা আস্ সাফ্ফাত: ১১৩) আল্লাহ তা‘আলা ঈসা আলাইহিস সালাম এর উক্তি উল্লেখ করে আরো বলেন,
﴿قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آَتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنْتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا﴾
‘‘সে বললো, আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততোদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে’’। (সূরা মারইয়াম: ৩০-৩১) সুতরাং বরকত দানকারী একমাত্র আল্লাহ। কোনো সৃষ্টির জন্য জায়েয নয় যে, সে বলবে, আমি এ জিনিসকে বরকতময় করেছি কিংবা তাতে বরকত দিয়েছি। বরকত অর্থ হচ্ছে কল্যাণ ছড়িয়ে পড়া ও তা স্থায়ী হওয়া।
কুরআন মজীদ ও পবিত্র সুন্নাত প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা বেশ কিছু বস্তুকে বরকতময় করেছেন। সেগুলো ব্যতীত বিনা দলীলে অন্য কোনো বস্তুকে বরকতময় মনে করা অন্যায় এবং তা থেকে বরকত তালাশ করা অবৈধ। নিম্নে কতিপয় বরকতময় বিষয়ের বিবরণ পেশ করা হলো।
(১) বরকতময় স্থানসমূহ: বরকতময় স্থানসমূহের অন্যতম হলো, মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী, মসজিদুল আকসা, মক্কা মুকাররামাহ, মদীনা মুনাওয়ারা, সিরিয়া, ইয়ামান এবং হজ্জের পবিত্র স্থান সমূহ যেমন আরাফাহ্, মুযদালিফাহ্, মিনা ইত্যাদী। তা ছাড়া পৃথিবীর সকল মসজিদই বরকতময়। এ সমস্ত স্থান থেকে শরীয়াত সম্মত পদ্ধতিতে বরকত হাসিলের চেষ্টা করতে হবে। খালেস নিয়তে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমেই এ সকল পবিত্র ও বরকতময় স্থান থেকে বরকত লাভের আশা করতে হবে। বরকতপূর্ণ স্থান দ্বারা শরীয়াত সম্মত নিয়মের পরিপন্থি পদ্ধতিতে বরকত হাসিলের চেষ্টা করা সম্পূর্ণ নিষেধ। সুতরাং বরকতের আশায় মসজিদ সমূহের দরজা গুলোকে চুম্বন করা, সেটার মাটি দ্বারা রোগ মুক্তির আশা করা, কাবা শরীফের দেয়াল অথবা মাকামে ইবরাহীম ইত্যাদিকে স্পর্শ করা নিষেধ।
(২) কতিপয় বরকতময় সময়: আল্লাহ তা‘আলা যে সমস্ত স্থানকে বরকতময় করেছেন তার মধ্যে লাইলাতুল কদরসহ রামাযানের শেষ দিনগুলো, দশই যুল হজ জুমআর দিন, প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। এ সকল ক্ষেত্রে বরকতের অনুসন্ধান হতে হবে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশিত পন্থার অনুসরণ করে এবং তাতে এবাদত-বন্দেগী করার মাধ্যমে। এ সমস্ত সময়ে ইবাদত করে যে পরিমাণ ছাওয়াব পাওয়া যাবে, অন্যান্য সময়ে ইবাদত করে তা পাওয়া যাবে না।
(৩) বনী আদমের বরকতময় সন্তানসমূহ: আল্লাহ তা‘আলা আদমের সন্তানদের থেকে মুমিনদেরকে বরকত দান করেছেন। এ ক্ষেত্রে মুমিনদের সরদার নবী-রাসূলগণ সকলের উর্দ্ধে। তাদের শরীর বরকতময়। আল্লাহ তা‘আলা আদমের শরীরকে বরকতময় করেছেন এবং ইবরাহীম (আ.)এর শরীরে বরকত দান করেছেন। এমনিভাবে নূহ, ঈসা, মূসা এবং অন্যান্য সকল নবী-রাসূলের দেহকে বরকতময় করেছেন। সুতরাং নবী-রাসূলদের সম্প্রদায়ের কোনো লোক কিংবা তাদের কোন অনুসারী যদি তাদের শরীর থেকে বরকত হাসিল করে তাহলে তা জায়েয হবে। তাদের শরীর স্পর্শ করা, শরীরের ঘাম সংগ্রহ করা, তাদের চুল অথবা তাদের ব্যবহৃত অন্য যে কোনো জিনিস দিয়ে বরকত গ্রহণ করা জায়েয। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাদের শরীরকে বরকতময় করেছেন। আমাদের নবী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পবিত্র শরীরও বরকতময়। সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, সাহাবীগণ তার শরীরের ঘাম ও তার মাথার চুল দিয়ে বরকত গ্রহণ করতেন। তিনি যখন অযু করতেন, তখন অযুর অতিরিক্ত পানি নিয়ে তারা কাড়াকাড়ি শুরু করতেন। এমনটি আরো অনেক কথাই সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তার কারণ এই যে, আল্লাহ তা‘আলা নবীদের শরীরে এমন বরকত দান করেছেন, যার প্রভাব অন্যদের প্রতিও স্থানান্তরিত হয়। আর এটি নবী-রাসূলদের সাথেই নির্দিষ্ট। নবী-রাসূলদের ব্যক্তিসত্তাই বরকতময়।
নবী-রাসূলগণ ব্যতীত অন্য কারো ব্যক্তিসত্তা বরকতময় নয়। নবী-রাসূলদের কোন সাথীর ব্যক্তিগত বরকত ছিল বলে কোন দলীল পাওয়া যায় না। এই উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তি আবু বকর ও উমারের বেলায়ও এমনটি বর্ণিত হয়নি। তাদের ব্যক্তিসত্তাও বরকতময় ছিল বলে কোন দলীল পাওয়া যায় না। এ বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, সাহাবী ও তাবেঈগণ আবু বকর, উমার, উছমান আলী (রা.) কিংবা অন্য কোন সাহাবী থেকে বরকত গ্রহণ করতেন না। অথচ তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চুল, অযুর পানি, থুথু, ঘাম, ব্যবহৃত পোষাক এবং অন্যান্য বস্তু দিয়ে বরকত গ্রহণ করতেন। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, সাহাবীদের বরকত ছিল আমলের বরকত। তাদের ব্যক্তিসত্তার সাথে সম্পৃক্ত কোনো বরকত ছিল না, যা অন্যের প্রতি স্থানান্তরিত হতে পারে। যেমন ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরকত। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«إِنَّ مِنَ الشَّجَرِ لَمَا بَرَكَتُهُ كَبَرَكَةِ الْمُسْلِمِ»
‘‘একটি বৃক্ষ এমন রয়েছে, যার বরকত মুসলিমের বরকতের মতই’’। এই হাদীছ থেকে জানা যাচ্ছে যে, প্রত্যেক মুসলিমের মধ্যেই বরকত রয়েছে। বুখারীতে বর্ণিত উসাইদ ইবনে হুযায়ের (রাঃ)এর কথাও তাই প্রমাণ করে। তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হওয়ার পর তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,
«مَا هِىَ بِأَوَّلِ بَرَكَتِكُمْ يَا آلَ أَبِى بَكْرٍ»
‘‘হে আবু বকরের বংশধর! এটি তোমাদের প্রথম বরকত নয়’’। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, আয়েশা (রা.) বলেন: আমি কোন এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বের হলাম। আমরা যখন ‘বায়দা’ অথবা ‘যাতুল জায়শ নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন আমার গলার হার ছিড়ে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা তালাশ করার জন্য তথায় অপেক্ষা করলেন। লোকেরাও অপেক্ষা করল। সেখানে পানির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। লোকেরা আবু বকর (রা.) এর নিকট এসে বলতে লাগলো, আপনি কি দেখছেন না আয়েশা কী করেছেন? আল্লাহর রাসূল এবং সমস্ত লোককে এমন স্থানে আটকিয়ে দিয়েছেন যেখানে পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি তাঁদের সাথেও পানি নেই। আয়েশা (রা.) বলেন: আবু বকর (রা.) আমার নিকট আগমন করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আমার রানের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবু বকর (রা.) বলেন: আল্লাহর রাসূল এবং সমস্ত লোককে এমন স্থানে আটকিয়ে দিয়েছ যেখানে পানির কোন ব্যবস্থা নেই। এমনকি তাঁদের সাথেও কোন পানি নেই। আয়েশা (রা.) বলেন: আবু বকর আমাকে দোষারোপ করলেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি এ ধরণের আরো অনেক কথা বললেন। অতঃপর তিনি আমার কোমরে আঘাত করতে লাগলেন। আঘাত করা সত্ত্বেও আমি নড়াচড়া করতে পারলাম না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার রানের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। প্রাতঃকালে যখন তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন তখন সেখানে কোনো পানি ছিল না। এখানেই আল্লাহ তা‘আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন। উসায়েদ ইবনে হুযায়ের (রা.) বলেন, হে আবু বকরের বংশধর! এটি তোমাদের প্রথম বরকত নয়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি যে উটে আরোহন করেছিলাম সেটি যখন উঠালাম তখন দেখতে পেলাম হারটি তার নিচে পড়ে আছে।
সুতরাং এটি হচ্ছে, সেই বরকত যা প্রত্যেক মুমিনকেই দেয়া হয়েছে। আবু বকরের পরিবারকেও তা দেয়া হয়েছে। এটি হচ্ছে আমলের বরকত। তারা যেই সৎ আমল করেছেন, তার কারণেই এটি তারা পেয়েছেন। নবী-রাসূলদের বরকতের ন্যায় এটি তাদের সত্তাগত নয়। ঈমান-ইল্ম অর্জন, তার প্রচার এবং তদোনুযায়ী আমল করার কারণেই তারা বরকতপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের মধ্যেই কম বা বেশি বরকত রয়েছে। আর এই বরকত তার ব্যক্তিগত ও নিজস্ব বরকত নয়। এটি হচ্ছে সৎ আমলের বরকত। তার মধ্যে যে পরিমাণ ঈমান ও ইসলাম রয়েছে এবং তার অন্তরে যে পরিমাণ ইয়াকীন, আল্লাহর ভালবাসা, সম্মান এবং তাঁর রাসূলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে, তার মধ্যে সে পরিমাণ বরকতই রয়েছে। সুতরাং বান্দার ইলম, ঈমান ও সৎ আমলের মধ্যে যেই বরকত রয়েছে, তা একজন থেকে অন্যজনের কাছে স্থানান্তর হয় না।
সুতরাং আলেম ও সৎ লোকদের থেকে বরকত নেওয়ার অর্থ হচ্ছে, তাদের ইল্ম থেকে উপকৃত হওয়া, তাদের থেকে দীনি জ্ঞান অর্জন করা এবং তাদের পথ অনুসরণ করা। কিন্তু তাদের দ্বারা বরকত গ্রহণ করা ঠিক নয়। অর্থাৎ তাদের শরীর স্পর্শ করে, তাদের থুথু কিংবা অযুর পানি বা তাদের উচ্ছিষ্ট অন্যান্য বস্তু দ্বারা বরকত গ্রহণ করা হারাম। এ ব্যাপারে সর্বাধিক শক্তিশালী দলীল হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর এ উম্মতের আবু বকর উমার, উছমান ও আলী সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য সাহাবী ও তাবেঈগণ তাদের দ্বারা বরকত গ্রহণ করার চেষ্টা করেন নি।
সুতরাং বর্তমান যুগের যে সমস্ত লোক দাবি করে যে, সৎ লোকদের আছার তথা ব্যবহৃত ও উচ্ছিষ্ট বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা জায়েয, একাধিক কারণে তা সঠিক নয়।
(১) ইসলামের প্রথম যুগের সৎকাজে অগ্রগামী সাহাবী ও তাবেঈগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো আছার দ্বারা বরকত গ্রহণ করেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জীবদ্দশাতেও না, তাঁর মৃত্যুর পরেও না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা বরকত গ্রহণ করা জায়েয হলে এবং তা কল্যাণের কাজ হলে অবশ্যই তারা তা করতেন। সাহাবীদের মধ্যে সর্বোত্তম ছিলেন আবু বকর, উমার, উছমান ও আলী (রা.)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। কোনো সাহাবী অথবা কোনো তাবেঈ এই সমস্ত নেতৃস্থানীয় সাহাবী থেকে বরকত গ্রহণ করার চেষ্টা করেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কাউকে তুলনা করা বৈধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত থাকা কালে তাঁর অনেক বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সাথে সাথে সেগুলোর ধারাও চিরবিদায় নিয়েছে। আর যা তাঁর জীবদ্দশায় যা ছিল তাতে অন্য কারো শরীক হওয়া অশোভনীয়।
(২) শির্কের দরজা বন্ধ করার জন্য সৎ লোকের উচ্ছিষ্ট বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্চণীয়।
[2]. সহীহ: তিরমিযী ২১৮০, ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেছেন।