লগইন করুন
উত্তর : এ বিষয়ে শারঈ নিয়ম-কানুন হলো-
প্রথমত : মানুষ যেন আহলুল ‘ইলম ওয়াল বাছবীরাহ বা জ্ঞান ও প্রজ্ঞাবানদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে। তাদের নিকট থেকে ‘ইলম অর্জন করে[1], তার অন্তরে উদীয়মান কৌতূহল সম্পর্কে ‘আলিমদের নিকট পরামর্শ করে এবং তাদের মতামত কামনা করে।
দ্বিতীয়ত : ধীরস্থিরতার সাথে কাজ করা, কোন প্রকার তাড়াহুড়ো না করা এবং মানুষের উপর হুকুম (কাউকে কাফির বলা, মুনাফিক বলা, পথভ্রষ্ট বলা ইত্যাদি) লাগানোর ক্ষেত্রে দ্রুততা পরিহার করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْماً بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
‘হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের নিকট কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশতঃ কোন সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে (সূরা আল হুজুরাত ৪৯৬)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَى إِلَيْكُمُ السَّلامَ لَسْتَ مُؤْمِناً تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌ كَذَلِكَ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيراً
‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হবে তখন যাচাই করবে এবং যে তোমাদেরকে সালাম দেবে দুনিয়ার জীবনের সম্পদের আশায় তাকে বলবে না যে, তুমি মুমিন নও। বস্ত্ততঃ আল্লাহর কাছে প্রচুর গনীমত আছে। তোমরাতো পূর্বে এরূপই ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন। সুতরাং তোমরা যাচাই করবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত (সূরা আন-নিসা ৪:৯৪)।
উল্লেখিত আয়াতে যাচাই করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
অতঃপর যদি তা প্রমাণিত হয় তাহলে কঠোরতা ও বিশৃঙখলা পরিহার করে তা সংশোধনের চেষ্টা করা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
بشروا ولا تنفروا
‘তোমরা সুসংবাদ দাও, তাড়িয়ে দিও না’।[2]
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
إنما بعثتم ميسرين، ولم تبعثوا معسرين
‘তোমরা সহজকারীরূপে প্রেরিত হয়েছো। কঠোর হিসেবে প্রেরিত হওনি’।[3]
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু ফযীলতপ্রাপ্ত ছাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমাদের মধ্যে কিছু বিতাড়নকারী রয়েছো। সুতরাং যাকে মানুষের উপর নেতা নিয়োগ দেয়া হয় সে যেন হালকা করে (বাড়াবাড়ি না করে)। কেননা তার পেছনে অনেক দুর্বল ও মুখাপেক্ষী লোক রয়েছে।[4]
সর্বাবস্থায় সকল বিষয়ে হিকমাত ও প্রজ্ঞার সাথে সমাধান করতে হবে। কারো জন্য অনধিকার চর্চা করা উচিত হবে না।
তৃতীয়ত : আরেকটি মূলনীতি হলো: মানুষ আহলে ‘ইলমদের নিকট উঠাবসা করবে, তাদের মতামত শ্রবণ করবে, তাদের নিকট থেকে ইলমের পাথেয় গ্রহণ করবে। এমনিভাবে সালাফে সালেহীনের বই-পুস্তক ও উম্মাহর সালাফে সালেহীন উলামায়ে কিরামের জীবনচরিত পাঠ করার মাধ্যমে ইলম অর্জন করবে। তারা বিভিন্ন বিষয় কীভাবে সমাধান করতেন, কীভাবে মানুষকে উপদেশ প্রদান করতেন, তারা কীভাবে সৎ কাজের আদেশ প্রদান করতেন, কীভাবে অসৎ কাজ থেকে বারণ করতেন এবং তারা কীভাবে বিচার ফায়ছালা করতেন ইত্যাদি বিষয় যা তাদের জীবনীগন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। তাদের ঘটনাবলিতে উম্মাহর জন্য কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لأُولِي الأَلْبَابِ
‘তাদের এ কাহিনীগুলোতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা’। (সূরা ইউসূফ আয়াত নং ১১১)
প্রত্যেক মুসলিম এই উম্মাহর সদস্য। ইসলামের প্রারম্ভ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলিমের সমষ্টি হচ্ছে উম্মাহ। একজন মুসলিম সালাফে সালেহীনের মানহাজের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। সালাফদের সমাধান, রীতি ও দিকনির্দেশনা পর্যবেক্ষণ করবে, যাতে সেও তাদের পথে চলতে পারে। সে কোনো তাড়াহুড়োকারী অথবা জ্ঞান ছাড়া আহবানকারী মূর্খের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবে না।
বর্তমানে শারঈ বিষয়ে মূর্খদের থেকে অনেক বই-পুস্তক, লেকচার ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে,[5] যা আল্লাহ তা‘আলা এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ দেননি, এমন বিষয়ে মানুষদেরকে প্ররোচিত করে। যদিও সেগুলো সদিচ্ছা ও ভালো নিয়্যাতে হোক না কেন। একমাত্র কুরআন-সুন্নাহর অনুকূলে যা কিছু রয়েছে তাই হক। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্যান্য মানুষেরা ভুলও করে, ঠিকও করে। তাদের সঠিক কাজগুলো গ্রহণ করা হবে এবং ভুল-ত্রুটিগুলো পরিত্যাগ করা হবে।
[1]. আহলুল ‘ইলম ওয়াল বাছীরাহ হলো, যারা তাওহীদ ও মানহাজে সালফিয়্যাহর আলিমদের নিকট থেকে ‘ইলম অর্জন করে, সালাফে সালেহীনের মানহাজ বিরোধী কোন ব্যক্তির নিকট থেকে ‘ইলম অর্জন করে না। এমনিভাবে ইলম অর্জন করে না কোন সাহিত্যিক বা চিন্তাবিদ এবং নবীন আলিমদের নিকট থেকে।
[2]. বুখারী হা/৩২৭৪।
[3]. বুখারী হা/২১৭।
[4]. সহীহ বুখারী হা/৬৭২।
[5]. এর উদাহরণ হলো ‘‘আম্মা বা‘দ’’ শিরোনাম যুক্ত ক্যাসেট ও পুস্তিকা। যদিও উক্ত ক্যাসেটের বক্তা সুন্নাহ বিষয়ে ডক্টরেট অর্জন করেছে কিন্তু তার কথা দ্বারা বুঝা যায় যে সে ‘আকীদা বিষয়ে কিছুই জানে না। সে উক্ত ক্যাসেটের ভূমিকায় বলেন যে, ‘‘ কোথা থেকে শুরু করব? কীভাবে শুরু করব? হে রক্ত আমাকে সাহায্য করো, হে আমার হৃদয় আমাকে সাহায্য করো, হে রক্ত আমাকে বাচাঁও।’’ সে দশ বছর যাবত যে ইলম অর্জন করেছে সে ইলম অনুযায়ী আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট সাহায্য চাওয়া কি বৈধ? (ক্যাসেটের ভূমিকা এবং বইয়ে পৃ. নং ১৩)।