লগইন করুন
উত্তর : সালাফে সালেহীনগণ গল্পকারদের সমালোচনার মাধ্যমে সতর্ক করেছেন।[1]
তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভ্রূক্ষেপ করে না। যে তাদের কিচ্ছা-কাহিনী এবং মিথ্যা আছার দ্বারা সাধারণ লোকজনের উপর কি কুপ্রভাব পড়ছে। তারা সহীহ দলীলের উপর নির্ভর করে না।[2]
তারা জনগণকে দীন-ধর্ম-আকীদা বিষয়ক কোন কিছু শিখাতে পারে না। কেননা তারা ফিকাহ সম্পর্কে কিছুই জানে না।[3]
এদের বাস্তব নমুনা হলো বর্তমান কালের জামা‘আতে তাবলীগ। তাদের কর্মপদ্ধতি, তাদের সুফীবাদী দর্শন এবং কুসংষ্কার এর সবই আমাদের জানা।
এমনিভাবে কিচ্ছাকারেরা আযাব ও শাস্তি সংক্রান্ত আয়াত হাদীছের উপরই নির্ভর করে থাকে যার ফলে লোকজন আল্লাহ তা‘আলার রাহমাত থেকে নিরাশ হয়ে যায়।
[1]. সালাফে সালেহীনগণ গল্পকারদের সমালোচনার ক্ষেত্রে খুবই কঠোর ছিলেন।
আবু ইদরীস আল-খাওলানী বলেন, আমার মতে মসজিদের কোণে আগুন জ্বলতে থাকার দৃশ্য বেশি পছন্দনীয় তথায় কোন গল্পকারের গল্প বলার দৃশ্যও চেয়ে। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন ‘‘মসজিদে গল্প বলাকে আমি অপছন্দ করি। তিনি আরো বলেন আমি গল্পকারদের নিকট বসাকে অপছন্দ করি। গল্পের এই রীতি মূলত বিদআত।
শায়খ সালিম বলেন, ইবনু উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মসজিদ থেকে বের হতে হতে বলছিলেন,
‘‘তোমাদের এই গল্পকারের আওয়াজই আমাকে বের করছে ’’(আল হাওয়াদিছ ওয়াল বিদা‘ পৃষ্ঠা ১৯০)।
আমার মতে ‘‘তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষকে তাদের কিচ্ছা কাহিনী দ্বারা ইলমুন নাফি বা উপকারী ইলম অর্জন করা থেকে বিরত রাখে ইবনু সিরীন রহিমাহুল্লার নিকট আবেদন করা হয়েছিল আপনি যদি আপনার বন্ধু বর্গের নিকট কিচ্ছা বর্ণনা করতেন?
তিনি প্রতুত্তরে বলেন একমাত্র আমীর বা নেতা মা‘মুর বা নেতা কর্তৃক আদিষ্টব্যক্তি অথবা বোকা লোকেরাই জনসম্মুখে কথা বলে আমি তো আমীর অথবা মা‘মুর নই। আর আমি তৃতীয় জন হতে অপছন্দ করি।’’
দ্বমরাহ (রহ.) বলেন, আমি সুফইয়ান আছ-ছাওরী (রহ.) এর নিকট আবেদন করলাম,আমরা কি কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনাকারীদের নিকট থেকে (দীন) গ্রহণ করব? তিনি প্রতুত্তরে বলেন, তোমরা বিদাতীদের থেকে পশ্চাদপসারণ করো।’’
যখন সুলাইমান ইবনে মিহরাব আল-আ‘মাশ বাসরাহ নগরীতে প্রবেশ করলেন তিনি একজন কিচ্ছাকারকে মাসজিদে কিচ্ছা বর্ণনা করতে দেখতে পেলেন। সে (কিচ্ছাকার) বলছিল, ‘‘আ‘মাশ আমাদের নিকট আবু ইসহাক থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন এবং আ‘মাশ আবু ওয়ায়িল থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন।’’ তার একথা শ্রবণ করে তিনি (আ‘মাশ) মাজলিসের মাঝে গিয়ে হাত উঁচু করে বগলের পশম পরিষ্কার করতে লাগলেন। গল্পকার তাকে বলল, ইয়া শায়খ, আপনার কী লজ্জা নেই আমরা ইলম চর্চা করছি অথচ আপনি এহেন কাজ করছেন? আ‘মাশ (রহ.) প্রতুত্তরে বললেন, ‘আমি যা করছি তা তোমার কাজের চেয়ে উত্তম।’ সে বলল তা কীভাবে? তিনি বললেন, কেননা আমি একটা সুন্নাত পালন করছি আর তুমি মিথ্যাচার করছ!
আমিই আ‘মাশ আর তুমি যা বর্ণনা করছ এর কিছুই আমি তোমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করিনি। লোকজন যখন আ‘মাশ (রহ.) এর এই কথা শুনতে পেল তখন তার গল্পকারের নিকট থেকে সরে গিয়ে তার নিকট সমবেত হয়ে তাকে আবেদন করলো, ইয়া আবা মুহাম্মাদ, আমাদের নিকট হাদীছ বর্ণনা করুন। (কিতাবুল হাওয়াদিছ ওয়াল বিদা‘ পৃ. ১১১-১১২)।
এ বিষয়ে অনেক আছার বর্ণিত রয়েছে। আমি যদি সেগুলো উল্লেখ করতে থাকি তাহলে কিতাবের কলেবর বৃদ্ধি পাবে। আপনারা এবিষয়ে আরো জানতে (আল মুযাক্কির ওয়াত তাযকীর ওয়ায যিক্র, আল কছছাছ ওয়াল মুযাককিরীন,তাহযিরুল খওয়াছ্ছাছ মিন আকাযিবিল কছছাস এবং তারিখুল কসছাস কিতাবগুলো দেখুন।
[2]. ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, মানুষের মধ্যে বড় মিথ্যুক লোক হলো গল্পকার এবং অধিক প্রশ্নকারী। কিচ্ছাকারদের প্রতি মুখাপেক্ষী ব্যক্তি সত্যবাদী নয়; কেননা তারা মৃত্যু এবং কবরের আযাব সম্পর্কেও মিথ্যা কথা বলে। (তারত্বুশী, আল-হাওয়াদিছ ওয়াল বিদা‘)।
[3]. আল্লামা ড. মুহাম্মাদ সববাগ ‘‘তারীখুল কসছাস’’ নামক কিতাবের ৩০ নং পৃষ্ঠায় ‘আল-মুযাক্কির ওয়াত তাযকীর ওয়ায যিক্র’ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘ অনেকে মনে করে যে গল্পকারদের ক্ষতিকর বিষয়াবলির সাথে বর্তমান কালের কোন সম্পর্ক নাই। সেগুলো মূলতঃ ঐতিহাসিক বিষয়; যা কোনো কালে ছিল।’’
তাদের এই ধারণা ভুল বাস্তবতার সাথে তাদের এই কথার কোন মিল নাই। কেননা বর্তমানেও গল্পকারেরা রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো! তারা এখন অন্য নামে পরিচিত। তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেড়ায়।
যদি অতীতে ধোঁকাবাজ দাজ্জালেরা কছাস বা গল্পকার নামে অতিক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তারা বর্তমানে দাঈ, মুওয়াজজিহ, মুরুববী, উসতায, লেখক এবং মুফাক্কির বা চিন্তাবিদ ইত্যাদি নাম ও উপাধিতে আবির্ভূত হয়েছে।
অনেক লোকই তাদের বাস্তবতা সম্পর্কে জানে না। তাদেরকে এবং আল্লাহর পথের প্রকৃত সৎ দাঈদেরকে একই রূপ মনে করে।
বর্তমান কালের অনেক গল্পকার দাঈদের মুখোশ ধারণ করছে। তারা প্রায় বিশ্বের সকল শহরে-নগরে ছড়িয়ে পড়ে মিথ্যাচার করছে এবং বিদআতের প্রতি আহবান করছে। তাদের অধিকাংশ কথা-বার্তা, কিচ্ছা-কাহিনী এবং নির্বুদ্ধিতাজ্ঞাপক, উদাহরণ ও প্রবাদ প্রবচন থেকে হয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেক সদস্যই কুরআন হাদীছের মত গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো মুখস্থ করে। ভিত্তিহীনভাবে বানিয়ে বানিয়ে ফযীলত বর্ণনা করে এবং দুনিয়া বিমুখতা বা সন্যাস বিষয়ে আলোচনা করে এমনকি আপনি দেখতে পাবেন তাদের কেউ কেউ ভ্রান্তির পক্ষে দলীল পেশ করার জন্য কুরআন-সুন্নাহর মাঝে রদ-বদল করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ‘‘তাদের কেউ কেউ দুনিয়া বিমুখতা এবং কিয়ামুল লাইলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এ কাজটা ভালো। তবে তারা তাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ করে না। কখনও কখনও এমন হয় যে লোকজন পাপ কাজ থেকে তাওবাহ করে তাদের দ্বারা বিদআত এবং কুসংষ্কারে নিমজ্জিত হয়। অথবা তারা তাদের অন্তরে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে, এক দেশ থেকে অপর দেশে ভ্রমণ করার নেশা প্রবেশ করিয়ে দেয়। তারা তাদের মানহাজ অনুযায়ী দাওয়াত প্রদান করা ওয়াজিব মনে করে। যাতে এভাবে দাওয়াত প্রদান করতে করতে তাদের আত্মশুদ্ধি হয় এবং অন্তর যাবতীয় আকাঙ্খা থেকে মুক্ত হয় ( তাদের দাবি অনুযায়ী)। তারা পরস্পরের উপর নির্ভর করে। তাওয়াক্কুলের উপর নির্ভর করে না। তারা আসবাব বা মাধ্যম গ্রহণ করাকে পরিহার করে। তাদের অনেকেই পরিবার পরিজনকে নিঃস্ব অবস্থায় রেখে যায়। তাদের বাড়ির লোকজনের দেখাশুনা, ব্যবস্থাপনা করা এবং প্রয়োজন পূরণ করার মত কেউই থাকে না। তাদের অনেকেরই পরিবার নষ্ট হয়ে যায়। তাদের কাউকে পাবেন না যে যে লোকজনকে তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ব এবং শিরক পরিহার করতে আহবান করছে এবং শিরকের প্রতি আহবানকারীদের থেকে সতর্ক করছে। কেননা এটা তাদের দাওয়াত বা মানহাজের অমর্ত্মভুক্ত নয়। এই হলো বর্তমান কালের গল্পকারদের প্রকৃত অবস্থা।’’
আমি বলি, এটা হলো প্রকৃতপক্ষে তাবলীগ জামাত ফিরকার অবস্থা। আপনি যদি মনে করেন, তারা তো তাওহীদের প্রতি এবং শিরকের বর্জন করতে আহবান করে তাহলে আপনার জন্য ধ্বংস অনিবার্য।
একই অবস্থা হলো অন্য ফিরকাগুলোরও। তারা আল্লাহর প্রতি দাওয়াত প্রদানের পোশাক ধারণ করে বিভিন্ন মঞ্চে-মাহফিলে আরোহণ করে। তাদের বক্তৃতার ধারণ একটাই তাহলো চিল্লাচিল্লি করা, মিথ্যাচার করা, কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করা, কুরআনুল কারীমের আয়াতের অপব্যাখ্যা করা। জাল হাদীছ বর্ণনা করা, ইসরাঈলী কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করা এবং উল্লেখিত ভিত্তিহীন বিষয়াবলির দ্বারা হুকুম নিরূপণ করা।
আমি বলব এদের এই গুণাবলি মূলত সুফীবাদীদের গুণ। আর সুফীবাদীদের ভ্রান্তি সম্পর্কে কিইবা আছে জিজ্ঞাসা করার?
‘‘তাদের অনেকে তো নাটক ও ইসলামী গানের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবানের অপচেষ্টায় রত।
আল-মুওয়াশশিহাত (স্পেনে উদ্ভাবিত কবিতা বিশেষ) সুন্নাহ বিরোধী। আল্লাহর দীনে গান-নাটক ইত্যাদির কোন স্থান নাই। এগুলোর সাথে ইসলামী নাম যুক্ত হওয়ার কারণে তা যেন আপনাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে দেয়। এগুলোর সবই পাশ্চাত্যের রীতি অথবা সুন্নাহ বিরোধী রাফিযী শী‘আ এবং সুফীদের রীতি। আল্লাহ তা‘আলাই প্রকৃত সাহায্যকারী।
আমি বলব ফিরকায়ে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের মাঝেও এই দোষগুলো বিদ্যমান। আপনি হাসানুল বান্নার সাহায্যকারী এবং তাদের কর্মীবাহিনীর সমালোচনা করুন এতে কোন সমস্যা নাই।
এতদত্ত্বেও আমরা কিছু সংখ্যক বিদ্বানকে পাই যারা তাদের ব্যাপারে নিরব থাকেন। বরং ক্ষেত্রে বিশেষে তাদের বাতিল বিষয়েও তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। এটা বড়ই মারাত্মক বিষয় যে তারা সাধারণ জনগণের মাঝে ইখওয়ানীদের ভ্রষ্ট দাওয়াত প্রচার-প্রসারে সাহায্য সহযোগিতা করছে। (এই ছিল মুহতারাম শায়খ খালিদ আর-রদাদীর ‘আল মুযাক্কির ওয়াত তাযকীর ওয়ায যিক্র’’ কিতাবের ৩০-৩১ থেকে উদ্ধৃত। আল্লাহ তা‘আলা তাকে হিফাযত করুন। আমীন।)