মানহাজ (আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ) নিত্য নতুন মানহাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উপকারী জবাব শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
প্রশ্ন-৮৪ : মুহতারাম শায়খ জামাত আঁকড়ে ধরা এবং ইমামের নির্দেশনা শ্রবণ করা ও আনুগত্য করার ব্যাপারে সংক্ষিপ্তাকারে নির্দেশনা দিবেন কি?

উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম উম্মাহকে হকের উপর অটল থাকতে এবং দলাদলি ও মতবিরোধ পরিত্যাগ করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعاً وَلا تَفَرَّقُوا }

তোমরা একত্রিতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে-ইমরান আয়াত নং-১০৩) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

{ وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ }

তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট হিদায়াত আসার পর মতানৈক্য করে পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে বড় শাস্তি। (সূরা আলি ইমরান আয়াত নং, ১০৫)

মুসলিম উম্মাহর মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে তা সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ * إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ}

আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায় বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় বিচারকারীদের ভালোবাসেন। নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করো, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। (সূরা আল হুজুরাত ৯-১০)

এটা সর্বজন জ্ঞাত বিষয় যে, সৎ নেতার নেতৃত্ব ছাড়া মুমিনদের মাঝে ঐক্য ও জামাত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।সৎ মুসলিম নেতা জালিমকে প্রতিরোধ করবেন এবং মাযলুমের প্রতি ইনসাফ কায়িম করবেন। রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করবেন। উল্লেখিত কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করলে সে রাষ্ট্র ইসলামী শরী‘আতের বিধিবিধান বাস্তবায়িত হবে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে আসবে। এই জন্যই ইমাম (মুসলিম উম্মাহর এক অভিন্ন নেতা) নির্ধারণ করা ওয়াজিব মর্মে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলিমগণের মাঝে ইজমা‘ সংঘটিত হয়েছে।[1]

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিরোধানের পর ইমাম নির্বাচন/নিযুক্ত না করা পর্যন্ত ছাহাবীগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর লাশ দাফনে মনোনিবেশ করেননি। আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এর, হাতে বায়‘আত গ্রহণের পরেই তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লাশের দাফন-কাফন করেন। এর দ্বারা বুঝা যায়, ইমাম নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ব্যাপারে মোটেও অবজ্ঞা করা উচিত নয়।


[1]. শাসক ফসিক বা পাপাচারী হলেও তার আনুগত্য করতে হবে। কেননা পৃথিবীতে আল্লাহর হুকুম আহকাম কায়িম করা, শারঈ বিধি-বিধিান বাস্তবায়ন করা আল্লাহর নিকট অন্যান্য আদেশ অমান্য করা এবং জনগনকে বিশৃঙ্খলায় ছেড়ে দেয়ার চেয়ে উত্তম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘পৃথিবীবাসীর জন্য ৪০ দিন সকালে বৃষ্টির পানি লাভ করা থেকে পৃথিবীতে একটি হদ (শারী‘আত নির্ধারিত কোন কাজের দণ্ডবিধি) বাস্তবায়িত হওয়া উত্তম। (সিলাসিলাতুল আহাদিছিছ সহীহাহ হা/২৩১)।