লগইন করুন
উত্তর : আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাত বিরোধী মানহাজ সমূহ থেকে সতর্ক করা মুসলিমদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা নয় বরং ঐক্য স্থাপন করা বুঝায়।[1] মূলতঃ সালাফদের মানহাজ বিরোধী মানহাজগুলোই মুসলিমদের জামাতের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করে।
[1]. সুন্নাহ নিয়ে আলোচনা করা সুন্নাহ কায়িম করা এবং সুন্নাহর প্রতি আহবান করার দ্বারা অতীতে কোন দিন মুসলিমদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা আসেনি এবং ভবিষ্যতেও আসবে না। এমনি ভাবে বিদাতী এবং প্রবৃত্তিবাদীদের থেকে সতর্ক করার দ্বারাও মুসলিমদের জামা‘আতে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা হয় না। বরং এসবই মুসলিমদের ঐক্য বজায় রাখা বলে বিবেচিত হয়।
এর দলীল হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আম (ব্যাপক) ভাবে তার ছাহাবীদেরকে খারিজীদের থেকে সতর্ক করেছেন। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ হাদীছ ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি।
বিদাতী এবং প্রবৃত্তিবাদীদের ব্যাপারে নিরব থাকা সালাফে সালেহীনের মানহাজ নয়। অনেকে বলে তোমরা আলিমদের গিবত করো না। কখনো কখনো বলে ‘আলিমদের গোস্ত খুবই বিষাক্ত’। কখনো বলে ‘জনগণকে সংশয়ে ফেলো না’। কখনো বলে, ‘মুসলিমদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করো না’। আমরা যেন আমাদের তীব্র বিরোধী শত্রুদের মুক্বাবিলায় একাত্ম হই। কখনো কখনো মিষ্টি ভাষায় বলে এবং এটা বেশি বেশি শোনা যায় ‘ তোমরা তোমাদের ভাইদের সমালোচনা করছ /মতামত খণ্ডন করছ আর কাফির, মুশরিক ও ধর্মনিরেপেক্ষবাদীদেরকে ছেড়ে দিচ্ছ? অথবা এরকম বাক্য বলে থাকে। একথাগুলো সত্য কিন্তু এর দ্বারা তাদের মতলব খারাপ। বরং একথাগুলোর দ্বারাই তারা মুসলিমদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে চায়। এরা মূলত আমাদের শত্রু। ঘরের শত্রু বাইরের শত্রুর চেয়ে বেশি মারাত্মক। ‘‘আর-রদ্দু ‘আলাল মুখালিফ মিন উছবুলিল ইসলাম’ নামক গ্রন্থের ৮৭ নং পৃষ্ঠায় শায়খ বাকর আবু যায়দ বলেন, আলিমগণ শক্তিবান। প্রত্যেকেই তার শক্তি-সামর্থ অনুযায়ী ইসলামের ভালোর তরে কাজ করে। সবাই শত্রুদের থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে চেষ্টা করে। তাদের কেউ নাস্তিকদের মতামত খণ্ডন করে, কেউ বিদাতীদের সূক্ষ্ম বিদআতের ম্যারপ্যাচ উদঘাটন করে, কেউবা ফাসিক-ফুজ্জারদের মতামত খণ্ডন করে থাকে। কেউবা দূর্লভ কোন বিষয়ের মতামত খণ্ডন করে থাকে। মোটকথা প্রত্যেকেই তার যোগ্যতা ও কার্যক্ষমতা অনুযায়ী এ কাজগুলো করে থাকে। তিনি ৭৯ নং পৃষ্ঠায় বলেন, বিরোধীদের থেকে নিশ্চুপ থাকা এবং সৎ লোকদের থেকে দূরে অবস্থান করার দ্বারা দীন-দুনিয়া উভয় প্রকার ক্ষতি হয়ে থাকে।
(ক) আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের চেয়ে আহলুল বিদ‘আহ ওয়াদ্ব দ্বলালাহর মর্যাদা উচ্চ হয়।
(খ) সন্দেহ-সংশয় ছাড়িয়ে পড়ে।
(গ) বিশুদ্ধ ‘আকীদার মাঝে তাদের সন্দেহ-সংশয় প্রবেশ করে।
(ঘ) প্রতিষ্ঠিত ‘আকীদাকে তার অবস্থান থেকে দূরীভূত করে। এভাবে ‘আকীদাকে দুর্বল করে ফেলা হয়।
(ঙ) সমাজে এবং মঞ্চে বাতিলপন্থি লোকেরা প্রকাশ পায়।
(চ) সুন্নাত ও বিদআত, সৎ-অসৎ এর মাঝের পার্থক্য দূর হয়ে যায়।
(ছ) লোকজন বাতিল কাজে তৃপ্তি পায়।
(জ) ইসলামের শান-শওকত নষ্ট হয়ে যায়।
(ঝ) আক্রমণকারীরা আলিমদের অবাধ্যাচরণ করে। এবং তাদের নছীহতকে ভয় পায়।
সম্মানিত পাঠক উল্লেখিত বইটি পড়ে নেওয়ার জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করছি। বিদআত-প্রবৃত্তিবাদীদের মতামত খণ্ডন ও তাদের থেকে সতর্ক করতে অনেক উত্তম ফলাফল বিদ্যমান।
বাকর আবু যায়দ হাফিযাহুল্লাহ বলেন, বিরোধীদের মতামত খণ্ডন দ্বারা শরী‘আতের চাহিদা পূরণ করা হয় এবং তাতে উত্তম ফলাফল বিদ্যমান যা মুসলিমদের জীবনে সাফল্য বয়ে আনে। যেমন; নিরবতা থেকে সৃষ্ট অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা যায়, সুন্নাহর প্রচার-প্রসার করা, মৃত সুন্নাত সমূহকে পুনরুজ্জীবিত করা, সুন্নাহর প্রতি আমল করা অথবা এর প্রতি দাওয়াত দেয়ার মাদ্যমে সফলতা আসে। এমনিভাবে বিরোধীদের মতামত খণ্ডন করা, তাদেরকে নছীহত করা, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধীদের থেকে প্রাঙ্গনকে মুক্ত করা, যারা কুরআন-সুন্নাহর বিরোধীতা করে, বিদআত ও পাপাচার করে, আর মুসলিমদেরকে কষ্ট দেয়। (আর-রদ্দু ‘আলাল মুখালিফ পৃ. ৮৩)।