মানহাজ (আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ) নিত্য নতুন মানহাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উপকারী জবাব শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
প্রশ্ন-৪৩ : যে ব্যক্তি অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজকে মানুষের জন্য আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে তাকে কি কাফির বলা যাবে?

উত্তর : যারা কুফুরীর পথে আহবান করে তাদেরকে কাফির বলা হবে। আর তারা কুফুরী ও শিরকী কাজ বাদ রেখে যদি কোন পাপের পথে আহবান করে তাহলে তাদেরকে কাফির বলা যাবে না।[1] তবে এর কারণে তারা পাপী হবে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من دعا إلى هدى كان له من الأجر مثل أجور من تبعه، لا ينقص ذلك من أجورهم شيئاً، ومن دعا إلى ضلالة كان عليه من الإثم مثل آثام من تبعه لا ينقص ذلك من آثامهم شيئاً

যদি কেউ কোন ব্যক্তি হিদায়াত বা পথ প্রদর্শন মূলক কাজে আহবান করে তাহলে আহূত ব্যক্তি আহবান অনুসারে সাড়া দিয়ে যে পরিমাণ ছাওয়াব পাবে। আহবানকারীও সে পরিমাণ ছাওয়াব পাবে। এতে কারো ছাওয়াব থেকে কোনকিছু কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি কাউকে পাপের পথে আহবান করে  তাহলে তার আহবান শুনে যে ব্যক্তি সেই পাপ সম্পাদন করবে তাহলে এর দ্বারা আহবানকারী ও পাপকাজ সম্পাদন কারী উভয়েই পাপী হবে। উভয়ের পাপের মাঝে কোন তারতম্য হবে না।[2] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لِيَحْمِلُوا أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ أَلا سَاءَ مَا يَزِرُونَ

এতে করে তারা কিয়ামতের দিনে নিজেদের পাপের বোঝা পুরোটাই বহন করবে এবং তাদের পাপের বোঝাও যাদেরকে তারা অজ্ঞতা হেতু পথভ্রষ্ট করে। তারা যা বহন করবে, তা কতইনা নিকৃষ্ট (সূরা আন নাহল ২৫)।


[1]. ‘আশ-শাবাব আসইলাতুন ওয়া মুশকিলাতুন’ নামক ক্যাসেটে বলা হয়েছে যে, এখানে একটি সংগঠন রয়েছে যেখানে একজন অথবা কিছু সংখ্যক শিল্পী রয়েছে যারা পদচ্যুত যুবকদের মাঝে ক্যাসেট আদান প্রদান করে, যে ক্যাসেটগুলো নোংরামিতে ভরপূর। ক্যাসেটে যিনা, ব্যাভিচার ইত্যাদি বিষয়ে কথা আছে। তারা এগুলো নিয়ে গর্ববোধ করে। তারা আশা করে যে সকল মানুষ তাদের চরিত্র গ্রহণ করবে।... যদি বিষয়টি এমনই হয় তাহলে আমি নিশ্চিত যে, এই কাজগুলো সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় তা খুব কমই বলা হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই পাপকে হালকা মনে করা বিশেষত যে পাপগুলোকে সর্বসম্মতক্রমে কাবীরাহ বা বড় পাপ বলা হয় সেগুলোকে হালকা মনে করা আল্লাহর সাথে কুফুরী করার শামিল। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শিল্পীদের দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি যেই হোক না কেন যারা যুবকদের মাঝে এধরণের ক্যাসেট বিনিময় করে তারা মূলতঃ নিকৃষ্ট ব্যবসা করে থাকে। তারা নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এমনকি তাদের সাথে লোকেরা দাবি করছে যে তারা এসকল বিষয়ে আল্লাহর হারাম বিশ্বাস করে না। নিঃসন্দেহে তাদের এ কাজগুলো রিদ্দাহ বা ইসলাম পরিত্যাগের নামান্তর। (আমি নিশ্চিতভাবে বলছি) ঐ ব্যক্তির প্রতি আমার (টীকারের) জবাব হলো,

ক. অনেক ক্ষেত্রে মানুষ বেখিয়ালে পাপকাজ করে থাকে। এ ব্যক্তি জানতে পারার সাথে সাথেই তাওবা করে এবং তার এই পদস্খলনের জন্য ইসতিগফার কামনা করে।

খ. ব্যক্তি হারাম স্বীকার করা স্বত্ত্বেও প্রবৃত্তির তাড়না, শয়তানের ওয়াসওয়াসা অথবা নফসে আম্মারার ধোঁকায় পড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে পাপকাজ সম্পাদন করে থাকে। আর সে উক্ত হারাম কাজ করার সময় তার পাপকে তুচ্ছ মনে করে থাকে। নতুবা সে উক্ত কাজ করত না। এই ব্যক্তিকে কাফির বলা যাবে না।

গ. পাপকে হালাল মনে করে এবং স্বীকার করে যে উক্ত কাজ করা বৈধ: যেমন যিনা হালাল, মদ হালাল ইত্যাদি। তাহলে নিঃসন্দেহে উক্ত ব্যক্তি কাফির ।

আমি এই লেকচারারকে বলব, তোমার পূর্বে আর কে একথা বলেছে যে পাপকে তুচ্ছ মনে করা কুফুরী এবং রিদ্দাহ বা ইসলাম পরিত্যাগ করার অন্তর্ভুক্ত?

বরং আমাদের দীন অনুযায়ী যতক্ষণ পর্যন্ত হালাল না মনে করবে ততক্ষণ পর্যন্ত কুফুরীর পর্যায়ে পড়বে না। আর হালাল মনে করলে তা কুফরী বলে গণ্য হবে।

[2]. মুসলিম হা/২৬৭৪, আহমাদ ২/৩৯৭, আবু-দাউদ হা/৪৬০৯, তিরমিযী হা/২৬৭৪। প্রত্যেকেই আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন।