লগইন করুন
উত্তর : আমি বলব, উসূল (শরী‘আতের মূলনীতি) ও ফুরু‘ (শাখা-প্রশাখাগত বিষয়) উভয় দিক থেকে শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব (রহ.) এর দাওয়াত ছিল সালাফে সালেহীনের কর্মপন্থা অনুযায়ী।[1]
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) এর দাওয়াত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত ছেড়ে অন্য কোন দল গঠন করা উদ্দেশ্য নয়।
আর ইখওয়ানুল মুসলিমীন, তাবলীগ বা এ রকম সকল[2] দলের প্রতি আমাদের আহবান হলো: তারা কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সালাফে হিদায়াতের ক্ষেত্রে সালাফে সালেহীনের বুঝের সাথে তাদের মানহাজকে যাচাই করুক। যতটুকু এগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে আলহামদুলিল্লাহ তা গ্রহণ করবে। আর যা এগুলোর বিপরীত হবে সেগুলো পরিত্যাগ করবে। এটাই হলো তাদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহবান।
[1]. দেখুন, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) এর অনেক কিতাবাদি বিদ্যমান যেগুলো সহীহ আকীদা ও বান্দার উপর আল্লাহর অধিকার; তাওহীদের বর্ণনা ও তাওহীদ বিধ্বংসী বিষয়াবলির বর্ণনায় ভরপুর। শায়খ এর সুরভিত জীবন চরিত মানুষদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত করা ও আল্লাহ ব্যতীত বাকি সকল কিছুর ইবাদত ছাড়ার আহবানে কেটেছে। আর এটাই ছিল সকল নাবী-রসূলদের দাওয়াত। সুতরাং আমরা বলব তাওহীদের প্রতি আহবানই হলো ইমাম মুজাদ্দিদ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) এর দাওয়াত যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে এবং দেশকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। আল-হামদুলিল্লাহ আমরা এখনো অটল রয়েছি, আমরা তার বারাকাতময় দাওয়াতের ছায়ায় বসবাস করছি।
[2]. ইখওয়ানুল মুসলিমীনের দাওয়াতের ব্যাপারে আমাদের প্রশ্ন হলো, এর প্রতিষ্ঠাতা বা কোন অনুসারী আজ পর্যন্ত তাওহীদ ও বিশুদ্ধ ‘আকীদার বর্ণনা সম্বলিত কোন বই লিখেছে কী? হাসানুল বান্না কী আল্লাহর ইবাদতে ইখলাছ বা একনিষ্ঠতার সাথে ইবাদত করার ও যাবতীয় শিরক বর্জন করার জন্য আহবান করেছে?
তারা কী গম্বুজ ভেঙ্গেছে? ভেঙ্গেছে কী কোন উঁচু কবর? আওলিয়া ও নেক বান্দাদের কবর দ্বারা ওসিলা গ্রহণ করা থেকে বারণ করেছে কী? তারা কী সুন্নাহ কায়িম করেছে?
উল্লেখিত কোন প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর নেই। বরং যে ব্যক্তি সালাফদের আকীদা সম্পর্কে জানে সে যদি সালাফদের আকীদার সাথে ইখওয়ানের দাওয়াত পর্যালোচনা করে এবং ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্নার বই-পত্র পড়ে তাহলে দেখতে পাবে যে, তার দাওয়াত শিরক-বিদআত মূলোৎপাটনে ছিল না। বরং ছিল এর বিপরীত।
হাসানুল বান্না বলেন: আমি দামানহুরে হাসফিয়্যাহদের সাহচর্য গ্রহণ করেছিলাম। প্রতি রাতে তাওবাহ মাসজিদে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতাম। (‘মুযাক্কিরাতুদ দাওয়াতি ওয়াদ- দাঈয়াহ পৃষ্ঠা’ নং ২৪) এটাই কি আকীদা পরিশুদ্ধ করার দাওয়াত?
তিনি উক্ত কিতাবে আরো বলেন, ‘‘আমি হাসফিয়্যাহ ত্বরীকার অনুমতি দাতার নিকট সাইয়্যিদ আব্দুল ওয়াহহাব উপস্থিত হয়ে তার নিকট থেকে আল-হাসফিয়্যাহ আশ-শাযিলিয়্যাহ অর্জন করেছি। তিনি আমাকে এর ওযীফার অনুমতি প্রদান করেন। পৃষ্ঠা নং২৪
তিনি বলেন, দামানহুরের দিনগুলো ছিল তাসওউফের সাগরে ডুব দেয়ার দিন। সেই সময়টা কেটেছিল শুধু ইবাদত আর তাছাওউফের গভীরতায়। প্রাগুক্ত পৃ. ২৮
আমরা আল্লাহর নিকট মুক্তি কামনা করি। আমরা দামানহুরে যে দিনগুলো কাটিয়েছি তার অনেকদিন আমরা কোন নিকটবর্তী কোন ওলীর যিয়ারত করার জন্য পরামর্শ করতাম। মাঝে মাঝে দুসুক্বীর যিয়ারত করতাম। আমরা ফযরের সালাতের পর পরই পায়ে হেঁটে রওয়ানা হতাম। প্রায় সকাল আটটার দিকে সেখানে পৌঁছে যেতাম। প্রায় তিন ঘণ্টায় বিশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতাম। এরপর যিয়ারত করে জুমুআর সালাত আদায় করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতাম। অতঃপর দামানহুরে ফিরে আসতাম। পৃ. ৩০
তিনি কি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছ শ্রবণ করেননি যে ‘শুধু তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফরের জন্য বাহন বাঁধবে না। বুখারী হা/১১৩২, মুসলিম হা/১৩৯৭
হাসানুল বান্নাহ বলেন, আমরা মাঝে মাঝে ‘ইযবাতুন নাওম’ নামক স্থানের কবরস্থানে সফর করতাম যেখানে ঐ হাসফিয়্যাহ ত্বরীকার বিশিষ্ট ব্যক্তি যারা তাদের তাকওয়া ও সততার জন্য সুপরিচিত ছিল তাদের অন্যতম সাইয়িদ সিনজারের কবর রয়েছে। আমরা ওখানে পুরো একদিন কাটিয়ে প্রত্যাবর্তন করেছি। (তার বই ‘মুযাকিরাতু-দ দাওয়াহ’ পৃ. ৩০)
তিনি আরো বলেন ‘আমাদের অভ্যাস ছিল যে, মাওকাবে প্রত্যেক রাতের অনুষ্ঠানের পর রবিউল আওয়ালের ১লা তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত মাওলিদুর রসূল (রসূলের মিলাদ মাহফিল) পালন করতাম, আমরা পূর্ণ খুশি ও আনন্দের সাথে প্রচলিত দীর্ঘ কবিতাগুলো আবৃতি করতাম। পৃ. ৫২
কবিতার মধ্যে ছিল: এই হলো সেই বন্ধু যে বন্ধুদের সাথে উপস্থিত হয়েছে প্রত্যেকের অতীত ও বর্তমানের সবকিছু ক্ষমা করে দিয়েছে। ‘‘মাজমু‘ রসায়িলি হাসানিল বান্না’’ নামক বইয়ে ‘আল উসূল আল ‘ইশরুন শিরোনামে কিছু তা‘লিম উল্লেখ রয়েছে। তিনি এর পঞ্চদশ নিয়মে বলেন ‘‘দু‘আ আল্লাহর কোন সৃষ্টির ওছীলার সাথে দু‘আকে মিলানো মতানৈক্যপূর্ণ শাখা-প্রশাখাগত মাসআলা। এটা কোন আকীদার মাসআলা সমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। পৃ. ৩৯২।
আমি বলি এটা আর বলার প্রয়োজন নেই যে, এই ব্যক্তি হলো ছবূফী, হাসফী ও কবরপূজারী যে কিনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাগফিরাত বা ক্ষমার ক্ষেত্রে পুরোপুরি খলিক্বের (আল্লাহ তায়ালার) গুণে গুণান্বিত্ব করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা থেকে অনেক ঊর্দ্ধে।
উক্ত কিতাবের ‘‘রসাইলুল ‘আক্বা‘ঈদ’’ এ রয়েছে ‘‘আল-আসমা ওয়াস ছিবফাত বিষয়ে আলোচনা অনেক দীর্ঘ হয়েছে যার কোন শেষ নেই অথচ তার ফলাফল একটাই তা হলো এ কাজ আল্লাহ তাবারকা ওয়া তা‘আলার উপর ছেড়ে দেয়া। (‘মাযহাবুস সালাফি ওয়াল খলাফ ফিল আসমায়ি ওয়াস ছিফাত’ পৃ. ৪৫২)
আমি বলব, এ বিষয়ে শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) এর উৎকৃষ্ট সালাফী মত পেয়েছি। ইমাম (রহ.) মুফাওওয়াদ্বাহদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যারা ‘ইলমুল মা‘নাকে আল্লাহর উপর সমর্পণ করে তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিদাতী। ‘দারউ তা‘আরুদ্বিল ‘আকলি ওয়ান নাকলি’ খ. ১৬ পৃ.২০১-২০৫ আল্লাহর উপর সমর্পণ করা: আমার জানা মতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কুরআন বুঝা ও গবেষণা করার আদেশ দিয়েছেন যাতে আমরা কুরআন অনুধাবন করি ও হৃদয়ঙ্গম করি। এতদ্বসত্ত্বেও কুরআন বুঝা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া কীভাবে জায়েয হতে পারে?
যার সামান্যতমও ‘ইলম ও বিবেক আছে সে কি এরপরও বলবে যে, ইমাম মুজাদ্দিদ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) এর দাওয়াত ও তাদের বিদাতী মুজাদ্দিদের দাওয়াতের মাঝে কোন মিল আছে? বরং উভয়ের মাঝে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
ইমাম শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রহ.) কে ‘মাজাল্লাতুল মাজাল্লাহর’ সংখ্যা ৮০৬, তারিখ ২৫শে সফর ১৪১৬হিজরী ২৪ নং পৃষ্ঠায় ইখওয়ানুল মুসলিমীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এখানে উক্ত প্রশ্নোত্তর উল্লেখ করা হলো।
সম্মানিত শায়খ, কিছুদিন থেকে আল-মামলাকাহ আল-আরাবিয়্যাহ আস-সা‘উদিয়্যাহতে ইখওয়ানুল মুসলিমের আন্দোলন ঢুকে পড়েছে। ছাত্রদের মাঝে তাদের ব্যাপক কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাদের আন্দোলনের ব্যাপারে আপনার মতামত কী? মানহাজগত দিক থেকে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জাম‘আহর সাথে তাদের কতটুকু মিল রয়েছে?
উত্তর : বিশিষ্ট আলিমগণ ইখওয়ানুল মুসলিমীনের আন্দোলনের সমালোচনা করেন; তাদের দাওয়াতে এক আল্লাহর তাওহীদ বা একত্বের প্রতি আহবান ও শিরক-বিদআত অস্বীকার করার কোন কর্মসূচী, কোন তৎপরতা নেই। বরং তাদের বিশেষ নিয়ম হলো আদ-দাওয়াহ ইলাল্লাহ ও ‘আকীদা সহীহাহর প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করা। অথচ আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মূলনীতিই হলো, আদ-দাওয়াহ ইলাল্লাহ ও ‘আকীদা সহীহাহর প্রতি গুরুত্বারোপ করা।
ইখওয়ানুল মুসলিমীনের উচিত সালাফী দাওয়াতকে গুরুত্ব দেয়া; আল্লাহর একত্বের প্রতি দাওয়াত দেয়া এবং কবর পূজা, মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখা, কবরের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করার (যেমন হাসান (রা.), হুসাইন (রা.), বাদাভী প্রমুখদের কবরের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা) প্রতি প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করা উচিত। এমনিভাবে সবকিছুর মূল, দীনের: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় সর্বপ্রথম এই লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থের প্রতিই আহবান করেছেন।
অনেক বিদ্বান ইখওয়ানুল মুসলিমীনের এই দিকগুলো নিয়ে সমালোচনা করে; তাওহীদ এবং ইবাদতে ইখলাছের প্রতি আহবানে অতৎপরতা ও জাহিলদের আবিষ্কৃত বিদাতী কাজ যেমন; মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ততা রাখা, মৃতের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা, মৃতের জন্য মান্নত করা, তাদের জন্য যবাই করা ইত্যাদি শিরকে আকবারের ক্ষেত্রেও বিরোধিতা না করা।
এমনিভাবে তাদের সমালোচনা করার আরেকটা কারণ হলো, তারা সুন্নাহ পালন ও হাদীছের প্রতি গুরুত্ব দেয় না।
তারা শারঈ হুকুম আহকাম নিরূপণের ক্ষেত্রে সালাফদের নীতিকে গুরুত্ব দেয় না। ইত্যাদি আরো অনেক কারণ বিদ্যমান। আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট কামনা করি তিনি যেন তাদের তাওফিক দান করেন।
জনৈক অভিযোগকারী আল্লামা ইবনে বায (রহ.) এর ইখওয়ানুল মুসলিমীনের সমালোচনার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে, সে শিষ্টাচারিতার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করেনি বললেই চলে। আমি এখানে হুবহু তার শব্দে উল্লেখ করছি, অভিযোগকারী বলেছে ‘‘আমি আপনাকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি, আল্লাহর জন্য ভালোবাসি, কিন্তু আমি আপনার মহত্বের তিরস্কার করছি, এর কারণ হলো, আজকে আমি ‘মাজাল্লাতুল মাজাল্লাহতে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ব্যাপারে আপনার ভাষায় মুখনিঃসৃত একটি বাণী প্রকাশিত হয়েছে, লেখক সেখানে লিখেছে ‘‘ইখওয়ানুল মুসলিমীন আকীদার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয় না। তারা মিলাদ মাহফিল করে এবং অনেক বিদাতী কাজ করে।’’ আমি এই কথার দ্বারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছি। কেননা আমি মিসরে অনেক বছর যাবত ইখওয়ানের সাথে কাজ করেছি। এই প্রবন্ধে যা কিছু লেখা রয়েছে তাদের আচার-আচরণে এরকম কোন কিছু দেখিনি বা শুনিনি।
সুতরাং আপনার মহানুভবতার নিকট আবেদন হলো, আপনি এই কথা শুধরিয়ে নিবেন।’’
আল্লাহু আকবার!! জ্ঞান ও বিচক্ষণতার সাথে শায়খ যে কথা বলেছেন সে সেটা পরিবর্তন করতে বলছে। শায়খ ইবনে বায (রহ.) কী যাচাই বাছাই ছাড়াই কথা বলেন? সুবহানাল্লাহ!!
শায়খ ইমামুস সুন্নাহ (রহ.) উত্তরে বলেন, হ্যাঁ, অনেক আলিম তাদের সম্পর্কে এমনটি বলেছেন। আমরা একদল শায়খের নিকট থেকে নকল করে বর্ণনা করেছি যে, শিরক সংক্রান্ত বিষয়াবলি, কবর ওয়ালার নিকট আহবান করা থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে তাদের কোন তৎপরতা নেই। সর্বাবস্থায় তাদের বই-পুস্তক ও কাজ-কর্মে এটা প্রতীয়মান। সুতরাং যে, ব্যক্তিই তাদের বই-পুস্তক পর্যালোচনা করবে তার সামনেই এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় উদ্ভাসিত হবে। (১৪১৬ হিজরীতে সফর মাসে ত্বায়িফ নগরীতে অনুষ্ঠিত দারসের ক্যাসেট থেকে। রেকর্ড ধারণকারী ইহসান মুহাম্মাদ শারফুদ্দীন আল-হুলওয়ানী)।
আমি বলব, দেখুন এই প্রশ্নকারীর দুর্ব্যবহারে সাথে সাথে সে শায়খের ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছে ও অপবাদ দিয়েছে।
প্রথমত : সে তার প্রশ্নের ভূমিকায় বলেছে (আমি আপনাকে ভালবাসি....কিন্তু) কাকে এধরণের কথা এ ধরণের কথা বলা যেতে পারে? সুন্নাহর ইমামদের ইমাম, সুন্নাহর সাহায্যকারী ও বিদআতের মূলোৎপাটনকারীকে?
দ্বিত্বীয়ত : সে বলেছে (আমি পড়েছি....এবং আপনাদের ভাষায় লেখা হয়েছে) আলিমদের সাথে এটা একটা চরম বেয়াদবি। এর দ্বারা প্রকাশ পেয়েছে যে, প্রশ্নকারী যুগে যুগে শায়খদের সাথে ছাত্রদের আদাব (শিষ্টাচারিতা) সম্পর্কে কিছুই পড়েনি, সে পড়েনি ইমাম শাফি‘ঈ (রহ.) তার শায়খ মালিক ইবনে আনাসের সাথে কেমন শিষ্টাচারিতা অবলম্বন করতেন। সে জানে না নেতাদের নেতা, দীনের মুজাদ্দিদ ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রহ.) ইমাম শাফি‘ঈ (রহ.) এর সাথে কিরূপ শিষ্টাচারিতামূলক আচরণ করতেন। এরকম আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে। এই প্রশ্নকারী ও এরকম যারা রয়েছে তাদের জন্য প্রশ্ন করার পূর্বে ত্বলব করার আদাব সম্পর্কে শিক্ষা অর্জন করা উচিত।
তার কথা: (আপনার কথা থেকে লেখা হয়েছে) একথায় ইমাম (রহ.) এর অমনোযোগিতা বুঝিয়েছে। সে বুঝাতে চেয়েছে যে তার নিকট থেকে এমন কিছু লেখা হয় যা তিনি বিশ্বাস করেন না। অথবা তার থেকে এমন কিছু লেখা হয় যে বিষয়ে তার নিকট কোন জ্ঞান নেই।
তৃতীয়ত : প্রশ্নকারী বলেছে ‘লিখক লিখেছে, ‘‘তারা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে এবং এরকম আরো অনেক বিদআত করে’’ প্রশ্নকারী তার সম্মানিত ইমামের সাথে বারবার অশিষ্ট আচরণ করার সাথে সাথে শায়খ (রহ.) এর উপর অপবাদ আরোপ করেছে। সে দাবি করেছে যে, লিখক নাকি লিখেছে যে ‘‘তারা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে এবং এরকম আরো অনেক বিদআত করে’’ আমি বলছি শায়খের উক্ত ‘‘আল-ইখওয়ান আল-মুসলিমীন’’ নামক প্রবন্ধের কোথায় একথা লেখা আছে? যার দ্বারা এই প্রশ্নকারী চরম উত্তেজিত হয়েছে? সরলমনা পাঠকেরা একেবারে নির্বোধ নয় যে তুমি তার উপর মিথ্যারোপ করবে আর তারা ধরতে সক্ষম হবে না। তুমি বারবার প্রবন্ধটি পড়ে দেখ তো কোথায় এ কথা লেখা আছে?
কিন্তু সে তো হিদায়াত ও হক গ্রহণ করা থেকে অন্ধ। আমরা আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করি।
(ব্যক্তি মিথ্যা বলতে বলতে একপর্যায়ে আল্লাহর নিকট মহা মিথ্যাবাদী হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। বুখারী হা/ ৬০৯৪, মুসলিম হা/ ২৬০৬, ২৬০৭, তিরমিযী হা/১৯৭১
চতুর্থত : প্রশ্নকারীর মন্তব্য (আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছি... কেননা আমি কাজ করেছি....অথচ তাদের থেকে এগুলোর কিছুই দেখতে পাইনি)।
আমি এই কিংকর্তব্যবিমূঢ় লোককে এতটুকুই শুধু বলব, যে তুমি তাদের বই-পুস্তক পড়ে দেখো যেমনটি সম্মানিত শায়খও তোমার প্রশ্নের জবাবে বলেছেন। আর যদি তোমার সময় সংকীর্ণতার কারণে পড়তে না পার তাহলে শায়খের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের পূ©র্ব পত্র সমূহ পড়ে নাও তাহলে সংক্ষিপ্তাকারে পেয়ে যাবে যে, ইখওয়ান তাদের নেতা হাসানুল বান্নার নেতৃত্বে কি করেছে এবং তুমি যা জানো না তোমার জানার দ্বারাই কওমের জানার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
অতঃপর যদি তুমি নিয়ম জানতে যে, (যে ব্যক্তি দলীল মুখস্থ করেছে সে যে ব্যক্তি দলীল মুখস্থ করেনি তার উপর প্রাধান্য পাবে), (অভিযোগ ব্যক্তির ন্যায়পরায়ণতার উপর প্রাধান্য পাবে), (অধিক ছিক্বাহ গ্রহণ যোগ্য)। যদি এগুলোর সাথে যোগ করা হয় যে আলোচক তার যামানার আল-জারহু ওয়াতা‘দীলের ইমাম। যিনি প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কারো সমালোচনা করেন না। যদি তুমি এটা জানতে এবং তোমার মনে থাকতো তাহলে তুমি যা পেশ করেছ তা পেশ করতে না।
পঞ্চমত : প্রশ্নকারীর কওল (এজন্য আমি এই কথার সংশোধন কামনা করি।) সুবহানাল্লাহ। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজি‘ঊন। এটা কেমন দুঃসাহসিকতা?
সে এমন ব্যক্তির নিকট সংশোধন চেয়েছে তার যুগে হকের ক্ষেত্রে উম্মাতের প্রত্যাবর্তন স্থল। আল্লাহর কসম আমি শায়খ (রহ.) এর সমযোগী অনেক আলিম সম্পর্কে জানি যারা অনেক বড় বড় বিদ্বান, তাদের মধ্যে অনেকে হাইয়াতু কিবারিল উলামার সদস্য কিন্তু তারা শায়খ এর উপস্থিতিতে কোন মাসজিদে অথবা কোন মাজলিসে অনুমতি গ্রহণ করা ব্যতীত অথবা তিনি অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত খুতবা প্রদান করতে লজ্জাবোধ করেন। অথচ এটা কেমন ধৃষ্টতা যে তার নিকট থেকে এমন তলব করা হচ্ছে!!
ষষ্ঠত : শায়খ এর জবাবে এই অভিযোগকারীর অভিযোগ সমূলে উৎপাটন করার মত বিষয় বিদ্যমান। তিনি তার পূর্বোল্লেখিত প্রবন্ধকে জোরদার করে বলেছেন, প্রশ্নকারী এবং তার সমমনা যারা আছে তারা যেন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের বই-পুস্তকে চোখ ফিরিয়ে নেয় তাহলেই যা আলোচনা করা হয়েছে তা দেখতে পাবে।