লগইন করুন
উত্তর : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً
তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। (সূরা আন নিসা আয়াত নং ৩৬)। তিনি আরো বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولاً أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর তাগুতকে। (সূরা আন নাহল ৩৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ
আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আলাহর ইবাদত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে। (সূরা আল-বাইয়িনাহ আয়াত নং ০৫)
আল্লাহ তা‘আলা তার খলীল ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে আরো বলেন,
إِنَّنِي بَرَاءٌ مِمَّا تَعْبُدُونَ - إِلاَّ الَّذِي فَطَرَنِي
আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম স্বীয় পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা সেগুলোর ইবাদত কর, নিশ্চয় আমি তাদের থেকে সম্পর্কমুক্ত। তবে (তিনি ব্যতীত) যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর নিশ্চয় তিনি আমাকে শীঘ্রই হেদায়াত দিবেন। (সূরা যুখরুফ আয়াত ২৬-২৭)
এটাই হলো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ। আল্লাহ আ‘ল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ
আমি জ্বীন এবং মানব জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত আয়াত নং ৫১: ৫৬)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষেরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ না বলা পর্যন্ত আমি তাদের সাথে লড়াই করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘একত্বের ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত ’।[2]
সুতরাং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা দিয়েছেন যে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ হলো সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ব প্রতিষ্ঠা করা, শুধু বিচার সংক্রান্ত নয়।
অতএব লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর বিশুদ্ধ অর্থ হলো : আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই। একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহর জন্য ইবাদত করা। শরী‘আহ দ্বারা বিচার ফায়ছালা করা এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ শুধু শরী‘আহ দ্বারা বিচার ফায়ছালা করা নয়। বরং এর অর্থ আরো ব্যাপক। মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়ে কিতাবুল্লাহ দ্বারা ফায়ছালা করার চেয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে শিরকের মূলোৎপাটন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ‘‘ ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য করা’’ এটাই বিশুদ্ধ তাফসীর।
লা-ইলাহর ইল্লাল্লাহর তাফসীরে বলা ‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন ফয়ছালাকারী নেই’’ এই তাফসীর অপূর্ণাঙ্গ। এর দ্বারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর পূর্ণ অর্থ প্রকাশ পায় না।
লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহর তাফসীরে لا خالق إلا الله(আল্লাহ ছাড়া কোন খালিকব/ সৃষ্টিকর্তা নেই) বলা বিশুদ্ধ নয়। দলীল দ্বারা প্রমাণিত যে, এটা বাতিল তাফসীর; কেননা ‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই’’ এই স্বীকৃতি প্রদানের জন্য লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ আসেনি। ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই’ এ কথা মক্কার মুশরিকেরাও স্বীকার করতো। যদি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই’ এটাই হতো তাহলে মক্কার মুশরিকেরাও তাওহীদবাদী বলে গণ্য হতো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ
আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, ‘ আল্লাহ’। তবু তারা কীভাবে বিমুখ হয়? (সূরা যুখরুফ আয়াত নং ৮৭)
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর ব্যাখ্যায় ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই’ বলার অর্থ দাঁড়ায় আবু জাহল, আবু লাহাবেরা সবাই তাওহীদবাদী ।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর তাফসীরে একথা বলা যে, لا معبود إلا الله (আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বুদ নাই) এটাও বাতিল। কেননা এর দ্বারা ওয়াহদাতুল ওয়াজুদের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। মূর্তি, কবর ইত্যাদি অনেক বাতিল মা‘বুদ রয়েছে তাদের ইবাদত করাও কী আল্লাহর ইবাদতের অন্তর্গত?
সুতরাং সবার জন্য হলো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর তাফসীরে একথা বলা ওয়াজিব যে লা-মা‘বুদা বিল হাক্কি ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহু ছাড়া কোন হক (সত্য) ইলাহ নেই।
আল্লাহ তা‘আলা নিজেও বলেছেন,
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الْبَاطِل
এগুলো প্রমাণ করে যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা মিথ্যা। আর নিশ্চয় আল্লাহই হলেন সর্বোচ্চ, সুমহান। (সূরা লুক্বমান আয়াত নং ৩০)
[1]. উল্লেখিত কিতাবের দু’স্থানে দেখুন পৃ. নং ২০ ও ২১। তিনি ওয়কি‘উনা আল-মু‘আছির নামক গ্রন্থেও একথা বলেছেন। সেখানে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘বর্তমান যুগের জাহিলিয়্যাত লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর মূল দাবিকেই প্রত্যাখ্যান করে। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর মূল দাবি হলো, শরী‘আহ দ্বারা বিচার ফায়ছালা করা এবং আল্লাহর পদ্ধতি মেনে চলা।’ পৃ. ৫৪
[2]. সহীহ বুখারী হা/ ১৩৩৫, তিরমিযী হা/২৬০৬।