লগইন করুন
উত্তর : এটা আগের মতই। ‘আকীদা ও শারঈ বিষয়াবলির জ্ঞান ছাড়া কেবল সাধারণ লেকচার, সাংবাদিকতা ও চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রতি মনোনিবেশ করার দ্বারা শুধুই বিভ্রান্তি বিসত্মৃতি লাভ করে। শুধু সময়ের অপচয়ই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি এ কাজ করে সে উদ্ভ্রান্ত হয়, কেননা সে উত্তম জিনিসের বিনিময়ে অনুত্তম জিনিস গ্রহণ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বপ্রথম উপকারী ‘ইলম অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ
‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই’ (সূরা মুহাম্মাদ আয়াত ১৯)
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الأَلْبَابِ
‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে’। (সূরা যুমার আয়াত ০৯)
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ
‘কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল’। (সূরা ফাত্বির আয়াত ২৮)
وَقُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْماً
‘তুমি বল, হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন’। (সূরা ত্বহা আয়াত ১১৪)
কুরআন-সুন্নাহর ‘ইলম অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদানকারী এরকম আরো অন্যান্য আয়াত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই ‘ইলমই দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে উপকারী ও কল্যাণকর। এই ‘ইলমই হচ্ছে সেই নূর (জ্যোতি), যার দ্বারা বান্দা জান্নাত ও সাফল্যের রাস্তা দেখতে পায়। আর দেখতে পায় দুনিয়ার পরিচ্ছন্ন পবিত্র জীবন ও পরকালীন সাফল্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُوراً مُبِيناً - فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطاً مُسْتَقِيماً
‘হে লোক সকল! তোমাদের রবের পক্ষ হতে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের নিকট স্পষ্ট আলো অবতীর্ণ করেছি। অতঃপর যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাকে আঁকড়ে ধরেছে তিনি অবশ্যই তাদেরকে তার পক্ষ হতে দয়া ও অনুগ্রহে প্রবেশ করাবেন এবং তার দিকে সরল পথ দেখাবেন’। (সূরা আন নিসা আয়াত ১৭৪-১৭৫)
আমরা প্রতি রাক‘আতেই সূরা আল ফাতিহা পাঠ করি। এ সূরাতেই তো এক মহান দু‘আ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ - صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلا الضَّالِّينَ
‘আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন। তাদের পথ, যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন (নাবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ, সৎকর্মপরায়ণ): যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়’।
আল্লাহ যাদের উপর নিয়ামত বর্ষণ করেছেন তারা হলো যারা উপকারী ‘ইলম ও আমালে সলিহ উভয়টা সাধন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقاً
‘আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নাবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসাবে তারা হবে উত্তম’। (সূরা আন নিসা ৪:৬৯)
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল ফাতিহাতে বলেন, غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ তাদের পথ নয় যাদের উপর তুমি রাগান্বিত। তারা হলো যারা ‘ইলম অর্জন করেছে এবং আমল বর্জন করেছে। তিনি আরো বলেন, ولا الضالين ‘পথভ্রষ্টদের পথ নয়’। এরা হলো যারা আমল গ্রহণ করেছে এবং ‘ইলম বর্জন করেছে।
প্রথম শ্রেণি সুস্পষ্ট ‘ইলম থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর নাফরমানি করায় ক্রোধগ্রস্থ।
দ্বিতীয় শ্রেণি ‘ইলম ছাড়াই আমল করার কারণে পথভ্রষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা যাদের উপর নিয়ামত বর্ষণ করেছেন একমাত্র তারাই মুক্তি লাভ করবে। তারা হলো উপকারী ‘ইলম ওয়ালা এবং উত্তম আমল সম্পাদনকারীগণ। এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চিন্তা সর্বদা আমাদের মনে রাখা উচিত।
আর সমকালীন বিষয়াবলিতে মনোযোগ নিবিষ্ট করা ‘যাকে ফিক্বহুল ওয়াকি‘ বা ‘চলমান বিষয়ের জ্ঞান’ বলে- এটা হতে হবে শারঈ ফিক্বহ অর্জনের পর। মানুষ শারঈ ফিকহের আলোকেই সমকালীন বিষয়, বর্তমান বিশ্বে যা ঘুরপাক খাচ্ছে, তা, নতুন নতুন যে সকল মতবাদ আমদানী হচ্ছে, তার প্রতি দৃষ্টি দিবে। ব্যক্তি ভালো-মন্দ যাচাইয়ের জন্য শারঈ ‘ইলমের সামনে সেগুলো পেশ করবে। শারঈ ‘ইলম ছাড়া হক-বাতিল, হিদায়াত ও ভ্রষ্টতার মাঝে পার্থক্য নিরূপণে সে সক্ষম হবে না।[1]
সুতরাং যে ব্যক্তি দ্বীনী ‘ইলম ছাড়াই প্রথমে সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক বিষয়াবলিতে লিপ্ত হয়, সে এগুলোর দ্বারা পথভ্রষ্ট হয়। কেননা এ বিষয়গুলোতে যা কিছু ঘুরপাক খায় তার অধিকাংশই বাতিল, ধোঁকা ও প্রবঞ্চনা। আমরা আল্লাহর নিকট এ থেকে মুক্তি চাই।
[1]. উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় হাইয়াতু কিবারিল ‘উলামার ফাতওয়ার বিরোধিতা করায় ফিকহুল ওয়াকি‘ এর প্রবক্তাদের দোষ-ত্রুটি, অপারগতা ও প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হয়েছে। তারা ধারণা করেছে তাদের উষ্কানি হালে পানি ফিরে পাবে। তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান ও চিন্তা-ফিকির অচিরেই চূড়ান্তে পৌঁছবে। কখনোই নয়। তা মোটেই সম্ভব নয়।