লগইন করুন
উত্তর : আমরা যখন জানলাম যে ‘আক্বীদা শেখা ও শেখানো ওয়াজিব, তখন প্রশ্ন থেকে যায় যে, আমরা কোন কোন উৎস থেকে ‘আক্বীদা গ্রহণ করব? কাদের নিকট থেকে ‘আক্বীদার শিক্ষা গ্রহণ করব?
যে সকল উৎস থেকে তাওহীদ, ঈমান ও আকীদা গ্রহণ করা হয় তা হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, হাদীছ ও সালাফগণের মানহাজ।
পবিত্র কুরআন আকীদা, আকীদা বিরোধী বিষয় এবং এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি সৃষ্টিকারী বিষয় স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে।[1] এমনিভাবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ, সীরাত, দাওয়াত এবং তার হাদীছসমূহও আক্বীদা বর্ণনা করেছে।[2] অনুরূপভাবে সালাফে সালেহীন: ছাহাবী[3], তাবি‘ঈ ও তাবি‘ঈ তাবি‘ঈগণও আক্বীদার কথা বর্ণনা করেছেন। তারা মানুষের জন্য কুরআনের তাফসীর, হাদীছের ব্যাখ্যা ও আকীদার ব্যাখ্যার প্রতি যত্নশীল হয়েছিলেন। সুতরাং বিশুদ্ধ ‘আকীদা অন্বেষণের ক্ষেত্রে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রসূলের পর সালাফদের মতের প্রতি ফিরে যেতে হবে। সালাফদের মতামতগুলো তাফসীর গ্রন্থাবলি ও হাদীছের ভাষ্যগ্রন্থাবলিতে সংরক্ষিত রয়েছে। আরো স্বতন্ত্রভাবে আকীদার কিতাবাদিতে সংরক্ষিত রয়েছে।
পরবর্তী প্রশ্ন: কাদের নিকট ‘আকীদা গ্রহণ করব?
তাওহীদের অনুসারী, তাওহীদপন্থী আলিম যারা পূর্ণভাবে তাওহীদ পড়াশোনা করেছে ও সূক্ষ্মভাবে বুঝেছে তাদের নিকট থেকে তাওহীদ শিখতে হবে। আলহামদু লিল্লাহি তারা বিশেষত তাওহীদের এই দেশে বিদ্যমান রয়েছেন।[4]
কেননা বিশেষভাবে এই দেশের আলিমগণ ব্যাপকভাবে সারা দুনিয়ার সঠিক পথে অটল মুসলিম আলিমদের আক্বীদাতুত তাওহীদ বিষয়ে অবদান রেখেছেন। তারা নিজেরা তাওহীদ পড়ে, অনুধাবন করে সাধারণ মানুষের জন্য তা স্পষ্ট করেন এবং মানুষকে তাওহীদের পথে আহবান করেন। সুতরাং তাওহীদের পথে প্রত্যাবর্তন করতে হলে বিশুদ্ধ আকীদা ওয়ালা ঐ সকল আহলুত তাওহীদ ও উলামায়ে তাওহীদের নিকট থেকে তাওহীদ গ্রহণ করতে হবে।
আকীদার কিতাবাদি থেকে মুখ ফিরিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক বই-পুস্তক এবং ওখান থেকে আগত বিভিন্ন মতবাদ চিন্তা-ফিকিরের বই-পুস্তক পড়ার দ্বারা কোন ফায়দা হয় না। বরং এটা হলো যেমন বলা হয় ভীতিপ্রদ পাহাড়ের চূড়ায় উটের পরিত্যক্ত সামান্য কিছু মাংসের মত, তা এত ওজন বিশিষ্ট নয় যে এমনিতেই গড়ে পড়বে অথবা আরোহণ করার পথও এত সহজ নয় যে কেউ আরোহণ করে তা আনবে। ঠিক এ বই-পুস্তকগুলো এমন যা দ্বারা অজ্ঞতা দূর হয় না এবং এর দ্বারা ইলমের উপকার হয় না।[5] কিন্তু যারা তাওহীদ, ‘আকীদা ও উলুমুশ-শারী‘আ হতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করার পর অসার কথাবার্তায় লিপ্ত হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মাহরুম করেছেন। তারা বই-পুস্তক ও পত্রিকাদি বেফায়দা কথাবার্তা দ্বারা পূর্ণ করে। তাদের এই কথাবার্তায় উপকারের চেয়ে অপকার বেশি। সুতরাং উপকারী বিষয় পরিত্যাগ করে এসকল বই-পুস্তক, পত্রিকা পাঠ করা উচিত নয়। বিশেষত ছাত্র ও প্রাথমিক ছাত্রদের জন্য এসকল লেখা পাঠে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। এগুলো পাঠ করাতে মোটেও উপকার নেই। বরং শুধুই সময় নষ্ট হয়। এগুলো পাঠের কারণে মানুষের চিন্তা-চেতনা বিক্ষিপ্ত করে দেয় এবং সময় নষ্ট করে।
অতএব, সকল মানুষের জন্য ওয়াজিব হলো, পাঠের জন্য উপকারি বই-পুস্তক পছন্দ করা। এমন বই-পুস্তক পছন্দ করা যেগুলো কুরআন-সুন্নাহর জন্য সাহায্যকারী হয় এবং সালাফে ছলিহীনের বুঝের ব্যাখ্যাকারী হয়। ইলম হলো আল্লাহ তা‘আলা যা বলেছেন, তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু বলেছেন।
ইবনুল ক্বায়্যিমিল জাওযিয়্যাহ (রহ.) বলেন,
العلم قال الله قال رسوله ... قال الصحابة هم أولو العرفان
ما العلم نصبك للخلاف سفاهة ... بين الرسول وبين رأي فلان
‘‘ইলম হলো আল্লাহ যা কিছু বলেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু বলেছেন, তার ছাহাবীরা যা বলেছেন, তারা হলেন প্রজ্ঞাবান। যা তোমাকে কুরআন-হাদীসের বক্তব্যের সাথে অমুকতমুকের মতপার্থক্যের দিকে ঠেলে দিবে, তা ইলম নয়’’।[6]
[1]. আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর আপনার রব ভুলে যান না। (সূরা মারইয়াম আয়াত নং ৬৪)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসাবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। (সূরা আল মায়িদাহ আয়াত নং ০৩)
[2]. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি তোমাদেরকে সুস্পষ্ট উজ্জল দীনের উপর রেখে যাচ্ছি যার রাত ও দিনের মত স্বচ্ছ। একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ তা থেকে বিচ্যুত হবে না (মুসতাদরাকে হাকিম ১/৯৫)।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম তোমরা এ দু’টি জিনিসের পর বিপথগামী হবে না: আল্লাহর কিতাব (আল কুরআন), আমার সুন্নাহ (মুসতাদরাক হাকিম ১/৯৩)।
[3]. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তোমরা শুধু ইত্তিবা করো। বিদআত করো না। এটাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে।
[4]. এখানে উদ্দেশ্য হলো সঊদী আরব।
[5]. আয় আল্লাহ আমাদের থেকে এগুলোকে দূরে রাখো এবং আমাদেরকে বেশি বেশি তাওহীদের ইলম দান করো ।
[6] (ইমাম শামসুদ্দীন ইবনুল কয়্যিম আল জাওযিয়্যাহ কর্তৃক প্রসিদ্ধ কছিদাহ। (আল কছীদাহ আন নাওয়াবিয়্যাহ)।