মানহাজ (আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ) নিত্য নতুন মানহাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উপকারী জবাব শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
প্রশ্ন-২৫ : একদিকে একদল মানুষ কোন মাযহাব বা আলিমকে নিয়ে গোঁড়ামি করে। অন্যদিকে আরেকদল মাযহাব মেনে চলা বা কোন আলিমের অনুসরণ করাকে দেয়ালে নিক্ষেপ করার মত প্রত্যাখ্যান করে, ইমাম ও আলিমগণের দিকনির্দেশনা থেকে বিমুখ থাকে। এ ব্যাপারে আপনার দিকনির্দেশনা কী?

উত্তর : হ্যাঁ, এ উভয় দলই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। একদল তাক্বলীদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে। এমনকি দলীলের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও তারা ব্যক্তির রায় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, যা ঘৃণিত। এ কাজ কখনো কখনো কুফুরির দিকে নিয়ে যায়। আমরা আল্লাহর নিকট এ কাজ থেকে আশ্রয় কামনা করছি।[1]

দ্বিতীয় দল : যারা আলিমদের মতকে পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি কুরআন সুন্নাহর অনূকুলে হলেও তারা আলিমদের মতামত গ্রহণ করে না।

প্রথম শ্রেণি হলো সীমালঙ্ঘনকারী আর দ্বিতীয় শ্রেণি হলো শৈথিল্যবাদী।

আলিমদের কওল বা মতামতে কল্যাণ নিহিত। বিশেষত সালাফে সালেহীন, ছাহাবী, তাবি‘ঈন, চার ইমাম এবং যে সকল ফক্বীহদের ফিক্বহকে এই উম্মাহ ইসলামী ফিক্বহ বলে সাক্ষী দিয়েছেন, তাদের ফিক্বহ এর মধ্যে কল্যাণ বিদ্যমান। তাদের মতামত থেকে উপকার গ্রহণ করা যাবে। তবে চূড়ান্ত ফায়ছলা হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। বরং সেক্ষেত্রে আমরা দলীল গ্রহণের জন্য আদিষ্ট।

আলিমদের ক্বওল (রায়) কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক না হলে তা গ্রহণ করাতে কোনো সমস্যা নেই এবং তা গোঁড়ামির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটা হলো সালাফে সালেহীনদের দ্বারা উপকৃত হওয়া ও তাদের ফিকহের আলোকে আলোকিত হওয়া। এটাই কিতাবুল্লাহ ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ (হাদীছ) বুঝার অন্যতম মাধ্যম।

এক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা হলো এই যে, আমরা আলিম ও ফাক্বীহগণের যে মতামতগুলো কুরআন সুন্নাহর দলীলের অনুকূলে পাব তা গ্রহণ করব। আর যা দলীলের সাথে সাংঘর্ষিক হবে তা প্রত্যাখ্যান করব। ভুলের ক্ষেত্রে ইমামগণকে মা‘যূর (বিশেষ কারণ বশত অপারগ) মনে করব। আমরা তাদের দুর্নাম করব না।

(এ সম্পর্কে) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إذا حكم الحاكم فاجتهد ثم أصاب فله أجران، وإذا حكم فاجتهد فأخطأ فله أجر واحد

 যদি কোনো হাকিম/ ফায়ছলাকারী ফায়ছলা করার ক্ষেত্রে ইজতিহাদ করে তাহলে তার ইজতিহাদ বা গবেষণা ঠিক হলে সে দু’টি প্রতিদান পাবে। আর যদি গবেষণায় ভুল করে তবে একটি ছাওয়াব পাবে।[2]

যে ব্যক্তির মাঝে ইজতিহাদের (গবেষণার) গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে রয়েছে তার ইজতিহাদগত ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়। আর মূর্খদের ও ছাত্রদের ইজতিহাদ অগ্রহণযোগ্য। এদের জন্য ইজতিহাদ করা বৈধ নয়। এরা ইজতিহাদে ভুল করুক বা শুদ্ধ করুক সর্বাবস্থায় অনধিকার চর্চার কারণে পাপী বলে গণ্য হবে।


[1]. শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রহ.) বলেন, ‘‘যদি কেউ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির ব্যাপারে গোঁড়ামি করে; যেমন ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ ও আবু হানিফা (রহ.) প্রমুখ ইমামদেরকে নিয়ে। আর মনে করে যে, নির্দিষ্ট ইমামের কথাই সঠিক, তারই অনুসরণ করা আবশ্যক, অন্যান্য ইমামকে নাকচ করে। যে এরূপ কাজ করে সে পথভ্রষ্ট, জাহিল। বরং সে কখনো কাফির বলে গণ্য হতে পারে। যখন কেউ এ বিশ্বাস করবে যে, তাদের মধ্যে একজন ইমামকেই অনুসরণ করা ওয়াজিব, অন্যদের নয়। তবে তাকে তওবা করতে হবে, আর তাওবা না করলে তাকে হত্যা করতে হবে। মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/২৪৮-২৪৯।

[2]. সহীহ: তিরমিযী হা/১৩২৬।