মানহাজ (আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ) নিত্য নতুন মানহাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উপকারী জবাব শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
প্রশ্ন-১৩ : কেউ সালাফী নাম ধারণ করলে এর দ্বারা কি বুঝায় যে, সে ফিরকাবাজী করছে?

উত্তর : কোনো ব্যক্তি প্রকৃতই সালাফী হলে সালাফী নাম ধারণ করাতে কোনো সমস্যা নেই।[1]

আর যদি ব্যক্তি সালাফী মানহাজ অনুসরণ না করে শুধু মৌখিক দাবি হিসাবে সালাফী নাম ধারণ করে তাহলে তার জন্য তা জায়েয হবে না।

যেমন আশ‘আরীরা বলে যে, আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত’’। অথচ এটা সঠিক নয়। কেননা তারা যে মানহাজের/মতবাদের উপর রয়েছে তা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মানহাজ নয়। ঠিক তেমনই মু‘তাযিলারা। যারা নিজেদেরকে তাওহীদপন্থী বলে দাবি করে (কিন্তু বাস্তবে তারা তাওহীদপন্থী নয়)।

كل يدعي وصلا لليلي   وليلي لا تقر لهم بذاكا

‘প্রত্যেকেই দাবি করে সে লাইলীর প্রেমাষ্পদ,

কিন্তু লাইলী তাদেরকে স্বীকৃতি দিতে অমত’।

যে ব্যক্তি দাবি করবে যে, সে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী, (তার জন্য আবশ্যক হলো যে) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ত্বরীকাকে আঁকড়ে ধরা এবং বিপরীত সকল ত্বরীকা/পথ বর্জন করা। আর যে ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত ও  বিরোধীদের আক্বীদার মাঝে সমন্বয় করতে চায় তার উদাহরণ হলো (সেই ব্যক্তির যে) মাছ ও দ্বব বা ডাঙ্গার প্রাণি ও জলের প্রাণীকে একত্রিত করতে চায়। যা সম্ভব নয়। অথবা সে যেন আগুন ও পানিকে একই পাত্রে একত্র করতে চায়। সুতরাং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত স্বীয় বিরোধীদের যেমন মু‘তাযিলা, খারিজী ও কথিত আধুনিক মুসলিমদের সাথে কখনো একত্রিত হতে পারে না। তারা তো প্রকারান্তরে বর্তমানের বিভিন্ন ভ্রষ্টতাকে সালাফদের মানহাজের সাথে জুড়ে দেয়। এই উম্মাহর পূর্ববর্তীগণ যে সংস্কার করতে পারেনি পরবর্তীরাও তাতে সংস্কার করতে পারবে না।[2]

সারকথা : এ ব্যপারে অবশ্যই যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করতে হবে।


[1]. শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.)  মাজমূ‘ ফাতওয়া খ.০৪,পৃ.১৪৯ তে বলেন ‘‘যদি কেউ বলেন যে, তিনি সালাফদের মাযহাব অনুসরণ করেন, তাদের সাথে সম্বন্ধ যুক্ত হন তাহলে তা দূষনীয় নয়। বরং সর্বসম্মতিক্রমে তা গ্রহণ করা উচিত। কেননা সালাফদের মাযহাব হকই হয়ে থাকে।’’

 সম্মানিত পাঠক, আজ থেকে ৮০০ বছর পূর্বে শায়খুল ইসলাম (রহ.) এর প্রদত্ত জাওয়াবের প্রতি লক্ষ্য করুন; তিনি যেন বর্তমান কালের জনৈক পণ্ডিতের মত খণ্ডন করছেন। উক্ত পণ্ডিত বলেন, যদি কোন ব্যক্তি কাউকে ইখওয়ানী, সালাফী, তাবলিগী অথবা সুরুরী হতে বাধ্য করে তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে তাওবা করতে বলা হবে। যদি সে তাওবা করে ভালো। আর যদি না করে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। তিনি একটি অডিও সিরিজে একথা বলেছেন যার শিরোনাম ‘বাঘ থেকে সতর্ক থাকার মত দলাদলি থেকে সতর্ক থাকো’।’’

সুবহানাল্লাহ! আল-মানহাজুস সালাফিয়্যাহর মত হক মানহাজকে ঐ সকল বাতিল, ভ্রান্ত, বিদাতী ফিরকার সাথে একত্র করার/তুলনা করার মত দুঃসাহস সে কীভাবে দেখাতে পারল!

এই তাওহীদের ভূ-খণ্ড- (সাউদী আরবে) বসবাসকারী যে কিনা মাস্টার্সে হাদীছ বিষয়ে থিসিস করেছে এবং পরবতীতে হাদীছ বিষয়ে ডক্টরেট করেছেন। তুমি যদি সালাফী না হয়ে থাকো তাহলে কি হতে চাও?

শায়খ ইবনে বায (রহ.) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সালাফী বা আছারী বলে নামকরণ করার ব্যপারে আপনার মতামত কী ? এর দ্বারা কী আত্ম পরিশুদ্ধির দাবি বুঝায়? শায়খ জবাবে বলেন, যদি সে সত্যবাদী হয়ে থাকে (প্রকৃত সালাফী হয়) তাহলে সমস্যা নেই। যেমন সালাফীগণ বলতেন অমুকে সালাফী অমুকে আছারী। এর দ্বারা অবশ্যই পরিশুদ্ধি বুঝায়, আবশ্যক পরিশুদ্ধি। ১৬ মুহার্রাম ১৪১৩ হিজরীতে তায়েফ নগরীতে প্রদত্ত ‘হাক্কুল মুসলিম’ নামক অডিও লেকচার থেকে সংকলিত।

শায়খ বকর আবু যায়দ বলেন, সালাফ, সালাফিয়্যুন অথবা তাদের পথকে সালাফিয়্যাহ বলার দ্বারা সালাফে সালেহীনের প্রতি সম্বন্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে সকল ছাহাবী, ছাহাবীদেরকে সত্যের উপর অনুসারী সকল তাবেঈ, যারা প্রবৃত্তির ধোঁকায় মানহাজচ্যুত হয়েছে তারা বাদে এবং মিনহাজুন নাবাবী বা নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কর্মপদ্ধতীর উপর অটল সকল ব্যক্তিকে সালাফে সালেহীনের প্রতি সম্বন্ধ করা হয়। সুতরাং তাদেরকে সালাফ, সালাফিয়্যুন এবং এর প্রতি সম্বন্ধ করে সালাফী বলা হয়। সালাফ অর্থ সালাফে সালেহীন পূর্ববতী সৎ ব্যক্তি।

বিদ্বানদের মতে সাধারণত যে ব্যক্তিই ছাহাবীদের অনুসরণ করে তাকেই সালাফী বলা হয়। যদিও তিনি বর্তমান যুগের লোক হন না কেন। এই সম্বন্ধ করা এমন কিছু রেওয়াজ সর্বস্ব সম্বন্ধ নয়, যা কুরআন সুন্নাহর চাহিদা বিরুদ্ধ, বরং এটি এমন একক সম্বন্ধ যা সামান্য সময়ের জন্যেও পূর্ববর্তীদের মূল থেকে/মানহাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। তারা তাদের সাথেই থাকে, তাদের প্রতিই সম্পৃক্ত হয়। আর যে নাম অথবা রেওয়াজ নিয়ে তাদের সাথে বিরোধিতা করে সে সালাফী বলে গন্য যদিও তাদের সমযুগী হোক না কেন? তিনি আরো বলেন, মানহাজগত ভাবে সালাফী হও (হুকমুল ইনতিমা পৃ. ৪৬, ২য় সংস্করণ)

আমি বলি-জীবনি গ্রন্থগুলোতেও এভাবে সম্বন্ধ করার রীতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেমন ইমাম যাহাবী (রহ.) মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল বাহরানী এর পরিচয়ে বলেন ‘‘তিনি উত্তম দ্বীনদ্বার সালাফী ছিলেন’’। (মুজামুশ শুয়ুখ  খ ২ পৃ. ২৮০)

আহমাদ ইবনে আহমাদ ইবনে নি‘মাহ আল মাকদিসী এর পরিচয়ে বলেন, তিনি সালাফদের আকীদার অনুসারী ছিলেন। সুতরাং সালাফদের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত হওয়া এমন আবশ্যকীয় নিসবাত যে যাতে সালাফী ব্যক্তি সত্যকে আবরণ মুক্ত করতে পারেন এবং তাদেরকে যারা অনুসরণ করতে চান তারা যেন কোন ধোঁকা-সংশয়ে পতিত না হন। যখন বিভিন্ন বিভ্রান্ত, বিপথগামী সংগঠনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল তখন আহলুল হক বা সত্য পথের অনুসারীরা সে সকল বিদাতীদের থেকে নিজেদের সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করার জন্য সালাফদের সাথে সম্বন্ধ করে নিজেদেরকে সালাফী বলে ঘোষণা দেন। মহান আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলেন,

فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ

তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম। (সূরা আলি ইমরান ০৩:৬৪)

{ وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلاً مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحاً وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ }

আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম? যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই  আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হা-মীম-আস-সাজদাহ ৪১: ৩৩)

وما أنا من المشركين

আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। ( সূরা আন‘আম ৭৯)

[2]. এটা ইমাম মালিক (রহ.) এর একটি প্রসিদ্ধ উক্তি।