লগইন করুন
একদল বিজ্ঞ আলেমের মতে, খুৎবা হবে আরবী-বাংলা মিশ্রিত। কারো কারো মতে, এ পদ্ধতিতে খুৎবা দেওয়া ওয়াজিব। দলীল হিসেবে তারা কুরআনের দুটি আয়াত উদ্ধৃত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿٤﴾
“আমি প্রত্যেক জাতির কাছে তাদের নিজ ভাষাভাষী রাসূল পাঠিয়েছি, যাতে তিনি তাদের নিকট তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারেন (আমার দীনকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে)।” (সূরা ১৪; ইবরাহীম ৪)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ﴿٤٤﴾
“(হে রাসূল!) এ কুরআনকে তোমার উপর নাযিল করেছি যাতে তুমি স্পষ্টভাবে বর্ণনা কর, যা তাদের কাছে অবতীর্ণ হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করতে পারে।” (সূরা ১৬; নাহল ৪৪) এতে বুঝা যায়, খুৎবায় যে নসীহত হয় তা বুঝিয়ে দেওয়া ও বুঝে নেওয়া একান্ত আবশ্যক। খুৎবায় আরবীতে যে আয়াতটি তিলাওয়াত করবে বা যে হাদীসটি পেশ করবে সাথে সাথে বাংলায় এর অর্থ, মর্ম ও শিক্ষা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেবেন। এটাই হলো খুৎবার প্রকৃত রূপ। আর খুৎবার অর্থ হলো ভাষণ, বক্তৃতা। এটা যদি সবটুকুই আরবীতে পেশ করা হয় আর মুসল্লীরা তা বুঝতে না পারে তাহলে এ খুৎবার উদ্দেশ্য হাসিল হয় না, লোকেরাও উপকৃত হয় না। তাছাড়া খুবার আগে কোন কোন মসজিদে বাংলায় আরেকটা বয়ান হয়। হাদীসের আলোকে এ পদ্ধতিটাও ঠিক নয়। কেননা, এতে খুৎবা হয়ে যায় দু’য়ের বদলে তিনটি। রাসূলুল্লাহ (সা.) জুমু'আর সালাতের পূর্বে মসজিদে কোন যিকরের হালকা বা অন্য কোন প্রকার শিক্ষামূলক প্রােগ্রামের হালকা করতে নিষেধ করেছেন। (নাসাঈ:৭১৪, আবু দাউদ: ১০৭৯, তিরমিযী: ৩২২, ইবনে মাজাহ: ১১৩৩)
এ হাদীসের ভিত্তিতে শুরুতে বাংলা বয়ান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এটা করলে খুবার সংখ্যা বেড়ে দু-এর বদলে তিনটি হয়ে যায়। আর খুৎবার সংখ্যা বাড়ানোর অধিকার আমাদের নেই। কাজেই এটাও জায়েয নয়। সেজন্য বিশেষজ্ঞ আলেমদের মতে, খুৎবা দুটোই থাকবে এবং এর বয়ান হবে মাতৃভাষায়, অর্থাৎ আমাদের দেশে হবে বাংলায়। মক্কা মুকাররামার মাসজিদুল হারামের সাবেক প্রধান ইমাম শেখ আব্দুল্লাহ ইবনে সুবাইলকে উনিশ শ’ আশির দশকের শুরুতে আমি এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, তোমাদের দেশে তোমরা বাংলাতেই খুৎবা দেবে। তা ছাড়া সৌদি আরবের সম্মানিত আরেকজন প্রখ্যাত মুফতী শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ছালেহ আল উসাইমীন (র) তার ফাতাওয়া গ্রন্থে লিখেছেন যে, যাদের ভাষা আরবী নয়, আরবী বুঝেও না, তাদের উদ্দেশ্যে কেবল আরবীতে খুৎবা দেওয়া জায়েয নেই। কারণ খুৎবাতে কী বলা হচ্ছে তা তারা উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে এ খুৎবা একটি অনর্থক কাজ হয়ে দাঁড়ায়। সে জন্য মুসল্লীরা যে ভাষা বুঝে সে ভাষায় খুৎবা দেওয়াকে তিনি ওয়াজিব বলেছেন।(ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন)
অনেক দিন পর হলেও এখন বাংলাদেশে কিছু কিছু মসজিদে বাংলায় খুৎবা দেওয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলার ইসলামী অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক, নরসিংদী জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আল্লামা সাইয়েদ কামালুদ্দীন জাফরী আরবী ভাষায় পারদর্শী হওয়ার পরও ঢাকার উত্তরায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদে বাংলায় খুৎবা দিয়ে থাকেন। [এখন অবশ্য তিনি এই মসজিদে খুৎবা দিচ্ছেন না] এছাড়াও আরো অনেক মসজিদে এরূপ আরবী-বাংলা মিশ্রিত খুৎবা চালু হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ, তবে এক্ষেত্রে খতীব সাহেবের তিলাওয়াত অবশ্যই বিশুদ্ধ হওয়া উচিত এবং বিশুদ্ধ উচ্চারণে হাদীসের ইবারত পড়ার দক্ষতা, আকীদা ও শরী'আহ বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।