লগইন করুন
২.১৬ (ক) তাহাজ্জুদ রাতের ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠে যে সালাত আদায় করা হয় তাকে বলা হয় তাহাজ্জুদ বা তাহাজ্জুদের সালাত। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ফরজ সালাতের পর সর্বোৎকৃষ্ট সালাত হলো রাতের নামায।
সুন্নাত, রাতের তাহাজ্জুদ আদায় আল্লাহর নেক বান্দাদের গুণ ও এটা মুত্তাকী লোকদের সিফাত। তাহাজ্জুদ গুজারীদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(ক) “যারা তাদের মালিকের উদ্দেশে সাজদাবনত হয়ে ও দণ্ডায়মান থেকে (তাদের) রাতগুলো কাটিয়ে দেয়।” (সূরা ২৫; ফোরকান ৬৪)
(খ) “তারা রাতের সামান্য অংশ ঘুমিয়ে কাটাতো। রাতের শেষ প্রহরে তারা (আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো।” (সূরা ৫১; যারিয়াত ১৭-১৮)।
(গ) “তাদের পিঠ (রাতের বেলায়) বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা (নিশি রাতে আযাবের) ভয়ে এবং (জান্নাতের আশায় তাদের মালিককে ডাকে, তদুপরি আমি তাদের যা কিছু দান করেছি তারা তা থেকে (আমার পথে) ব্যয় করে। কোন মানুষই জানে না, কি ধরনের নয়ন প্রীতিকর (বিনিময়) তাদের জন্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, (মূলত) তাই হবে তাদের কাজের (যথার্থ) পুরস্কার।” (সূরা ৩২; সাজদা ১৬-১৭)
(ঘ) “যারা রাতভর আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে এবং তারা (তাঁর জন্যে) সাজদা করে।” (সূরা ৩; আলে-ইমরান ১১৩)
(ঙ) “ঊষালগ্নের পূর্বে আল্লাহর কাছে তারা ক্ষমা প্রার্থনাকারী।” (সূরা ৩; আলে-ইমরান ১৭)
(চ) “যে ব্যক্তি রাতের বেলায় বিনয়ের সাথে সাজদাবনত হয়ে দাঁড়িয়ে (আল্লাহ তাআলার) ইবাদত করে সে পরকালের (আযাবের) ভয় করে এবং তার মালিকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে।” (সূরা ৩৯; যুমার ৯)
তাছাড়া তাহাজ্জুদের শানে আল্লাহ তাআলা তার নবী মুহাম্মাদ (স)-কে বলেন,
(১) “হে বস্ত্র আচ্ছাদনকারী (মুহাম্মাদ)! রাতে (নামাযের জন্যে উঠে) দাঁড়াও, কিছু অংশ বাদ দিয়ে তার অর্ধেক অংশ- অথবা তার চাইতে আরো কিছু কম করো, কিংবা তার ওপর (আবো কিছু) বাড়িয়ে দাও, আর তুমি কুরআন তিলাওয়াত করো থেমে থেমে।” (সূরা ৭৩; মুযাম্মিল ১-৪)
(২) “রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ (নামায আদায় করো), এটা তোমার জন্যে (ফরয নামাযের) অতিরিক্ত, আশা করা যায় (এর দ্বারা) তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত মর্যাদায় পৌছে দেবেন।” (সূরা ১৭; বনী ইরাঈল ৭৯)।
(৩) “তুমি সকাল সন্ধ্যা শুধু তোমার মালিকের নাম স্মরণ করতে থাকো, রাতের একাংশ তার সামনে সাজদাবনত থাকো এবং রাতের দীর্ঘ সময় ধরে তার মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করতে থাকো।” (সূরা ৭৬; দাহর ২৫-২৬)
(৪) এ ছাড়াও আরো ক’টি আয়াতে আল্লাহর তার প্রিয় হাবীবকে তাহাজ্জুদের আদেশ নিয়েছেন। নবী করীম (স) ও এ সালাত আদায়ের জন্য উৎসাহিত করে বলেছেন, রমযানের পর সবোত্তম সিয়াম হলো মুহররম মাসের সিয়াম এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত। (মুসলিম)
তাহাজ্জুদের ফযীলত
হাদীসে শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
১. স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (স) এ সালাত আদায়ে এত গুরুত্ব দিতেন যে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার দু'পা ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, (হে আল্লাহর রাসূল!) আপনারতো আগে পরের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন (এরপরও আপনি এত কষ্ট কেন করছেন ?) [তিনি বললেন]
“আমি কি (তার) কৃতজ্ঞ বান্দা হলো না?” (বুখারী: ৪৮৩৬, ৪৮৩৭)
২. জান্নাতে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় - “হে মানুষেরা! তোমরা বেশি বেশি সালাম দাও, মানুষকে খানা খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন (সেই রাত নিশিতে তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় কর। এতে তোমরা নির্বিঘ্নে অনায়াসে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (ইবনে মাজাহ: ৩২৫১)
৩. জান্নাতে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কক্ষ লাভ করবে: জান্নাতে এমন কিছু প্রাসাদ রয়েছে যেগুলোর ভিতর থেকে বাইরের এবং বাইরে থেকে ভিতরের দৃশ্য দেখা যাবে। এসব কক্ষবিশিষ্ট জান্নাত পাবে তারা যারা উত্তম ও নরম ভাষায় কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খানা খাওয়ায়।
নিয়মিত (নফল-সুন্নাত) সিয়াম পালন করে, বেশি বেশি সালাম দেয় এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তারা তাহাজ্জুদ পড়ে।(তিরমিযী: ২৫২৭, আহমাদ- ৫/৩৪৩)
৪. গোনাহ মাফের বড় উপায়: তাহাজ্জুদের সালাত আদায়- এটা ছিল পূর্ববর্তী যামানার নেক বান্দাদের অভ্যাস, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, গোনাহের কাফফারা এবং রোগমুক্তি (ও সুস্থ থাকার) উপায় (তিরমিযী: ৩৫৪৯)
৫. ফরজের পর এটা সর্বোত্তম সালাত: রমযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো, মুহাররম মাসের সিয়াম এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো তাহাজ্জুদের সালাত।(মুসলিম)।
৬. তাহাজ্জুদ হলো মুমিন বান্দার সম্মানবৃদ্ধিকারী ইবাদত। (হাকেম- ৪/৩২৫)
৭. তাহাজ্জুদের সালাতে কুরআন তিলাওয়াত এক মহা গনীমত। “যে ব্যক্তি রাতের (তাহাজ্জুদের) সালাতে দশটি আয়াত পড়বে সে আর গাফেলদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না। আর যে (এ সালাতে) একশটি আয়াত পড়বে তার নাম আল্লাহর অনুগত বান্দাদের মধ্যে লিপিবদ্ধ হবে। আর যে ব্যক্তি এ সালাতে এক হাজার আয়াত পড়বে তার নাম অফুরন্ত পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় লিপিবদ্ধ হবে।” (আবু দাউদ: ১৩৯৮)। এসব ফযীলতের সাথে কুরআন কারীমেও আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদ গোজারীদের প্রশংসা করেছেন এবং তারা যে পূর্ণ ঈমানদার বান্দা সে টিকেটও দিয়েছেন। (দেখুন সূরা ফুরকান: ৬৪, সূরা আস সাজদা: ১৫-১৭)।
৮. সে সময়টি দু'আ কবুলের উত্তম মুহূর্ত: রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন আর মানুষকে এই বলে আহবান করতে থাকেন যে, কে আছে এখন আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দিব। কে আছে আমার কাছে এখন ক্ষমা চাইবে; আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। ভাের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এভাবে তিনি ডাকতে থাকেন।(বুখারী)