লগইন করুন
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সকল অনুসারী কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাদের সংখ্যা চারজন: সাইয়্যেদা যয়নব, সাইয়্যেদা রুকাইয়া, সাইয়্যেদা উম্মে কুলসুম ও সাইয়্যেদা ফাতেমা যাহরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না। আর অনুরূপ মত পোষণ করে সাধারণ শিয়াগণও। তবে ভারত ও পাকিস্তানের শিয়াগণ তিন কন্যাকে অস্বীকার করে এবং তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য শুধু এক কন্যাকে সাব্যস্ত করে; আর তিনি হলেন সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা। আর বাকি তিনজনকে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা নয় বলে মতামত প্রকাশ করেছে এবং এর দ্বারা তারা আল্লাহ তা‘আলার বিধানের স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱدۡعُوهُمۡ لِأٓبَآئِهِمۡ هُوَ أَقۡسَطُ عِندَ ٱللَّهِ﴾ [سورة الأحزاب: 5]
“তোমরা তাদেরকে তাদের পিতার পরিচয়ে ডাক; আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই অধিক ন্যায়সংগত।”— (সূরা আল-আহযাব: ৫)
তাদের এই মত প্রকাশের একমাত্র কারণ হল ওসমান ইবন ‘আফফান যূন্নুরাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে শত্রুতা করা, যাতে তাঁর উচ্চ মর্যাদা স্বীকৃত না হয়; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট প্রথমে সাইয়্যেদা রুকাইয়াকে বিয়ে দেন; অতঃপর যখন তিনি (রুকাইয়া) ইন্তিকাল করেন, তখন তাঁর নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাইয়্যেদা উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেন; আর এ জন্য তাকে ‘যূন্নুরাইন’ নামে ডাকা হত।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّ ﴾ [سورة الأحزاب: 59]
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়।”— (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা "بنات" শব্দটি বহুবচনের শব্দ দ্বারা উল্লেখ করেছেন, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক কন্যা সন্তানের প্রমাণ করে। আর শিয়া আলেমগণ লিখেছেন: তিনি খাদিজাকে যখন বিয়ে করেন, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল বিশ বছরের বেশি; অতঃপর তার থেকে তাঁর নবুয়তের পূর্বে জন্ম গ্রহণ করে কাসেম, রুকাইয়া, যয়নব ও উম্মে কুলসুম এবং তার থেকে তাঁর নবুয়তের পরে জন্ম গ্রহণ করে তাইয়্যেব, তাহের ও ফাতেমা আ.।[1]
অনুরূপভাবে শিয়াদের (মতে তাদের) নিষ্পাপ ইমাম ও তাদের আলেমগণের বক্তব্যগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক কন্যা সন্তান সাব্যস্ত করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট এবং তাদের নামসমূহ নিম্নোক্ত গ্রন্থসমূহের মধ্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে; আর এই গ্রন্থগুলোর সব কটিই শিয়াদের:
- মাজালিসুল মুমিননীন (مجالس المؤمنين), পৃ. ৮৩
- আত-তাহযিব (التهذيب), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৪
- তাফসীরু মাজমা‘ইল বায়ান (تفسير مجمع البيان),২য় খণ্ড, পৃ. ২৩৩
- ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ২য় খণ্ড, পৃ. ২২২
- ফয়দুল ইসলাম (فيض الإسلام), পৃ. ৫১৯
- নাহজুল বালাগাহ (نهج البلاغة), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৫
- কুরবুল ইসনাদ (قرب الإسناد), পৃ. ৬
- তুহফাতুল ‘আওয়াম (تحفة العوام), সাইয়্যেদ আহমদ আলী, পৃ. ১১৩
- হায়াতুল কুলুব (حيات القلوب), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮২, ৫৫৯, ২২৩, ৫৬০
- মুন্তাহাল আমাল (منتهى الامال), ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৯
- মিরআতুল ‘উকুল (مرآة العقول), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫২
আর আল-কুলাইনী ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা আ.-কে আলীর নিকট বিয়ে দেন, তখন তিনি তার নিকট হাজির হয়ে দেখতে পান যে, সে কাঁদছে; অতঃপর তিনি তাকে বললেন, তুমি কি জন্য কাঁদছ? আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আমার পরিবারে তার (আলীর) চেয়ে উত্তম কেউ যদি থাকত, তবে আমি তোমাকে তার নিকট বিয়ে দিতাম। আর আমি তোমাকে তার নিকট বিয়ে দেইনি; বরং আল্লাহই তোমাকে তার নিকট বিয়ে দিয়েছেন।”[2]
আল-কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ফাতেমা আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল: আপনি আমাকে তুচ্ছ মোহরের বিনিময়ে বিয়ে দিয়েছেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আমি তো তোমাকে বিয়ে দেইনি; বরং আল্লাহই তোমাকে আকাশ থেকে বিয়ে দিয়েছেন।”[3]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী তার ‘জালাউল ‘উয়ুন’ (جلاء العيون) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
“ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. ‘কাশফুল গুম্মাহ’ (كشف الغمة) গ্রন্থে বলেন যে, কোন একদিন ফাতেমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগ করল: আলীর নিকট অর্থ-সম্পদ আসলেই সে তা ফকির ও মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি কি চাও যে, আমার ভাই ও আমার চাচার ছেলে অসন্তুষ্ট হউক? তুমি জেনে রাখ যে, তার অসন্তুষ্টি মানে আমার অসন্তুষ্টি; আর আমার অসন্তুষ্টি মানে আল্লাহর অসন্তুষ্টি; এই কথা শুনে ফাতেমা বলল: আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহর ক্রোধ ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ থেকে আশ্রয় চাই।”[4]
প্রথম দু’টি বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে তাঁর দরিদ্রতা ও মোহরের স্বল্পতার কারণে বিয়ে বসতে রাজি ছিলেন না। আর এতে জান্নাতবাসী নারীদের নেত্রীকে অপমান করা হয়েছে। কারণ, তিনি এই নশ্বর পৃথিবীর মধ্যে দুনিয়া ত্যাগী এবং পরকালের প্রতি আগ্রহী নারীদের মাঝে অন্যতমা ছিলেন। সুতরাং কিভাবে এরূপ কল্পনা করা যায় যে, তিনি দুনিয়ার কারণে অথবা অঢেল সম্পদ ও তুচ্ছ মোহরের অজুহাতে এই বরকতময় বিয়েতে রাজি ছিলেন না। অনুরূপভাবে তৃতীয় বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, তিনি (ফাতেমা রা.) সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক ফকির ও মিসকিনদেরকে অর্থ-সম্পদ দান করাকে অপছন্দ করতেন (নাউযুবিল্লাহ), এমনকি তিনি তাঁর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগও করতেন। আর এটা কি করে সম্ভব, অথচ তিনি হলেন দানশীলের মেয়ে দানশীলা। আর শিয়াদের ব্যাপারে এটা অবাক লাগে যে, তারা সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে এই ধরনের নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করার পর কিভাবে তাঁর প্রতি ভালবাসার দাবি করে; যেসব কর্মকাণ্ড যে কোন ভদ্র মহিলার জন্য বেমানান; সুতরাং তা কিভাবে তাঁর সাথে মানানসই হতে পারে।
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ (الاحتجاج) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“অতঃপর তিনি (ফাতেমা রাঃ) ফিরে গেলেন; আর আমীরুল মুমিনীন তার নিকট তার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকলেন এবং তার নিকট তার আগমনের প্রত্যাশা করলেন। অতঃপর তিনি যখন তার বাড়ীতে অবস্থান করেন, তখন তিনি আমীরুল মুমিনীন আ.কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আবূ তালিবের ছেলে! তুমি ‘জানীন’ শহরের চাদর পরিধান করেছ, অকল্যাণকর ব্যক্তির ঘরে বসেছ এবং পাকানো পশমের গিঁট খুলেছ। সুতরাং নিরস্ত্র ব্যক্তির সম্পদ তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে; এই হল আবূ কুহাফার ছেলে, যে আমার পিতার ধর্মভীরুতা এবং আমার ছেলের নির্বুদ্ধিতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। সে আমার সাথে বাক-বিতণ্ডায় সাবধানতা অবলম্বন করেছে; আর আমি তাকে আমার কথায় প্রচণ্ড ঝগড়াকারীরূপে পেয়েছি; এমনকি আনসারদের উষ্ট্রী আমাকে অবরুদ্ধ করেছে; আর মুহাজিরগণ তাকে পৌঁছায়ে দিয়েছে। আর একদল লোক তাদের নীচু চোখে আমাকে দেখল; কিন্তু তারা প্রতিরোধ ও বাধা প্রদান কোনটিই করতে পারল না। আমি সংযত হয়ে বের হলাম এবং নারাজ অবস্থায় ফিরে এলাম; তুমি তোমার গণ্ডদেশকে দুর্বল করেছ সেই দিন, যেই দিন তুমি তোমার দণ্ড মওকুফ করেছ।
আমি নেকড়ে বাঘ শিকার করেছি এবং মাটিকে বিছানারূপে ব্যবহার করেছি; আমি কোন বক্তাকে বাধা দেইনি এবং কোন উপকারকে যথেষ্ট মনে করিনি। আর আমার কোন স্বাধীনতা নেই; হায় আমি যদি আমার সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও অপমানের পূর্বে মারা যেতাম! আমার সাহায্যকারী হলেন আল্লাহ, তিনি স্বাভাবিকভাবেই আমাকে সাহায্য করবেন এবং তোমার থেকে আমাকে রক্ষা করবেন। প্রত্যেক পূর্ব ও পশ্চিমে অবস্থানকারীর মধ্যে আমার ধ্বংস ও দুর্ভাগ্য। ইচ্ছাশক্তি মারা গেছে এবং বাহু-বল দুর্বল হয়ে গেছে। আমার অভিযোগ আমার পিতার প্রতি এবং আমার বিভ্রান্তি বা বিপর্যয় আমার প্রভুর দিকে। হে আল্লাহ! তুমি তাদের চেয়ে শক্তিধর ও ক্ষমতাবান; কষ্ট ও শাস্তিদানে কঠোর। অতঃপর আমীরুল মুমিনীন আ. বলেন: তোমার জন্য আফসোস নয়; বরং আফসোস হয় তোমার শত্রুর জন্য; অতঃপর তুমি তোমার ক্রোধ থেকে বিরত থাক হে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির কন্যা ও নবুয়তের বাকি অংশ! আমি আমার দীনের ব্যাপারে ক্লান্ত হইনি এবং আমি আমার নিয়তিতে ত্রুটি করিনি। সুতরাং তুমি যদি জীবন ধারণের ন্যূনতম উপকরণ চাও, তবে তোমার রিযিক সংরক্ষিত এবং তোমার অভিভাবক নিরাপদ; তুমি যা হারিয়েছ তার চেয়ে উত্তম জিনিস তোমার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সুতরাং আল্লাহকেই যথেষ্ট মনে কর; অতঃপর সে বলল: আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং আমি বিরত থাকলাম।”[5]
এটা কি যুক্তিসংগত হতে পারে যে, সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তার স্বামী সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে এই পদ্ধতিতে সম্বোধন করেছেন, যে পদ্ধতিতে এই যুগের কোন ভদ্র স্ত্রীও তার স্বামীকে সম্বোধন করতে পছন্দ করে না। আর আমরা যদি এই বর্ণনাটিকে সত্য বলে রায় পেশ করি, তবে তা থেকে সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা কর্তৃক তার স্বামীর ব্যাপারে নির্লজ্জতা, কঠোরতা ও রূঢ়তা প্রকাশ পাবে (নাউযুবিল্লাহ); আর সত্য বিষয়ে জনসমক্ষে সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাপুরুষতা ও দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। আর এটাও কি যুক্তিসংগত হতে পারে, অথচ তিনি হলেন অনন্য বীরত্বের অধিকারী আসাদুল্লাহ আল-গালিব (আল্লাহর বিজয়ী সিংহ)। আমি বুঝতে পারছি না, শিয়াদের জ্ঞান-বুদ্ধি কোথায় যাচ্ছে, যারা আলী ও ফাতেমার ভালবাসা দাবি করে; অতঃপর এসব নির্বুদ্ধিতার বিবরণসমূহ নিয়ে আসে, যা তাদের দাবিকৃত বিষয়ের বিপরীত। আর প্রকৃতপক্ষে – যেমনটি আপনি দেখলেন- তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাদেরকে অপমান করে। আর এসব হাসিল হয় তাদের হীন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এই ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট আয়াতসমূহ আবিষ্কারের সময়। আর তারা বেমালুম ভুলে যায় যে, এই বানোয়াট বর্ণনাসমূহ প্রকারান্তরে তাদেরই ক্ষতি করে। বস্তুত বানোয়াট বর্ণনাসমূহের চিরাচরিত অবস্থা এরকমই হয়ে থাকে এবং সেগুলোর মিথ্যার দিকটি সকল মানুষের সামনে যথাসময়ে ফুটে উঠে।
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ (الاحتجاج) নামক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন:
“সালমান (ফারসি) বলেন: যখন রাত হয়, তখন আলী ফাতেমাকে গাধার উপর আরোহণ করান এবং তার দুই ছেলে হাসান ও হোসাইনের হাত ধরেন; অতঃপর বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুহাজির ও আনসারগণকে এক এক করে ডাকেন; তারা প্রত্যেকে তার বাসায় আসল; আর তিনি (তাদের নিকট) তার অধিকারের কথা বললেন এবং তাকে সাহায্য করার জন্য আহ্বান করলেন ..., অতঃপর সকাল হয়ে গেল, কিন্তু চারজন ব্যতীত আর কেউ তার আবদার রক্ষা করেনি; আমি সালমানকে জিজ্ঞাসা করলাম: সেই চারজন কে? তিনি বললেন: আমি, আবূ যর, মিকদাদ ও যোবায়ের ইবন ‘আওয়াম; তিনি তাদের নিকট দ্বিতীয় রাত্রে আসলেন ..., অতঃপর তৃতীয় রাত্রে আসলেন, কিন্তু আমরা ব্যতীত কেউই তার আবদার রক্ষা করেনি।”[6]
আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ (الاحتجاج) নামক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন:
“যখন রাত হয়, তখন তিনি ফাতেমাকে গাধার উপর আরোহণ করান, অতঃপর তিনি তাদেরকে তার সাহায্য করার জন্য আহ্বান করেন, কিন্তু আমরা চারজন ব্যতীত কেউই তার আহ্বানে সাড়া দেয়নি।”[7]সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কলিজার টুকরা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে নিয়ে অধিক ঘোরাঘুরি ও তাকে নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের দরজায় দরজায় ধরনা দেয়া কি সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য অসম্মান ও অপমানজনক নয়? আর এটা কি যুক্তিসংগত হতে পারে যে, তিনি এই ধরনের সকল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরেও তার ডাকে কেউই সাড়া দেয়নি, বিশেষ করে বনু হাশিমের কেউ; বরং নিঃসন্দেহে এই বর্ণনাটি রাফেযীগণ মিথ্যা ও বানোয়াটি কায়দায় তৈরি করেছে।
[2] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায়, পৃ. ১৫৭
[3] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায়, পৃ. ১৫৭
[4] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী, জালাউল ‘উয়ুন (جلاء العيون), (ইরানি সংস্করণ), পৃ. ৬১
[5] আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ (الاحتجاج), পৃ. ১৪৫
[6] আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ (الاحتجاج), পৃ. ১৫৭
[7] আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ (الاحتجاج), পৃ. ১৫৮