লগইন করুন
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হক্কুল ইয়াকীন’ (حق اليقين) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় বলেন, যার আরবি (বাংলা) অনুবাদ হল:
“দায়মুক্তির ব্যাপারে আমাদের (শিয়াদের) আকিদা ও বিশ্বাস হল, আমরা আবূ বকর, ওমর, ওসমান ও মুয়াবিয়ার মত চার মূর্তি থেকে মুক্ত; আমরা আরও মুক্ত আয়েশা, হাফসা, হিন্দা ও উম্মুল হেকামের মত চার নারী এবং তাদের অনুসারী ও তাদের বিভিন্ন দল-গোষ্ঠী থেকে। আর তারা হল পৃথিবীর বুকে আল্লাহর নিকৃষ্ট সৃষ্টি। আর তাদের শত্রুদের থেকে মুক্ত হওয়ার পরেই শুধু আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ইমামদের প্রতি ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করবে।”[1]
এই বিশ্বাস অন্যান্যদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা ও হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে অপমানের সুস্পষ্ট প্রমাণ; অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদের ব্যাপারে বলেন:
﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡ﴾ الآية ... [سورة الأحزاب: 6]
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা।” আয়াত ... — (সূরা আল-আহযাব: ৬)
মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হায়াতুল কুলুব’ (حياة القلوب) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় বলেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
“ইবনু বাবুইয়া ‘এলালুশ শারায়ে‘ (علل الشرائع) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং ফাতেমার প্রতিশোধ হিসেবে তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন” ...[2]
আর এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়া আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ব্যাপারে তাদের চরম নির্লজ্জতা ও নোংরামি। কি দিয়ে আমরা এই ধরনের মিথ্যা অপবাদের সমালোচনা বা পর্যালোচনা করব, সেই ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা ঐসব শিয়া ও তাদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কর্মকাণ্ডের বিষয়টি প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলার হাতে সোপর্দ করলাম, যাতে তিনি তাদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন।
আর তাদের শাইখ মকবুল আহমদ তার ‘তরজমাতু লি মা‘আনিল কুরআন’ (ترجمة لمعاني القرآن)-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বলেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
“নিশ্চয় উষ্ট্রের যুদ্ধে বসরার সৈনিকদের সেনানেত্রী আয়েশা এই আয়াত অনুযায়ী স্পষ্ট অশ্লিল কাজে জড়িয়ে গেছে ...।”[3]
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ নামক গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন:
“আলী আ. উম্মুল মুমেনীন আয়েশাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আল্লাহর শপথ! তিনি আমাকে তাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন ...। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী আ.-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন: হে আলী! আমার স্ত্রীদের বিষয়টি আমার অবর্তমানে তোমার হাতে দিয়ে গেলাম।”
অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর অধিকার ছিল যে, তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর (রাসূলের) পবিত্র স্ত্রীদের যে কাউকে তালাক দিতে পারতেন। শিয়াগণ বিশেষ করে উম্মুল মুমেনীন আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপরাপর স্ত্রীগণের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য এই বর্ণনাসমূহের মত মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনার উদ্ভাবন করেছে; অথচ আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনুল কারীমের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণের গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন; তিনি তাঁর নবীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর এসব স্ত্রীদের শানে বলেন:
﴿ لَّا يَحِلُّ لَكَ ٱلنِّسَآءُ مِنۢ بَعۡدُ وَلَآ أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنۡ أَزۡوَٰجٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَكَ حُسۡنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتۡ يَمِينُكَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ رَّقِيبٗا ﴾ [سورة الأحزاب: 52]
“এর পর তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে; তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন ।” — (সূরা আল-আহযাব: ৫২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡ﴾ [سورة الأحزاب: 6]
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা।” — (সূরা আল-আহযাব: ৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ ﴾ الآية ... [سورة الأحزاب: 32]
“হে নবী-পত্নিগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও;” আয়াত ... — (সূরা আল-আহযাব: ৩২)
তাঁদের (উম্মুহাতুল মুমেনীন) ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়েছে:
﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [سورة الأحزاب: 33]
“হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।”— (সূরা আল-আহযাব: ৩৩)
আর বিশেষ করে সাইয়্যেদা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার পবিত্রতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা সূরা নূরের আয়াতসমূহ নাযিল করেছেন। আর তা সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে, যে ব্যক্তি তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেয় এবং তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনাসমূহের উদ্ভাবন করে, সে ব্যক্তি মুনাফিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত; আল্লাহ তা‘আলা সূরার শেষ অংশে বলেন:
﴿يَعِظُكُمُ ٱللَّهُ أَن تَعُودُواْ لِمِثۡلِهِۦٓ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٧﴾ [سورة النور: 17]
“আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, ‘তোমরা যদি মুমিন হও, তবে কখনও অনুরূপ আচরণের পূনরাবৃত্তি করো না।”— (সূরা আন-নূর: ১৭)কেমন দুঃসাহস করেছে ঐসব শিয়াগণ; আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের প্রতি তাদের কোন লজ্জাবোধ নেই; ফলে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণকে অসম্মান করছে। কারণ, কোন স্বামী কখনও পছন্দ করবে না যে, কেউ তার স্ত্রীর পিছনে লেগে থাকুক, অথবা তার ব্যাপারে অপবাদ দিক এবং যে কোন ধরনের অপমান করুক; বরং একজন ভদ্র মানুষ কোন কোন সময় কোন কারণে নিজের অপমান সহ্য করতে পারলেও সে তার স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে অসম্মান, অপমান ও অপবাদ সহ্য করতে পারে না।
>[2] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৭৮; হায়াতুল কুলুব (حياة القلوب), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৫৪
[3] মকবুল আহমদ, তরজমাতুল কুরআন (ترجمة لمعاني القرآن), (উর্দু ভাষায়), পৃ. ৮৪০, সূরা আল-আযহাব।