লগইন করুন
উপর্যুক্ত আয়াত দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, মানুষসহ সকল জীবের দেহের সাথে যতক্ষণ তাদের রূহের স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকে, ততক্ষণ তাদের দেহ জীবিত থাকে এবং ততক্ষণ পর্যন্তই সকল জীব শুনতে পারে। অন্যথায় নয়। দেহ মরে যাওয়ার পর রূহ মরে না গেলেও রূহের শ্রবণ করার মত নিজস্ব কোনো যোগ্যতা অবশিষ্ট থাকে না। আর সে-জন্যই রাসূলগণ আখেরাতে উপর্যুক্ত জবাব দেবেন। পক্ষান্তরে মুশরিকরা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যে সকল ফেরেশ্তাদের উপাসনা করতো তারা জীবিত থাকার কারণে তাদেরকে কেন্দ্র করে মুশরিকরা যা কিছু করতো আখেরাতে তারা আল্লাহ তা‘আলার এ জাতীয় প্রশ্নের জবাবে রাসূলগণের ন্যায় জবাব না দিয়ে বলবেন:ওরা আমাদের উপাসনা করেনি, ওরা বরং জিনের তথা শয়তানের উপাসনা করতো। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿ وَيَوۡمَ يَحۡشُرُهُمۡ جَمِيعٗا ثُمَّ يَقُولُ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَهَٰٓؤُلَآءِ إِيَّاكُمۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٤٠ قَالُواْ سُبۡحَٰنَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِمۖ بَلۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٱلۡجِنَّۖ أَكۡثَرُهُم بِهِم مُّؤۡمِنُونَ ٤١ ﴾ [سبا: ٤٠، ٤١]
‘‘আর যেদিন তিনি সবাইকে একত্রিত করবেন, অতঃপর ফেরেশ্তাদের বলবেন: এরা কি তোমাদেরই উপাসনা করতো? তারা বলবে:আপনি পূত পবিত্র, আপনিই আমাদের অভিভাবক, ওরা নয়। বরং তারা জিনেরই উপাসনা করতো এবং তাদের অধিকাংশরাই এদের উপর ঈমান আনয়ন করতো।’’[1] এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুশরিকরা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যে ফেরেশ্তাদেরকে কেন্দ্র করে শির্ক কর্ম করতো, সে ফেরেশ্তারা জীবিত থাকায় তারা সে সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। আর সে-জন্যই আল্লাহর উপর্যুক্ত প্রশ্নের জবাবে রাসূলগণের ন্যায় তাদের অজ্ঞতার কথা না বলে তাঁরা বলবেন:ওরা আমাদের উপাসনা করেনি, বরং তারা জিন তথা শয়তানের উপাসনা করেছে।
অনুরূপভাবে দেখা যায় আল্লাহ তা‘আলা আখেরাতে যখন ঈসা u কে খ্রিস্টানদের ত্রিত্ত্ববাদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, তখন তিনিও সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকার কারণে বলবেন:
﴿ مَا قُلۡتُ لَهُمۡ إِلَّا مَآ أَمَرۡتَنِي بِهِۦٓ أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۚ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ﴾ [المائدة: ١١٧]
‘‘আপনি আমাকে যা বলতে আদেশ করেছিলেন আমি তাদেরকে কেবল তাই বলেছি যে, তোমরা আল্লাহর উপাসনা করো, যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা, আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিন তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন...’’।[2] ঈসা আলাইহিস সালামের উক্ত জবাব থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, এ দুনিয়াবী পরিবেশে জীবিত না থাকলে কারো পক্ষে এ দুনিয়ার মানুষেরা কি করছে, তা নিজ থেকে জানার বা শ্রবণ করার কোনই উপায় নেই।
অনুরূপভাবে দেখা যায়, আরবের মুশরিকরা ওয়াদ, সুয়া‘, ইয়াগুছ ও অন্যান্য যে-সব মূর্তিসমূহকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করতো, সে-সব মূর্তিসমূহের সবাই তাদের আহ্বান না শুনলেও অন্তত ওয়াদ, সুয়া‘...ইত্যাদি মূর্তিগুলো সৎ মানুষদেরকে কেন্দ্র করে তৈরী হওয়ার কারণে তাঁদের পক্ষে তা শ্রবণ করার কথা। কিন্তু আল্লাহর কথানুযায়ী প্র্র্রমাণিত হয় যে, তারাও মুশরিকদের সে-সব আহ্বান সম্পর্কে সম্পূর্ণ বে-খবর রয়েছেন।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُۥٓ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآئِهِمۡ غَٰفِلُونَ ٥ ﴾ [الاحقاف: ٥]
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ব্যতীত এমন কাউকে আহ্বান করে যে কেয়ামত পর্যন্ত তার আহবানে সাড়া দেবে না, সে ব্যক্তির চেয়ে পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে ? তাঁরা তো তাদের আহ্বান সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখবর।’’[3] উক্ত এ-সব আয়াতসমূহ দ্বারা এ-কথাই প্রমাণিত হয় যে, কোনো মানুষ মরে যাওয়া বা ইন্তেকাল করার পর- তিনি কোনো ওলি হোন আর না-ই হোন না কেন-তিনি নিজ থেকে জীবিতদের কর্মকাণ্ডের কোনো খোঁজ-খবর রাখতে পারেন না। আল্লাহ যদি কাফের ও মু’মিন নির্বিশেষে তাদেরকে বিশেষ কোনো মুহূর্তে কিছু শুনাতে চান, কেবল তা ব্যতীত তারা নিজ থেকে কারো কোনো কথা বা আহ্বান শ্রবণ করতে পারেন না।
>[2]. আল-কুরআন, সূরা মা-ইদাঃ ১১৮।
[3]. আল-কুরআন, সূরা আহক্বাফ: ৫-৬।