লগইন করুন
যে মানুষ মরে যায়, সে মানুষ আমাদের দৃষ্টিতে কোনো ওলি হোন আর না-ই হোন, তিনি মরে যাওয়ার পর তার আর কোনো অনুভূতি থাকেনা। তাকে হাজার বার আহ্বান করলেও তিনি আর তা শুনতে পান না। এটিই হচ্ছে বাস্তবতা। কিন্তু, শয়তান অলিগণের ব্যাপারে সাধারণ জনমনে একটি স্বতন্ত্র ধারণা দিতে চেষ্টা করেছে যে, তাঁরা মরেও মরেন না। তাঁরা কেবল ইনতেকাল বা স্থানান্তরিত হন। স্থান পরিবর্তনের পর তাঁদের রূহানী শক্তি পূর্বের চেয়ে আরো বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই যে যেখান থেকেই তাঁদেরকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করুক না কেন, তাঁরা নিজ নিজ কবর থেকেই তা শুনতে পান এবং আহ্বানকারী ব্যক্তির উপকার করেন। প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করেন।
শয়তানের এ অপকৌশল ছিন্ন করার জন্য আমাদেরকে দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে:
এক, মানুষের দেহ থেকে আত্মা বেরিয়ে যাওয়ার পর মানুষ কি মরে যায়, না ইন্তেকাল করে? মৃত্যুর পর রূহ কোথায় যায় ?
দুই, মৃত মানুষের শ্রবণের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য কী?
মানুষ মরে না ইন্তেকাল করে?
এ-কথা সত্য যে, আমাদের দেহের সাথে রূহের সহঅবস্থান যতদিন থাকে, ততদিন আমরা এ ইহজগতে জীবিত থাকি। আর যখন তা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন আমাদের এ দেহ মরে যায়। আমাদের দেহ মরে যাওয়ার মাধ্যমে আমরা বরযখী জগতে স্থানান্তরিত হই। এটি হচ্ছে পরজগতের প্রথম ধাপ। এ সময় আমাদের দেহ মরে গেলেও রূহ মরে না। এমতাবস্থায় একজন মানুষ মরে যাওয়ার পর তিনি মরে গেছেন না ইন্তেকাল করেছেন কোনটি বলবো ?
মৃত্যুর মাধ্যমে সকল মানুষ পরজগতে স্থানান্তরিত হলেও কুরআনুল কারীমের পরিভাষায় তাদেরকে স্থানান্তরিত হয়েছেন না বলে মরে গেছেনই বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ আর অসাধারণ মানুষ বলে কুরআন ও হাদীসে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুকে মৃত্যু বলেই আখ্যায়িত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّكَ مَيِّتٞ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ ٣٠ ﴾ [الزمر: ٣٠]
‘‘নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে’’।[1] অপর স্থানে বলেছেন:
﴿ وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٞ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِ ٱلرُّسُلُۚ أَفَإِيْن مَّاتَ أَوۡ قُتِلَ ٱنقَلَبۡتُمۡ عَلَىٰٓ أَعۡقَٰبِكُمۡۚ ﴾ [ال عمران: ١٤٤]
‘‘আর মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র, তাঁর পূর্বেও রাসূলগণ অতিবাহিত হয়েছেন, তিনি যদি মরে যান বা নিহত হন, তা হলে তোমরা কি তোমাদের পিছনে ফিরে যাবে’’।[2]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণও তাঁর মৃত্যুকে ইন্তেকাল না বলে মৃত্যু বলেই মনে করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর যখন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্যরূপ চিন্তা করেছিলেন, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সবাইকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন:
[مَنْ كَانَ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ وَ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَإِنَّ اللهَ حَيٌّ لاَيَمُوْتَ.]
‘‘যে মুহাম্মদ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপাসনা করে সে নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুক যে, মুহাম্মদ মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যে আল্লাহর উপাসনা করে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহ নিশ্চিত জীবিত, তিনি মরেন না’’।[3] রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুকে আল্লাহ ও সাহাবীদের দৃষ্টিতে যদি ইন্তেকাল না বলে মৃত্যু বলা হয়, তা হলে অন্য কারো মৃত্যুকে মৃত্যু না বলে ইন্তেকাল বা স্থানান্তরিত বলার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। তর্কের খাতিরে যদি তা স্বীকার করেও নেয়া হয়, তবুও কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া মৃতদের রূহের শ্রবণের বিষয়টি স্বীকার করা যায়না।
মৃত্যুর পর মানুষের রূহ কোথায় যায়?
মৃত মানুষের রূহের শ্রবণ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পূর্বে মৃত্যুর পর মানুষের রূহ কোথায় যায়-এ বিষয় সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা হলে মৃতদের শ্রবণ সম্পর্কিত অনেক জিজ্ঞাসারই জবাব আমরা অতি সহজেই অবগত হতে পারবো।
এ বিষয়ে কুরআন, হাদীস ও মনীষীগণের মতামত যাচাই করে যা জানা যায় তা হলো:মানুষ মরে যাওয়ার পর নাকীর ও মুনকার ফেরেশ্তাদ্বয়ের জিজ্ঞাসাবাদের পূর্বে মানুষের শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর সে সম্পর্ক পুনরায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রূহ কোথায় যায় আল্লামা ইবনু আবিল ইয্য আল-হানাফী এর বর্ণনানুযায়ী এ নিয়ে মনীষীদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। নিম্নে এর উল্লেখযোগ্য কয়কেটি মত বর্ণিত হলো:
১. মু’মিনদের রূহসমূহ জান্নাতে অবস্থান করে এবং কাফিরদের রূহসমূহ জাহান্নামে অবস্থান করে।
২. মু’মিনদের রূহসমূহ জান্নাতের বাইরে এর দরজার নিকটবর্তী প্রাঙ্গনে থাকে, সেখানে থেকেই তারা জান্নাতের সুঘ্রাণ ও জীবিকা লাভ করে।
৩. ইমাম মালিক (রহ.) বলেন: আমার নিকট এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, রূহসমূহ মুক্ত থাকে এবং তা যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়ায়।
৪. কা‘ব আল-আহবার এর মতে মু’মিনদের রূহ সপ্তম আকাশে অবস্থিত ‘ইল্লিয়্যীন’ নামক স্থানে অবস্থান করে এবং কাফিরদের রূহ সপ্তম জমিনের নিচে ‘সিজ্জীন’ নামক স্থানে থাকে।
৫. ইমাম ইবনে হাযাম বলেন: শরীর সৃষ্টির পূর্বে রূহ যেখানে ছিল মৃত্যুর পর তা সেখানে অবস্থান করে।
৬. ইমাম ইবনে ‘আব্দিল বার বলেন:শহীদদের রূহসমূহ জান্নাতে থাকে এবং অন্যান্য সাধারণ মু’মিনদের রূহ তাদের কবর প্রাঙ্গনে থাকে।[4]
৭. শেখ আব্দুর রহমান আল-জাযা-ইরী বলেন: কবরে জিজ্ঞাসাবাদের পর মানুষের রূহসমূহ ইল্লিয়্যীন অথবা সিজ্জিনে থাকে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা এ-ভাবেই বন্দী অবস্থায় থাকে। প্রত্যেকের শরীরের সাথে তার রূহের সম্পর্ক ঠিক সেভাবে হয়ে থাকে যেভাবে মোবাইল ফোনের সংযোগ টাওয়ারের সাথে থাকে। এ সংযোগের মাধ্যমেই একজন কবরবাসী তাকে যিয়ারতকারী ও সালামকারীদের সম্পর্কে অবগত হয়ে থাকে।[5]
৮. ইমাম ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাঃ বলেন: রূহ দু’প্রকার:এক, শাস্তি ভোগকারী রূহ। দুই, আরাম ভোগকারী রূহ। যারা শাস্তির মধ্যে রয়েছে তারা কেউ কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারে না। আর যারা শান্তিতে রয়েছে তারা পরস্পরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে।[6]
উপর্যুক্ত মতামতসমূহের প্রতি লক্ষ্য করলে এ-কথা প্রমাণিত হয় যে, মৃত্যুর পর রূহ কোথায় যায়, এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত করে কিছু বলা কঠিন। এ ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট দলীল না থাকার কারণেই মনীষীগণ এ ব্যাপারে উপর্যুক্ত মতামত ব্যক্ত করেছেন। রূহ কবরে থাকে এ-কথা যদি নিশ্চিত করে বলা না যায়, তা হলে রূহকে সম্বোধন করে কিছু বললে তা শ্রবণ করতে পারে, এ-কথা নিশ্চিত করে বলার কোনো উপায় নেই।
মৃত মানুষের শ্রবণ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য :
কুরআন ও হাদীসের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টিদান করলে দেখা যায় যে, জীবিত মানুষ যেভাবে শ্রবণ করতে পারে মৃত মানুষ সেভাবে শ্রবণ করতে পারেনা। এ বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য আমরা নিম্নে বর্ণিত আয়াতসমূহের প্রতি লক্ষ্য করতে পারি। যারা জীবিত থাকা সত্ত্বেও জ্ঞান-বুদ্ধি খাটিয়ে সত্যকে গ্রহণ না করে মৃত মানুষের ন্যায় আচরণ করে মহান আল্লাহ তাদের ব্যাপারে বলেন:
﴿ فَإِنَّكَ لَا تُسۡمِعُ ٱلۡمَوۡتَىٰ ﴾ [الروم: ٥٢]
‘‘তুমি মৃতদের শ্রবণ করাতে পারবে না’’।[7] অপর আয়াতে বলেছেন:
﴿ وَمَا يَسۡتَوِي ٱلۡأَحۡيَآءُ وَلَا ٱلۡأَمۡوَٰتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُسۡمِعُ مَن يَشَآءُۖ وَمَآ أَنتَ بِمُسۡمِعٖ مَّن فِي ٱلۡقُبُورِ ٢٢ ﴾ [فاطر: ٢٢]
‘‘শ্রবণ করার ক্ষেত্রে জীবিত আর মৃতরা এক নয়, নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান, তুমি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে পারবে না’’[8] অত্র আয়াত দু’টিতে আল্লাহ তা‘আলা জীবিত মুশরিক ও কাফিরদের কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা না শুনার অবস্থাকে কবরবাসীদের শ্রবণ না করার অবস্থার সাথে তুলনা করেছেন। কবরবাসীরা শ্রবণ করতে পারে কি না, এ-কথা বলা এ আয়াত দু’টির মুখ্য উদ্দেশ্য না হয়ে থাকলেও যেহেতু আয়াত দু’টিতে মুশরিকদের শ্রবণ না করার অবস্থাকে মৃত মানুষ বা কবরস্থ মানুষের না শুনার সাথে তুলনা করা হয়েছে, এতে প্রমাণিত হয় যে, আসলে মৃত মানুষেরা নিজ থেকে কিছু শুনতে পারে না। কেননা, একটি বস্তুকে অপর বস্তুর বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা কেবল তখনই করা হয় যখন সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্যে উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য থাকে বা অপর বস্তুর মধ্যে সে বৈশিষ্ট্যটি অধিকমাত্রায় বিদ্যমান থাকে। এতে বুঝা যায় যে, মৃতরা নিজ থেকে আদৌ কিছু শুনতে পারে না বলেই মুশরিকদের না শুনাকে মৃতদের না শুনার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
উপর্যুক্ত আয়াত দু’টির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে প্রখ্যাত হাদীসবিদ আল্লামা আলবানী (মৃত ১৯৯৯ খ্রি.)বলেন:‘‘উক্ত আয়াত দু’টিতে মুশরিকদের দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা না শুনার অবস্থাকে মৃত মানুষের শ্রবণ না করার অবস্থার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, মৃত লোকেরা আসলে নিজ থেকে কিছুই শ্রবণ করতে পারে না। একজন মানুষের সাহসিকতার প্রশংসা করে যদি তাকে সিংহের সাথে তুলনা করা হয়, তা হলে এতে যেমন সিংহের দুর্দান্ত সাহসিকতা প্রমাণিত হয়, ঠিক তেমনি উক্ত আয়াত দু’টিতে কাফিরদের শ্রবণ না করাকে মৃত মানুষের শ্রবণ না করার সাথে তুলনা করাতে মৃতদের শ্রবণ না করার কথাই প্রমাণিত হয়।
শুধু তা-ই নয়, আরবী ভাষায় দক্ষ প্রতিটি মানুষই এ তুলনার দ্বারা এ-কথাই বুঝবে যে, মৃতরা শ্রবণ করার ক্ষেত্রে জীবিতদের চেয়ে অধিক অক্ষম। আর সে কারণেই জীবিতদের শ্রবণ না করাকে মৃতদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, মৃতরা আদৌ কিছুই শ্রবণ করতে সক্ষম নয়’’।[9]
মৃতরা নিজ থেকে জীবিতদের কর্মের ভাল-মন্দ অবগত হতে পারলে সর্বপ্রথম তা নবী ও রাসূলগণেরই অবগত হওয়ার কথা। তাদের পরবর্তী উম্মতগণ শরী‘আত অনুসারে চলেছে কি না, বা তাঁদেরকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করে কেউ শির্ক করেছে কি না, তা তাঁদের খুব ভাল করেই জানা থাকার কথা। কিন্তু কুরআনের বক্তব্যানুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, তাঁরা মৃত্যুর পর এ-সব বিষয়ে নিজ থেকে কিছুই অবগত হতে পারেন না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ۞يَوۡمَ يَجۡمَعُ ٱللَّهُ ٱلرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَآ أُجِبۡتُمۡۖ قَالُواْ لَا عِلۡمَ لَنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّٰمُ ٱلۡغُيُوبِ ١٠٩ ﴾ [المائدة: ١٠٩]
‘‘যেদিন আল্লাহ সকল রাসূলদেরকে একত্রিত করবেন তখন তিনি তাঁদেরকে বলবেন:তোমরা (তোমাদের পরবর্তী উম্মতদের পক্ষ থেকে) কী উত্তর পেয়েছিলে? তাঁরা বলবেন: (এ ব্যাপারে) আমাদের কোনই জ্ঞান নেই, আপনিই অদৃশ্য বিষয়ে মহা জ্ঞানী’’।[10] রাসূলগণ মরে যাওয়ার পর মোট দু’টি মাধ্যমে তাঁদের জ্ঞান আহরণের সম্ভাবনা থাকতে পারে:
এক.মৃত্যুর পরেও হয়তো তাঁরা জীবিত থাকার ন্যায় নানাভাবে জ্ঞান আহরণ করে থাকবেন এবং সে অনুযায়ী কারা তাঁদের অনুসরণ করলো আর কারা করলো না, তা তাঁরা জেনে থাকতে পারেন।
দুই.নতুবা মৃত্যুর পর আল্লাহ তা‘আলা নিজ থেকে তাদেরকে শ্রবণ করার ও জানার এমন কোনো অতিরিক্ত যোগ্যতা দিয়ে থাকবেন, যার মাধ্যমে তাঁরা মরে গিয়ে থাকলেও দুনিয়ায় কে কী করলো, তা শুনে ও জেনে থাকবেন।কিন্তু এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলগণ মরে যাওয়ার পর জ্ঞান আহরণের উপর্যুক্ত দু সম্ভাবনার কোনো সম্ভাবনা দিয়েই তাঁরা কোনো জ্ঞান আহরণ করতে পারেন না। জীবিত মানুষেরা কী করে, তাঁরা এর কোনো কিছুই অবগত হতে পারেন না। যদি পারতেন, তা হলে তাঁরা তাঁদের পরবর্তী উম্মতদের অনুসরণের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারতেন।
তাঁদেরকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করে যারা শির্ক করেছে, আখেরাতে তাঁরা আল্লাহর প্রশ্নের জবাবে সে-সব লোকদের কর্মের অবস্থা বর্ণনা করতেন। কিন্তু যেহেতু তাঁরা এ-সব কিছুই অবগত হতে পারেন না, সে-জন্যে তাঁরা সেদিন বলবেন, প্রভু ! এ-সবতো অদৃশ্যের ব্যাপার। কাজেই তা কেবল আপনারই জানার কথা। আমাদের পক্ষে তা জানার বা শুনার কোনই উপায় নেই। রাসূলগণ যদি মৃত্যুর পর তাঁদের উম্মতদের কর্ম সম্পর্কে কিছুই শুনতে ও জানতে না পারেন, তা হলে অবশিষ্ট ওলি ও সাধারণ মানুষেরা যে কিছুই শুনতে ও জানতে পারবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
>[2]. আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান: ১৪৪।
[3].বুখারী, প্রাগুক্ত; (কিতাবু ফাযাইলিস সাহাবাহ, বাব নং-৫, হাদীস নং ৩৪৬৭), ৩/১৩৪১;বায়হাক্বী, আহমদ ইবনে হুসাইন, আস্সুনানুল কুবরা; (মক্কা: মাকতাবাতু দারুল বায, সম্পাদনা: মুহাম্মদ আব্দুল কাদির আত্বা, সংস্করণ বিহীন, ১৯৯৪ খ্রি.), ৮/১৪২;ইবনে কাছীর, তাফসীরুল রুরআনিল আজীম; ১/৪১০।
[4].আল্লামা ইবনু আবিল ইয্য আল-হানাফী, প্রাগুক্ত; পৃ. ৪৫৩, ৪৫৪।
[5].শেখ আব্দুর রহমান আল-জাযাইরী, ‘আক্বীদাতুল মু’মিন; পৃ.৪১৮।
[6]. ইবনু কাইয়্যিম, কিতাবুর রূহ; পৃ.২৬।
[7]. আল-কুরআন, সূরা রূম:৫২।
[8]. আল-কুরআন, সূরা ফাতির:২২।
[9]. নু’মান ইবন মুহমূদ, প্রাগুক্ত;পৃ. ২৭-২৮।
[10]. আল-কুরআন, সূরা মা-ইদাহ :১০৯।