লগইন করুন
এখন শুধু প্রয়োজন হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার নিকট বান্দার অনুতাপ ও অনুনয়-বিনয় প্রকাশ করার। আল্লাহ তা‘আলার নিকট বান্দা সার্বক্ষণিকই তার অনুতাপ প্রকাশ করতে পারে। তবে এ জন্য সম্ভাব্য কিছু সময় ও মুহূর্তও রয়েছে। সম্ভাব্য সময় যেমন- সেহরীর সময়, জুমু‘আর দিন, রমাযান মাস ও ‘আরাফার দিন। আর সম্ভাব্য মুহূর্ত যেমন- নামাযে সেজদা রত অবস্থায়, আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়, নামাযের শেষে একাকী বসে ও বৃষ্টি বর্ষণের সময়ে।[1] বান্দা যদি দো‘আ কবুলের এ সব সম্ভাব্য সময় ও মুহূর্ত অন্বেষণ করে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার কৃত অপরাধের জন্য অনুতাপ করে এবং পুনরায় অপরাধ না করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা করে, তা হলে তিনি তাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন।
তিনি যদি তাঁর অবাধ্য অহংকারী শয়তানের দো‘আ কবুল করে তার আহবানে সাড়া দিয়ে তাকে অপকর্ম করার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত আয়ু দিতে পারেন,[2] তা হলে সাধারণ অপরাধীরা তাঁর কাছে বিনয়ের সাথে সরাসরি কিছু চাইলে তিনি তাদের দো‘আ কবুল না করার কোনো কারণ থাকতে পারেনা। প্রকৃত কথা হচ্ছে- যারা তাঁর আনুগত্যকে স্থায়ীভাবে না হোক অন্তত সাময়িকভাবে হলেও স্বীকার করে নিয়ে তাঁকে একনিষ্ঠভাবে বিনয়ের সাথে আহ্বান করে, তিনি তাদের আহবানেও সাড়া দেন। এ ক্ষেত্রে আহ্বানকারী কোনো মুশরিক না মুনাফিক না ফাসিক না মু’মিন, এ সবের প্রতি তিনি আদৌ কোনো লক্ষ্য করেন না। আর এ কারণেই মুশরিকরা যখন সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়ে তাঁকে একনিষ্ঠভাবে আহ্বান করতো তখন তিনি তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করে দিতেন।
যেমন আল্লাহ বলেন :
﴿ فَإِذَا رَكِبُواْ فِي ٱلۡفُلۡكِ دَعَوُاْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ فَلَمَّا نَجَّىٰهُمۡ إِلَى ٱلۡبَرِّ إِذَا هُمۡ يُشۡرِكُونَ ٦٥ ﴾ [العنكبوت: ٦٥]
‘‘যখন মুশরিকরা (সমুদ্রে) নৌকা বা জাহাজে আরোহণ করে (ঝড়ের কবলে পড়ে, তখন তারা) তাদের সকল আনুগত্যকে আল্লাহর জন্য একনিষ্ট করে তাঁকে আহ্বান করে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলে এনে উদ্ধার করে দিতেন, তখনই তারা (তাঁর সাথে) শরীক করতে থাকে।’’[3] মুশরিকরা যদি তাদের শির্কী ধ্যান-ধারণা পরিহার না করেও কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই একনিষ্ঠভাবে সরাসরি আল্লাহকে আহ্বান করার ফলে তিনি তাদেরকে ঝড়ের কবল থেকে উদ্ধার করতে পারেন, তা হলে আমাদের ডাক না শুনার তো কোনো কারণ থাকতে পারে না। অতএব যারা মৃত নবী ও ওলিদেরকে আল্লাহ ও সাধারণ মানুষদের মাঝে মাধ্যম হিসেবে দাঁড় করেন এবং তাঁদের নামের মাধ্যমে দো‘আ করলে আল্লাহ সে দো‘আ দ্রুত শ্রবণ করেন বলে মনে করেন, তারা আসলে আল্লার প্রতি মিথ্যারোপ করেন। তাদের জানা আবশ্যক যে, কোনো ওলি তো দূরের কথা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও যদি কারো ব্যাপারে আল্লাহর কাছে কোনো সুপারিশ করেন, তা হলে তাঁর সে সুপারিশ গ্রহণ করা আল্লাহ তা‘আলার উপর জরুরী হয়ে যায় না। যেমন তিনি মুনাফিকদের সরদার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর জানাযার নামায পড়ে তার মাগফিরাতের জন্য সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করাতো দূরের কথা, তিনি তাঁকে এ ধরনের কর্মের পুনরাবৃত্তি করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছিলেন :
﴿إِن تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِينَ مَرَّةٗ فَلَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَهُمۡۚ ﴾ [التوبة: ٨٠]
‘‘যদি তুমি তাদের (মুনাফিকদের) জন্য সত্তর বারও ক্ষমা ভিক্ষা কর, তবুও আল্লাহ কস্মিনকালেও তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।’’[4]
অপর আয়াতে এদের জানাযা পড়তে নিষেধ করে দিয়ে বলেন :
﴿ وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنۡهُم مَّاتَ أَبَدٗا وَلَا تَقُمۡ عَلَىٰ قَبۡرِهِۦٓ﴾ [التوبة: ٨٤]
‘‘এদের কেউ মরলে তুমি তাদের জানাযার নামায পড়বে না, তার কবরের পাশেও দাঁড়াবে না।’’[5]
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, কেউ কিছু চাইলে তা নবী বা ওলিদের মধ্যমে আল্লাহর নিকট চেয়েছে কি না, মূলত সেটা দেখার কোনো বিষয় নয়। বরং আসল দেখার বিষয় হচ্ছে যার সমস্যা তার মানসিক অবস্থা কী। দো‘আকারীর মানসিক অবস্থা ঠিক হলে এবং এখলাসের সাথে সে নিজেই সরাসরি আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি শুধু মু’মিন কেন মুশরিকেরও দো‘আ শুনেন এবং তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। এটাই হচ্ছে আল্লাহর সুন্নাত বা নিয়ম।উক্ত আলোচনার দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হলো যে, দো‘আ করার সময় কোনো সৃষ্টির নামের বা তাঁর মর্যাদা ও হুরমতের ওসীলা গ্রহণের জন্য আল্লাহ আমাদেরকে কোনো শিক্ষা দান করেন নি বা তাঁর সাধারণ বান্দাদের সমস্যাদি তাঁর নিকট উপস্থাপনের জন্য তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যকার কাউকে তাঁর ও তাঁর বান্দাদের মধ্যে ওসীলা হওয়ার জন্যেও মনোনীত করেন নি। বরং এটি কোনো কোন পীরদের মনগড়া বক্তব্য বৈ আর কিছুই নয়। এ বিষয়টি অবগতির পর এবার আমাদেরকে যে বিষয়টি জানতে হবে তা হলো : আল্লাহ তা‘আলার নিকট কিছু চাইতে হলে তা কীভাবে চাইতে হবে?
>[2]. শয়তান অপমানিত হয়ে বিতাড়িত হওয়ার প্রাক্কালে এই ব’লে দু‘আ করেছিল :
﴿ قَالَ أَنظِرۡنِيٓ إِلَىٰ يَوۡمِ يُبۡعَثُونَ ١٤ قَالَ إِنَّكَ مِنَ ٱلۡمُنظَرِينَ ١٥ ﴾ [الاعراف: ١٤، ١٥]
‘‘প্রভু! আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দান করুন, আল্লাহ বলেন : তোমাকে অবকাশ দান করা হলো।” আল-কুরআন, সূরা আ‘রাফ : ১৪ ও ১৫।
[3]. আল-কুরআন, সূরা ‘আনকাবূত : ৬৫।
[4]. আল-কুরআন, সূরা তাওবাহ : ৮০।
[5]. আল-কুরআন, সূরা তাওবাহ : ৮৪।