লগইন করুন
হাদীস এবং ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননের সময় ক্ষুধা নিবারণের জন্য পেটে পাথর বেধেছিলেন।[1] প্রয়োজন শেষে এ পাথর দু’টিকে তিনি কোথায় ফেলে দিয়েছিলেন, তাঁর কোনো সাহাবী তা সংরক্ষণ করেছিলেন কি না, এ সবের কোনো বর্ণনা কোনো হাদীস অথবা ইতিহাস কিংবা কোনো সীরাত গ্রন্থেও পাওয়া যায় না।
অনুরূপভাবে আবু জেহেল একটি বড় পাথর দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথায় আঘাত করে তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল বলেও ইতিহাসের কিতাবাদিতে প্রমাণ পাওয়া যায়।[2] তবে আবু জেহেলের হাতে এ পাথর তখন কালিমা পাঠ করেছিল কি না এবং আবু জেহেল তা ফেলে দেয়ার পর কেউ তা সংরক্ষণ করেছিল কি না, এ সবেরও কোনো বর্ণনা কোনো কিতাবে পাওয়া যায় না। কেউ তা সংরক্ষণ করে থাকলেও যে পাথরটি আবু জেহেল একটি ঘৃণিত উদ্দেশ্যে তার হাতে নিয়েছিল, সে পাথর কোনো অবস্থাতেই কোনো মুবারক পাথর হতে পারে না। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হক্কানী আঞ্জুমান নামে আজানগাছী পীরের একটি দরবার রয়েছে। সে দরবারে রয়েছে দু’টি পাথর। কুষ্টিয়া জেলার রাজারহাট বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে এ দরবারের অনুসারীদের একটি মসজিদ রয়েছে। সে মসজিদের দেয়ালে উক্ত দরবারের একটি প্রচারপত্র ঝুলানো রয়েছে। তাতে এ পাথর দু’টির পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে :
‘এ পাথর দু’টির একটি হচ্ছে আবু জেহেলের হাতে কালিমা পাঠকারী পাথর। আর অপরটি হচ্ছে সেই পাথর যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার তাড়নায় তাঁর পেট মোবারকে বেঁধেছিলেন। এ পাথর দু’টি পীর পরম্পরায় মক্কা শরীফের দ্বীন মুহাম্মদ নামের এক মুআল্লিমের কাছে সংরক্ষিত ছিল। তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে তা আজানগাছী পীরকে দান করেছিলেন।’ আমাদের দেশেও এ পীরের ভক্তবৃন্দ রয়েছেন।
তারা ঢাকাস্থ হাইকোর্টের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত শাহবাগ শাহী মসজিদে এবং বায়তুল মুকাররম মসজিদে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবারে একত্রিত হন বলে এ প্রচার পত্রে লিখিত রয়েছে। এ পাথর দু’টি সংরক্ষিত হওয়ার ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও আজানগাছী পীর সাহেব এদু’টি পাথরকে সে মু‘আল্লিমের হাত থেকে মহা মূল্যবান পাথর হিসেবে গ্রহণ করেন এবং কলিকাতার হক্কানী আঞ্জুমানে রেখে এর জন্য যিয়ারতের একটি বেদ‘আত জারী করেন। তিনি এ দু’টি পাথরকে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি, বিপদাপদ দূরীকরণ ও রূহানী শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মহা উপকারী বলে ঘোষণা দেন।
বাজার থেকে লবঙ্গ ক্রয় করে এ পাথর দু’টির সাথে মিলিয়ে রাখলে এ লবঙ্গের মধ্যে পাথর দু’টি অস্বাভাবিক প্রভাব বিস্তার করে বলে তিনি ও তার ভক্তরা বিশ্বাস করতেন এবং এখনও এ বিশ্বাস করা হয়। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে আল্লাহর নাম নিয়ে এ লবঙ্গে ঘ্রাণ নিলে উপকার পাওয়া যায় বলেও তারা বিশ্বাস করেন। এভাবে তিনি ও তার ভক্তরা এ পাথর দু’টিকে আরবের মুশরিকদের ‘যাতে আনওয়াতের’ সমতুল্য করে নিয়েছেন। লবঙ্গে ঘ্রাণ নেওয়ার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে থাকলেও পাথর দু’টির ব্যাপারে তা অলৌকিকভাবে উপকারী হওয়া এবং লবঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব বিস্তার করার ধারণা পোষণ করার ফলে তারা শির্কে আকবার বা শির্কে আসগারে পতিত হচ্ছেন; কেননা, কোনো বস্তুর ব্যাপারে এ ধরনের উপকারী প্রভাব বিস্তারকারী হওয়ার ধারণা করা আল্লাহর রুবূবিয়্যাতে শির্ক করার শামিল।
>[2]. সফিয়্যুর রহমান আল-মুবারকপুরী, প্রাগুক্ত; পৃ. ৯৯।